ফের লুটপাটে মেতেছে লুটেরাচক্র : আগ্রহ হারাচ্ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো

দর্শনা রেলইয়ার্ডে পণ্যবাহ ওয়াগন থেকে লুটপাট ঠেকানো যাচ্ছে না কোনভাবেই

দর্শনা অফিস: দর্শনা রেলইয়ার্ডে ফের অপতৎপরতা বেড়েছে লুটেরাচক্রের। লুটপাটে মেতে উঠেছে লুটেরাচক্রের সদস্যরা। ইয়ার্ডে রক্ষিত পণ্যভর্তি ওয়াগন থেকে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে লুটপাটের ঘটনা। আধিপত্য বিস্তারে লুটেরাদের মধ্যেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটছে অহরহ। নিরাপত্তাকর্তাকে ম্যানেজ করেই লুটপাট হচ্ছে বলে উঠেছে অভিযোগ। এ রুটে আমদানি করতে আগ্রহ হারাচ্ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। কয়েক বছর আগেও ভারত থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন মালামাল ভর্তি ওয়াগন দর্শনা রেলইয়ার্ডে রাখা হতো প্রচুর পরিমাণে। সে সময় নিরাপত্তা বিভাগের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ সহযোগিতায় হরিলুটের ঘটনা ঘটতো ইয়ার্ড এলাকায়। নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে লুটেরাচক্রের বিক্রির মাধ্যমেই লুটপাট কারবার চলতো। ইয়ার্ডে মালবাহী ওয়াগন প্রবেশের সাথে সাথে নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা, সদস্য ও স্থানীয় লুটেরাদের মধ্যে উল্লাস লক্ষ্য করা যেতো। এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুনতে হতো বড় অঙ্কের লোকসান। লোকসান ঠেকাতেই দেশের বিভিন্ন জেলার আমদানিকারকরা এ রুটে আমদানি কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে দর্শনা ইয়ার্ডে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রমে পরিণত হয়। কয়েক মাস আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতেই ফের শুরু হয় আমদানি কার্যক্রম। রেলইয়ার্ডকে লুটেরা মুক্ত করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে নানামুখি কৌশল। ইয়ার্ডে মোতায়েন করা হয় বিশেষ বাহিনী। গুটি কয়েকদিন স্থানীয় ও বিশেষ বাহিনী কারিশমা দেখালেও কয়েকদিনের মাথায় নুয়ে পড়ে লুটেরাদের কাছে। লুটেরা ও নিরাপত্তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের কারণেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সকল কৌশল ভেস্তে যায়। ফের শুরু হয় হরিলুট। এরই মধ্যে বেশ কিছুদিন আগে ইয়ার্ডে হরিলুট ঠেকাতে দর্শনার সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান উদ্যোগ নেন। তার উদ্যোগে লুটপাট কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আবারো হরদম চলছে লুটপাট। সম্প্রতি আবারো আগের অবস্থায় পরিণত হয়েছে ইয়ার্ড এলাকা। অভিযোগ উঠেছে, দর্শনা রেলওয়ে নিরাপত্তা ইনচার্জসহ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিকে ম্যানেজ করেছে লুটেরাচক্রের হোতারা। ফলে চুক্তিমাফিক চলছে লুটপাট। অভিযুক্ত চিহ্নিত লুটেরাচক্রের রয়েছে ৪/৫টি গ্রুপ। এ চক্রই নির্বিঘ্নে ইয়ার্ডে লুটপাট তাণ্ডব চালাচ্ছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত গম, ভুট্টা, সোয়াবিন ভূষিসহ লুটপাটকৃত বিভিন্ন মালামাল লুটেরাচক্র বিক্রি করে থাকে এলাকার বেশ কয়েকজন ভূষিমাল ব্যবসায়ীর কাছে। লুটেরাদের কাছ থেকে মালামাল কিনে অনেকেই রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে।

সচেতনমহল অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, এ শহরের ঐতিহ্য তথা দর্শনাবাসীর সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ের জন্য রেলইয়ার্ডের লুটপাট রুখতে হবে। গুটিকয়েক চিহ্নিত লুটেরার কারণে একদিকে যেমন দর্শনার সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, অন্যদিকে আমদানি কমলে সরকার হারাচ্ছে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব। এছাড়া লুটেরাদের মোকাবেলা না করা হলে হয়তো এক সময় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এ রুটে আমদানি একেবারেই বন্ধ করে দিতে পারে। তাই নিজেদের স্বার্থেই লুটেরাদের মোকাবেলা করতে সকলতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।