প্রাথমিকে ৫০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি : মামলার ফাঁদে আটকে আছে নিয়োগ

 

প্যানেলভুক্তদের আগামী এপ্রিল পর্যন্ত শূন্যপদে নিয়োগ চলবে : পুলভুক্তদের মামলা নিষ্পত্তি হলে পুরোনো সরকারি স্কুলে নিয়োগ

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি আছে। এর মধ্যে ৩৪ হাজার সহকারী শিক্ষকের, ১৬ হাজার প্রধান শিক্ষকের। মামলা জটিলতায় সরকার এসব পদে নিয়োগ দিতে পারছে না। অবশ্য আইনি জটিলতা শেষপর্যায়ে হওয়ায় আপাতত প্যানেল থেকে সদ্য জাতীয়করণকৃত স্কুলে সহকারী শিক্ষকের পদ পূরণের প্রক্রিয়া চলছে। পুলভুক্ত প্রার্থীদের মামলাও নিষ্পত্তির পথে। এ মামলা শেষ হলে পুরনো সরকারি স্কুলে সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্য আছে সরকারের। প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণের লক্ষ্যে মামলাকারী পক্ষগুলোকে নিয়েও সমঝোতার চেষ্টা চলছে। তা সফল হলে এসব পদও পূরণ করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ জটিলতাও সমাধান করেছে মন্ত্রণালয়। মামলায় জিতে আসা প্রার্থীরা চাচ্ছেন তাদের আগে নিয়োগ দেয়া হোক। আর সরকার চাচ্ছে, মামলার রায় অনুসারে প্যানেলে থাকা সব প্রার্থীকেই নিয়োগ দেবে, যাতে শিক্ষক সংকট দূর করা যায়।

ডিপিই মহাপরিচালক মো. আলমগীর সোমবার বিকালে জানান, মামলার রায় দেখে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছি। রায়ে মেধাতালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে, মামলায় জয়ীদের আগে নিয়োগ দিতে বলা হয়নি। তিনি বলেন, সদ্য জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ে শূন্যপদ অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হবে। যে উপজেলায় বিদ্যমান মেধাতালিকা এবং শূন্য তালিকা সমান, সেখানে সব প্রার্থী এখন নিয়োগ পাবেন। আর যদি শূন্যপদ কম থাকে, তাহলে হয়তো একসঙ্গে সবাই নিয়োগ পাচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে তালিকায় থাকা বাকি প্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে। পদ খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, প্যানেল করা হয়েছিল ৫ বছরের জন্য। সে অনুযায়ী আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্যানেলের বৈধতা আছে। আমরা সেই পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবো।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদে নিয়োগ নিয়ে ২৪ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। এতে ডিপিই মহাপরিচালক জানান, ৩৪ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। এছাড়া অবসর, মৃত্যু, ইস্তফাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন ২০০ শিক্ষকের পদ খালি হচ্ছে। এসব শূন্যপদ পূরণ না করলে পাঠদানে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, এসব শূন্যপদ নতুন ও পুরনো উভয় সরকারি স্কুলেই বিদ্যমান। এরমধ্যে সদ্য নতুন সরকারি স্কুলের কিছু পদ পূরণ করা গেলেও পুলভুক্ত প্রার্থীদের মামলার কারণে পুরনো স্কুলের নিয়োগ আটকে আছে। তবে শিগগিরই মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে বলে আভাস দিয়েছেন ডিপিই মহাপরিচালক। মামলায় জিতে আসা প্যানেল প্রার্থীদের বিষয়ে ডিপিই মহাপরিচালক জানান, মামলার রায়ের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং থেকে মতামত নিয়েই মেধাতালিকা অনুযায়ী নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শূন্য পদ গণনার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের আদেশ অনুযায়ী জাতীয়করণকৃত ২২ হাজার ৯২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে সৃষ্ট পঞ্চম পদও অন্তর্ভুক্ত হবে। এ সংক্রান্ত সর্বশেষ নির্দেশনায়ও তাই বলা হয়েছে।

এর আগে ডিপিই ৬ জুন এ বিষয়ে আরেকটি নির্দেশনা দিয়েছিলো। তাতে সদ্য জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের (ডিপিইও) নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই নির্দেশনায় থানা/উপজেলা মেধাক্রম অনুসরণের কথা বলা হয়। এতে ৭ দিনের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে বলা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনের উল্লিখিত সদ্য জাতীয়করণকৃত (সাবেক রেজিস্টার্ড) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালে বিজ্ঞপ্তি দেয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন ৪২ হাজার ৬১১ জন। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এ মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। কথা ছিলো উত্তীর্ণদের পাঁচ বছরের মধ্যে নিয়োগ দেবে সরকার। কয়েক ধাপে ১৪ হাজার জনকে নিয়োগও দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণার পর অবশিষ্ট প্রায় ২৮ হাজার প্রার্থীর নিয়োগ আটকে যায়। এদের মধ্যে মামলায় জয়লাভ করা ৭ জনকে ইতিমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাকিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন চলছে।

প্রধান শিক্ষক: এদিকে সদ্য জাতীয়করণকৃত এবং পুরনো মিলিয়ে সব ধরনের বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৬ হাজারের বেশি প্রধান শিক্ষকের পদ খালি আছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং ডিপিই মহাপরিচালক মো. আলমগীর আলাদাভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ৬৫ শতাংশ পদোন্নতি ও ৩৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগে পূরণ করতে হবে। সে অনুযায়ী সম্প্রতি সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) প্রধান শিক্ষকের পদপূরণে নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মামলাসহ বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে জ্যেষ্ঠতাসহ নানা সমস্যায় পদোন্নতি কার্যক্রমও গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান একাধিক দফায় বৈঠক করেছেন। এ বিষয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন- আশা করছি, মামলা নিষ্পত্তি করেই প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণে ব্যবস্থা নিতে পারব।