বছর ঘুরলেও ফল পায় না রাবি শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার: পরীক্ষার তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশের বিধানথাকলেও বিভিন্ন বিভাগে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছেরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।কিছু শিক্ষকের ‘উদাসীনতাকে’ এজন্য দায়ী করা হলেও ব্যবস্থা নেয়ার বিধাননা থাকায় তাও করা যাচ্ছে না- এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগেরসভাপতিদের কাছ থেকে।বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী, পাঠদানের জন্য আট মাস নির্ধারণ এবং পরীক্ষা শুরুর তিন মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়েরজেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ, ফোকলোর, মনোবিজ্ঞান, চারুকলা, জনসংখ্যা বিজ্ঞান, অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগেরবিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার ফল দশ মাস থেকে একবছরেও প্রকাশ হয়নি।এছাড়ানাট্যকলা ও সংগীত বিভাগ, ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, প্রাণরসায়ন ও অণুজীববিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ ও আরবি বিভাগের ফলাফল ছয় থেকে আট মাসেও প্রকাশকরা হয়নি।২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ডবায়োকেটনোলজি শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা গত বছরের ৩০ জুন শুরু হয়।এক বছর পার হলেও এখনো ফল প্রকাশ করা হয়নি।ওই বর্ষের শিক্ষার্থীরাজানান, তৃতীয় বর্ষের ফল না পেলেও সামনে তাদের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিতেহবে। ফল না পাওয়ায় আবাসিক হলগুলোতে মেধাক্রম অনুযায়ী আসন ও বেশ কিছু শিক্ষাবৃত্তিও হাতছাড়া হয়েছে।এই বিভাগেরই ২০০৮-০৯  শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার ফলাফল আট মাস এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ফলাফল ১০ মাস ধরে ঝুলে আছে।এপ্রসঙ্গে বিভাগের সভাপতি অনিল চন্দ্র দেব বলেন, আসলে কিছু শিক্ষক উত্তরপত্র দেখে জমা দেয় না বলে ফলাফল প্রকাশেবিলম্ব হচ্ছে।এজন্য দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না- জানতে চাইলেউত্তর এড়িয়ে অনিল চন্দ্র বলেন, এই ব্যাপারে একাধিকবার একাডেমিক কমিটিরমিটিং হয়েছে। শিক্ষকদের দ্রুত ফলাফল প্রকাশের তাগিদ দেয়া হয়েছে।ফলাফলের দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালে আটকে গেছেন চারুকলা ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও।চারুকলাবিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা গত বছর অগাস্টে শেষহওয়ার ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও ফল দেয়া হয়নি বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার ফলাফল ১৩ মাসেও হয়নি।চারুকলা বিভাগেরশিক্ষার্থী সুব্রত কুমার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে সেশনজটেরখপ্পরে পড়েছি আমরা। চার বছরের স্নাতক ছয় বছরেও হয় না। তিন মাসের ফল দশমাসেও আসে না।চারুকলা বিভাগের সভাপতি আব্দুল মতিন তালুকদারবলেন, চারুকলা বিভাগে শ্রেণিকক্ষের সঙ্কটথাকায় শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে ক্লাস নেয়া যায় না। তাছাড়া এই বিভাগে অনেকব্যবহারিক কাজ থাকায় তা সম্পূর্ণ করতে দেরি হওয়ায় পরীক্ষার ফল দিতে দেরিহচ্ছে।
অপরদিকে ফলাফলের দীর্ঘসূত্রতায় মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্রায় প্রত্যেক বর্ষেই দুটি করে ব্যাচ রয়েছে।এই বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের ফলাফল ১১ মাসেও দেয়া হয়নি। ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল ১৪ মাসেও হয়নি।মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এসময় চতুর্থবর্ষের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তৃতীয় বর্ষের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেনতারা।ফোকলোর বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গত বছরের ১৮ জুন থেকে শুরু হয়।প্রায়দুমাস ধরে ১০টি কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দশ মাসপেরিয়ে গেলেও এখনো ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া সাত মাস আগে অনুষ্ঠিত২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষ মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফলও এখনো প্রকাশ করা হয়নি।ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত ফলাফল দশ মাসেও হয়নি। এছাড়াওনাট্যকলা, নৃবিজ্ঞান, আরবি, প্রাণরসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যাসহবেশ কিছু বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ফলাফল আটকে আছে, যেগুলোর পরীক্ষা ৬ থেকে ৮মাস আগেই শেষ হয়েছে।পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক  আনোয়ার হোসেন বলেন, “নিয়মঅনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশনজটথাকতো না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণেরঅনুরোধ জানিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিনবলেন, ফলাফল নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশের জন্যইতোমধ্যে অনুষদ প্রধানদের কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে।একইসঙ্গে আগামীসিন্ডিকেটে এই বিষয়ে একটি আইন পাস হতে পারে, যাতে শিক্ষকরা সময়মত উত্তরপত্রমূল্যায়ন না করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধানথাকছে।