বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

স্টাফ রিপোরর্টার: আজ ১০ জানুয়ারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। জীবন-মৃত্যুর কঠিন চ্যালেঞ্জের ভয়ঙ্কর অধ্যায় পার হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান এ নেতার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতা পায় মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ দিনটি অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার আড়ালে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অপারেশন সার্চলাইট নামের এ অভিযানের শুরুতেই পাক হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে বন্দী করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু।

গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী করা হলেও তার অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর নামেই চলে মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালি যখন প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে তার জন্য কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিলো। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা, মুক্তির প্রশ্নে ফাঁসির আসামি হয়েও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল, আপসহীন। স্বাধীনতাকামী জনতা দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে দেশকে স্বাধীন করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতেও বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও বাঙালি জাতির মনে ছিলো না স্বস্তি, বিজয়ের আনন্দ। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী জাতির পিতার ভাগ্যে কী আছে এ নিয়ে এ ভূখণ্ডের প্রতিটি মানুষ ছিলো বিচলিত, আতঙ্কিত। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরে পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দী দশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

বাঙালি জাতির মহান এক বিজয়ের ফলেই বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ফিরে আসেন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডন-দিল্লী হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হানাদারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কৃতজ্ঞ জাতির সাথে আমিও স্মরণীয় এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্মরণ করি। তিনি বলেন, ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু সেদিন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেছিলেন যে, তার সারাজীবনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এই স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেয়া হবে না। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা যতদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত থাকবো, ততদিন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট থাকবে। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এদিনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। তিনি বলেন, অনেক সংগ্রাম আর ত্যাগ তিতীক্ষার মাধ্যমে দেশে আজ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে। আমরা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছি। কোনো অপশক্তি যাতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এ ধারাকে ব্যাহত করতে না পারে, জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং দুপুর ২টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এ জনসভায় বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালনে নিয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচি।