ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই নেয়া হলো প্রাথমিকের ইংরেজি পরীক্ষা : তদন্ত শুরু

স্টাফ রিপোর্টার: ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই নেয়া হয়েছে প্রাথমিক সমাপনীর ইংরেজি পরীক্ষা। এ বছর পঞ্চম শ্রেণির ২৯ লাখ ৫০ হাজার ১৯৩ শিশু পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আজ অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ প্রশ্নপত্রের হাতে লেখা কপি বিক্রি করতে দেখা গেছে। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, কথিত বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের ওই প্রশ্ন মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। এদিকে কমিটি গতকাল রোববার থেকে আনুষ্ঠানিভাবে তদন্তের কাজ শুরু করেছে। প্রশ্ন ফাঁসের হোতাদের গ্রেফতারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের অভিযানে নেমেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং (বিজি) প্রেসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায় নি। সরকারি এ ছাপাখানা প্রশ্ন ফাঁসের উৎস বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছে। দেশের সর্ববৃহৎ এ পাবলিক পরীক্ষার গণিত ও বাংলা বিষয়ের পরীক্ষাও ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার একটি গণমাধ্যমে ছাপা হওয়া প্রশ্নে ওইদিন বাংলা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় পড়ে যায়। কর্তৃপক্ষ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও বিকল্প প্রশ্ন হাতে না থাকা, নতুন প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপা, বিতরণে বিপুল সময় ও অর্থের প্রয়োজনীয়তা, পরীক্ষা শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে ফল প্রকাশের চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি যুক্তিসঙ্গত কারণে পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে না। শুধু গণিত, বাংলা আর ইংরেজি নয়, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সব বিষয়ের প্রশ্নই ফাঁস হয়ে গেছে। সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট চড়া দামে ওই প্রশ্নপত্র বিক্রি করে আসছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্ত শুরু এদিকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রাথমিকের পরীক্ষা নেয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার থেকে আনুষ্ঠানিভাবে তদন্তের কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম আশরাফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দু জন সদস্য হলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফারুক জলীল ও উপপরিচালক ডা. এএস পারভেজ রহিম। কমিটিকে অভিযোগ তদন্তে প্রথমে সাত দিনের সময় দেয়া হলেও পরে ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, কমিটিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি-না, প্রশ্নপত্র কোন পর্যায় থেকে ফাঁস হয়েছে কোন কোন বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে সম্পর্কিত সুপারিশমালা প্রণয়নের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা বা কেউ বেআইনিভাবে লাভবান হয়েছে কিনা এসব বিষয় চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিটি এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কেও সুপারিশমালা পেশ করবে।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। কমিটিকে অভিযোগ তদন্তে প্রথমে সাত দিনের সময় দেয়া হলেও পরে ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে কে কিভাবে দায়ী, কিভাবে ফাঁস হয়েছে এ ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখা হবে। এর কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা বা বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

হোতাদের গ্রেফতারের অভিযান, অষ্টম শ্রেণির জেএসসির পর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের অভিযানে নেমেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে রোববার বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং (বিজি) প্রেসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে আটক করেনি। সরকারি এ ছাপাখানা প্রশ্ন ফাঁসের উৎস বলে গোয়েন্দাদের ধারণা করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় সরকার বিব্রত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জড়িতদের গ্রেফতার অভিযানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে জড়িতদের গ্রেফতারের অভিযান চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান। ইতোমধ্যে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন স্থান থেকে এ প্রশ্ন সাধারণ জনগণের হাতে পৌঁছুছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে ৩টি সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে একটি সিন্ডিকেট প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে অপর একটি সিন্ডিকেটের কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরবর্তী সিন্ডিকেট এসব প্রশ্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। তিনি জানান, গোয়েন্দারা প্রথম সিন্ডিকেটের সন্ধানে নেমেছে। তাদের ধরতে পারলে বাকি সবাইকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। ধারণা করা হচ্ছে, বিজি প্রেসের কিছু অসাধু কর্মচারী প্রথম সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করছে। এর আগেও একাধিকবার বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ কারণে সরকারি এ প্রেসের লোকজন রয়েছে সন্দেহের তালিকায় সবার ঊর্ধ্বে।

ভাঙ্গায় পৌনে ২ ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু: গতকাল রোববার ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় প্রাথমিক সমাপনীর ইংরেজি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের পৌনে দু ঘণ্টা পর শুরু হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ১৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পৌনে দু ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এসব কেন্দ্রে পঞ্চম শ্রেণির ৫ হাজার ৩৩০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। পরে ফটোকপি করা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে আরো আছেন ফরিদপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী আসাদুজ্জামান কবির বলেন, প্রশ্নপত্র সঙ্কটের কারণে সকাল ১১টার পরীক্ষা পৌনে ১টায় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। জানা গেছে, রোববার সকাল সোয়া ৯টায় ভাঙ্গা থানায় ইংরেজি পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ করতে গিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রশ্ন রক্ষিত ট্রাংক খুঁজে পায়নি। ওই ট্রাংকে পাঁচ হাজার প্রশ্ন ছিলো।