ফিরে দেখা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা-৭৯ চুয়াডাঙ্গা-১ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগের বাদল রশীদ পরাজিত করেন জাসদের সাফায়েতকে

তাছির আহমেদ/খাইরুজ্জামান সেতু: জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা-৭৯ চুয়াডাঙ্গা-১ গঠিত হয়েছে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার সমন্বয়ে। আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮৭ আর মহিলা ভোটার ২ লাখ ১৪৭। হিসাব করে দেখা গেছে পুরুষের থেকে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩ হাজার ২৬০টি বেশি। এসকল ভোটারের জন্য ১৬৬টি ভোটকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ভোটকক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে ৯২৭টি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় এ আসনে দুজন প্রতিযোগী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন, একজনের বরাদ্দ নৌকা প্রতীক অপরজনের প্রতীক মশাল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী এ নৌকা প্রতীকের বরাদ্দ পেয়েছেন যিনি, তিনি চুয়াডাঙ্গা ৯ নং পৌর এলাকার বাসিন্দা আরামপাড়া কবরী রোডের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। অপরজন মশাল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মনোনীত প্রার্থী আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুর চেয়ারম্যানপাড়ার মৃত খোরশেদ মণ্ডলের ছেলে মো. সবেদ আলী।

গুঁটি গুঁটি পায়ে নির্বাচনের তারিখ ভোটারদের দোর গোড়ায় তবুও নিরুত্তাপ এ নির্বাচনী এলাকা। গত নির্বাচনের ঠিক এ সময়, আমরা ভোটারদের মাঝে যে ব্যাপক সরগরম লক্ষ্য করেছি, এবারের বেলায় তার একাংশও লক্ষণীয় নয়। অধিকাংশ ভোটারের মাঝে গতবারের মতো সেই আনন্দ-উল্লাস নেই। সাধারণ ভোটারদেরকে নিয়ে রশি টানাটানির খেলা সমর্থকদের মধ্যেও তেমন নেই। তবে আ.লীগের সক্রিয় কর্মীদের মাঝে জেগে আছে এ খেলা। চা-পান-বিড়ির দোকানে হচ্ছে না কোনো কানাঘোঁষা। ভোট প্রদানের নির্ধারিত তারিখ আসতে আর মাত্র বাকি ৮ দিন। আগামী ৫ জানুয়ারি রোজ রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এক টানা চলবে এ সকল প্রার্থীর ভোটযুদ্ধ। এবারের যুদ্ধে জয়ী-পরাজিত কে হবেন? ভোটাররা আগাম একশ ভাগ নিশ্চিত করে বলছেন নৌকা।

নির্বাচন অফিসসূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা বিগত জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটপ্রদান করেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। মোট ৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩১ হাজার ১৭ ভোটার, আর বাতিল হয় ২ হাজার ২৮০টি। এ নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বিএনপির প্রার্থী অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে প্রায় অর্ধ লাখ ভোটে পরাজিত করেন। সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৩ আর অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের ছিলো ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৯। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আসাদুজ্জামানের ৫ হাজার ২৭ ও এলডিপির ইদ্রিস আলীর প্রাপ্ত ভোট ছিলো মাত্র ৫৭৯।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে। এ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ৩৮ হাজার ৪৩০ ভোটে পরাজিত করেন আ.লীগের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে। সর্বমোট ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪০৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৯২, আর বাতিল বলে গণ্য হয় ১ হাজার ৪৪৭। সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৩টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৩৩, জাতীয় পার্টি (জাপা) অ্যাড. সোহরাব হোসেন ১ হাজার ৪৮৭, গণতন্ত্রীর মোতাহারুল ইসলামের ৩৩৩ আর জাপা (মঞ্জু) ১৮৫ ভোট পান।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শামসুজ্জামান দুদু জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬ ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৮ হাজার ৩২৬ জন, আর বাতিল বলে গণ্য হয় ২ হাজার ৬৪২। বিজয়ী বিএনপির প্রার্থী শামসুজ্জামান দুদুর প্রাপ্ত ভোট ছিলো ৮৯ হাজার ৭৮৬, আ.লীগের পরাজিত প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রাপ্ত ৭৭ হাজার ৪৮৯, তৃতীয় হন জামায়াত প্রার্থী আব্দুল খালেকের প্রাপ্ত ভোট ৩৫ হাজার ৩৬৫, জাতীয় পার্টির (জাপা) শহিদুল ইসলাম পিন্টু চতুর্থ হন ৫ হাজার ২১২ ভোট পেয়ে, পঞ্চম জাসদের (রব) তৌহিদ হোসেন ৩ হাজার ৪০৩টি ভোট এবং আর ইসলামী ঐক্যের মাও. ইউনুচ আলী ৩ হাজার ৪৩টি ভোট পেয়ে ৬ষ্ঠ হন।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালের ২৭ জানুয়ারি। বিএনপির প্রার্থী মিঞা মনসুর আলী মাত্র ১ হাজার ৮৫২ ভোটে পরাজিত করেন আ.লীগের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে। এ নির্বাচনে মোট ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৩৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪৮ জন, ভোট বাতিল হয় ১ হাজার ৪৮৫টি। বিজয়ী মিঞা মনসুর আলীর প্রাপ্ত ভোট ৫৫ হাজার ৩৮৭টি, পরাজিত সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রাপ্ত ভোট ৫৩ হাজার ৫৩৫টি, তৃতীয় ফ্রিডম পার্টির মেজর (অব.) বজলুল হুদার প্রাপ্ত ভোট ৪৪ হাজার ৬৩০ আর জাকের পার্টির বাবুল রহমান ৪ হাজার ৪৫৬ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন।

১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মকবুল হোসেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বাকশালের মনোনীত প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। বিজয়ী মকবুল হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ৩৪ হাজার ৮২৭, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ৩১ হাজার ৬৫, তৃতীয় আরেক স্বতন্ত্রপার্থী বাদল রশীদ প্রাপ্ত ভোট ২৯ হাজার ৪২, আর জাতীয় পার্টির (জাপা) আনোয়ার হোসেন ৪ হাজার ৬৮৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ২৮ ফ্রেব্রয়ারি। এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মিঞা মনসুর আলী নির্বাচিত হন। মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ৬৮ হাজার ৫৫ জন ভোটার, আর বাতিল ১ হাজার ৯২৯। বিজয়ী মিঞা মনসুর আলীর প্রাপ্ত ভোট ৩৮ হাজার ১৮৮, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের (মালেক) বাদল রশীদের প্রাপ্ত ভোট ১৩ হাজার ৮৬, তৃতীয় জাসদের সাফায়েতুল ইসলাম ১০ হাজার ৫১৯, আর চতুর্থ হন ন্যাপের প্রার্থী মনসুর উদ্দীনের প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৬৫৪।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। এ নির্বাচনী এলাকায় তখন ভোটারের সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ১৯ হাজার ৬১২। মোট ৫১ কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন ৬৭ হাজার ৯১৬ জন আর বাতিল হয় ২ হাজার ৩১৩টি। আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী বাদল রশীদ জাসদের সাফায়েতুল ইসলামকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। বিজয়ী বাদল রশীদের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ৫৫ হাজার ৮০৫ আর পরাজয়ী সাফায়েতুল ইসলামের ছিলো ১২ হাজার ১শ ১১টি ভোট। সে হিসেবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে প্রথম সংসদে বসেন আ.লীগের প্রার্থী বাদল রশীদ।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।