ফলোআপ: দামুড়হুদার বহুল আলোচিত মোবাইল রানাকে জেলহাজতে প্রেরণ

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার দলকালক্ষ্মীপুরের বহুল আলোচিত জিআর মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি প্রতারক রানা ওরফে মোবাইল রানাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন বিজ্ঞ বিচারক। গত রোববার দামুড়হুদা থানা পুলিশ তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

কে এই রানা? কী তার পরিচয়? এ সব জানতে গিয়ে গ্রামবাসীরা জানায়, দামুড়হুদা উপজেলার দলকালক্ষ্মীপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার শুকুর আলীর ছেলে রানা। ৪ ভাইয়ের মধ্যে সকলের বড়। ব্যক্তিগত জীবনে সে বিবাহিত। পিতার তেমন কোনো জমিজমাও নেই। গ্রামের মাদরাসায় ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর অর্থাভাবে আর পড়ালেখা হয়ে ওঠেনি। পিতা শুকুর আলী মহল্লার জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন। মাসে দেড় হাজার টাকা বেতন। তা দিয়ে কোনোমতে চলে যেতো তাদের অভাবের সংসার। পরবর্তীতে পিতা-পুত্র দুজনে ছোট পরিসরে গ্রামেই গড়ে তোলেন ওয়েল্ডিঙের দোকান। পড়ালেখায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরুলেও সে মোবাইল ট্রাকিংসহ মোবাইলের নানা বিষয়ে বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠে। এলাকায় একজন মোবাইল এক্সপার্ট হিসেবে রানার পরিচিতি গড়ে ওঠে। শুরু করে এলাকার মানুষের মোবাইলফোনের মাধ্যমে অভিনব কৌশলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাজ।

বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন জানতে পেরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাক দেয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে রানা সত্যিই একজন মোবাইল এক্সপার্ট। মোবাইল ট্রাকিংসহ মোবাইলের নানা বিষয়ে সে বেশ পারদর্শী। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তৎকালীন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের কাছে। তৎকালীন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান তাকে নিজস্ব সোর্স হিসেবে ব্যবহার শুরু করার পর গড়ে ওঠে পুলিশের সাথে তার সখ্য। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি রানার। প্রতারক রানা কখনও পুলিশের পোশাক পরে পুলিশের গাড়িতে আবার কখনও র‌্যাবের পোশাক পরে র‌্যাবের গাড়িতে অনেকেই তাকে ঘুরতে দেখেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আর এ সুযোগকে পুঁজি করেই সে এলাকায় অভিনব প্রতারণার কর্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। বিভিন্ন মামলার তদবিরসহ এলাকার মানুষদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই সে নিজ গ্রামে তৈরি করেছে পাকা দালানঘর। পিতা-পুত্রের দুটি মোটরসাইকেল। দৃশ্যত কোনো অর্থ উপার্জনের উৎস না থাকলেও অল্প দিনেই সে হয়ে ওঠে অর্থ বৈভবের মালিক।

গ্রামবাসী আরও জানায়, পুলিশের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠার পর সে গ্রামের কাউকেই মানতো না। দিতো না কোনো সিনিয়রকে সম্মান। গ্রামের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও হয়ে পড়ে তার হাতে জিম্মি। র‌্যাব ও পুলিশের পোশাক ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ফকির আজিজুর রহমান বলেন, সাধারণ কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই ওই পোশাক পরতে পারবে না। যদি কেউ পরে তবে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৭০ ধারায় মামলা করা হবে।