ফিরে দেখা ২০১৩ : এক বছরে ২৪ খুন : ১৩টি হত্যাকাণ্ড পারিবারিক

স্টাফ রিপোর্টার: পূর্বের বছরের তুলনায় বিদায়ী বছরে চুয়াডাঙ্গায় খুনের সংখ্যা ছিলো কিছুটা কম। গত এক বছরে চুয়াডাঙ্গা জেলায় হত্যার শিকার হয়েছে ২৪ জন। এর মধ্যে দুজনের প্রাণ ঝরে গণপিটুনিতে। স্বামীর নির্যাতনে তথা পরিবারিক হত্যাকাণ্ড ছিলো ৫টি।

২২ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ির আশকার আলী গলিত লাশ উদ্ধার করা হয় জেলা সদরের ভাণ্ডারদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেফটি ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালমর্গে পাঠায়। ৩ ফেব্রুয়ারি আলমডাঙ্গার পল্লি রায়সার রেজাউল গাইন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ি খাসকররায় গিয়ে লাশ হন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী কাজলীর ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে যাওয়ার পর রাতেই গাছে ঝুলানো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার কাথুলী-বলেশ্বরপুর সড়কের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় আলমডাঙ্গার তিয়ারবিলার আমিরুল ও হাকিমপুরের তরিকুলের লাশ উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। ডাকাত সন্দেহে কয়েকজনকে ধাওয়া করে ধরা পড়ার পর গণপিটুনিতে ওই দুজন মারা যায় বলে পুলিশ জানায়। ২০ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার হাসান আলীকে হাত পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে জুতোর ফিতে ও বেল্ট দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়ি-কুলচারার মধ্যবর্তী মাঠের নবগঙ্গা খালের ধারের রাস্তায় হত্যা করা হয়। ১ মার্চ দামুড়হুদার উজিরপুরে ওয়াজ মাহফিল চলাকালে ভুজালির উপর্যুপরি আঘাতে কলেজছাত্র ইব্রাহিম খুন হয়। উজিরপুর মোল্লাপাড়ার সাইদার রহমানের ছেলে ইব্রাহিম গ্রামেই কাসেমুল উলুম কওমিয়া মাদরাসায় ওয়াজ শুনতে যায়। সেখানে গিয়ে এক ছাত্র খুন হয়। তাকে ও তার সাথে থাকা একই গ্রামের একইপাড়ার শহিদুল ইসলামের ছেলে স্কুলছাত্র সোহেলকেও উপর্যুপরি ভুজালির আঘাতে গুরুতর জখম করা হয়। ৮ মার্চ ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডুর নারায়ণকান্দি গ্রামের কৃষক কলম আলীকে সন্ত্রাসীচক্র নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করে। ধাপগাড়ি মাঠের গমক্ষেতে তার রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে মাঠের কৃষকেরা হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশে খবর দেয়। দু জেলার সীমান্তে এনে খুন করে এ লাশ ফেলে রাখায় রশি টানাটানির মাঝে পড়ে আলমডাঙ্গা ও হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশ। অবশেষে হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশ উদ্ধার করে এ লাশ। ১৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগের কনক আহমদ টুটুলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও বাটামপেটা করে হত্যা করা হয়। চুয়াডাঙ্গা মহিলা কলেজমোড়ে এ ঘটনা ঘটে। টুটুল চুয়াডাঙ্গা পোস্টঅফিস পাড়ার আমজাদ হোসেনের ছেলে এবং টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলো। ২৫ মার্চ আলমডাঙ্গা ডাউকির বিনোদপুর গ্রামের দরিদ্র ঘরের স্বামী পরিত্যক্তা দিনমজুর মেয়ে আর্জিনা খাতুন শিল্পীকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। গ্রাম সংলগ্ন জি.কে সেচখালের অদূরবর্তী ভিটের মাঠের ভাঙা পানবরজের খুঁটিতে বেঁধে রাখা তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে গ্রামবাসী পুলিশে খবর দেয়। ৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার মর্তুজাপুর মাঠে চাচাতো ভাই হিল্লালের কোদালের আঘাতে বিল্লাল প্রাণ হারায়। মর্তুজাপুর গ্রামসংলগ্ন গনের গুড়ের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ২৯ মে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরু চুরি করে ট্রাকযোগে সটকানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে গরুচোর বাবু নিহত হয়। জনতার ধাওয়ার মুখে কার্পাসডাঙ্গা-দামুড়হুদা সড়কের নাপিতখালী নামকস্থানে ট্রাকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে ৪ জন। পালিয়ে যায় তাদের কয়েক সহযোগী। গণপিটুনিতে নিহত হয় বাবু চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের বৈদ্যনাথপুরের চিহ্নিত গরুচোর। ৫ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা ঝোড়াঘাটা গ্রামে গরু চুরি করে পালানোর সময় দু চোর গনপিটুনিতে নিহত হয়। নিহত দু চোর দামুড়হুদা খাঁপাড়ার হানু ও মেহেরপুর গাংনী গাড়াবাড়িয়ার মিরা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ৮ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা শহরের আরামপাড়ায় মিলন নামের এক যুবককে জবাই করে খুন করে দুর্বৃত্তরা। নিহত মিলন চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজপাড়ার শরীফ মণ্ডলের ছেলে। সদর থানা পলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। অপরদিকে এদিনে জীবননগর উপজেলার মেদিনীপুর গ্রামের জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাচাতো ভাইয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয় আব্দুল আজিজ। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়। আজিজ ঝিনাইদহের মহেশপুর ঘুগরী গ্রামের মৃত উজ্জ্বত আলীর ছেলে। ১৩ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরে কুতুবপুর মাঠে পাশ্ববর্তী হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে সাহেব আলী রাসেলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করে সন্ত্রাসীরা। সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। রাসেল ছিলো চরমপন্থি দলের সদস্য। ১৫ সেপ্টেম্বর দামুড়হুদা উপজেলার কলাবাড়ির বিল্লাল হোসেনের ছেলে শাহাবুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করে দুর্বৃত্তরা। রামনগর-কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদূরবর্তী গোপালপুর গ্রাম সংলগ্ন আটলাচর মাঠের রাস্তার পাশ থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ২৬ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা দর্শনা আকন্দবাড়িয়ায় শরিকি জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাচার লাঠির আঘাতে ভাতিজা লিপু মারা যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালমর্গে পাঠায়। ৪ নভেম্বর দামুড়হুদা উজিরপুরে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশীদের লাঠির আঘাতে পচা বিশ্বাস মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়। ১৬ নভেম্বর দামুড়হুদা পীরপুরকুল্লা গ্রামের বৃদ্ধ সার্থক মণ্ডলকে এক থাপ্পড় মেরে হত্যা করে প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম। জমির ধান কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শহিদুল সার্থককে থাপ্পড় মারলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ১৭ নভেম্বর জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হেঁসোর কোপে শরীফ উদ্দিন খুন হয়। কয়া গ্রামের স্কুলমাঠে এ ঘটনা ঘটে। শরীফ উদ্দিন গ্রামেরই আব্দুল লতিফের ছেলে। ১ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা বণ্ডবিলের একটি আমবাগাম থেকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের নান্টুর স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ জানায় ধর্ষণ শেষে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। ৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গার পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে নেশাখোর পিতা তার শিশু সন্তান নয়নকে নেশার টাকা না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে চৌকির সাথে আছড়ে হত্যা করে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য। ৯ ডিসেম্বর দামুড়হুদা দলকা বিলপাড় থেকে পোতারপাড়া গ্রামের শামসুল মালিতার ছেলে মিনারুল ইসলাম মালিতা ও আলমডাঙ্গার শিবপুর গ্রামের শাকের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা দুজনই চরমপন্থি দলের সদস্য ছিলো। পুলিশের ধারণা দলীয় কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষ খুন করে থাকতে পারে। ১৪ ডিসেম্বর দামুড়হুদা দর্শনার মদনায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাই-ভাতিজার হাতে খুন হয় শামসুদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেম। ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়।