বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার: ‘যতোদিন রবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-গৌরী বহমান, ততোদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’ আজ ১৭ মার্চ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন। ১৯২০ সালের এ দিনে তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এ দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

আজ সরকারি ছুটির দিন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পরিবারের চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। শৈশবে খোকা নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে। গত বছর ইউনেস্কো ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে তার ভাষণ সারা বিশ্বের অন্যতম ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধুর

যখন জন্ম হয় তখন ছিলো ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান নাম মওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এ কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিলো। এ কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে অর্থাৎ দেশবিভাগের বছর এ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ। পাকিস্ত্মান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। বাঙালির এই নেতা ১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেন ফজিলাতুন্নেসাকে। এ দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। আর পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। তিনজন পুত্রই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বিপথগামী সেনাদের হাতে নিহত হন।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু কালের পরিক্রমায় কখনো ভাষার জন্য, কখনো স্বাধিকারের জন্য সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেন। এসবের আড়ালে গড়ে উঠে স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৯৫৪ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ‘৫৫ সালে দলে মুসলিম নাম বাদ দেয়ার পর ‘৬৬ সালে হন সভাপতি। এরপর ‘৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভু্যত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

এ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কারাগারে আটক রেখে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তার প্রথম বিচার শুরু করে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ‘৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ‘৭২-এর ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সেই সুযোগ বেশিদিন পাননি তিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি তথা একটি শোষণমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

কর্মসূচি: আজ সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে আজ শনিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতির প্রটোকল অফিসার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সরোয়ার ও প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ কাজী নিশাত রসুল স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক ফ্যাক্স বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি তেজগাঁও হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারে করে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে তিনি টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন।

সকাল ১০টায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করবেন। পরে তিনি ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেবেন। ১১টায় তিনি টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। একই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেবেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে শেখ রাসেল স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্তকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা শিশু গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, সেলাই মেশিন বিতরণ, উঠব জেগে, ছুটব বেগে শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান, বইমেলা উদ্বোধন ও শিশুদের আঁকা আমার ভাবনায় ৭ মার্চ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৩টায় হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করবেন।