প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমপিদের চাপের মুখে অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস

 বাজেটে বরাদ্দ থাকছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওতে

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষেনতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওর (মান্থলি পে-অর্ডার) আওতায় আনতে বাজেটেবরাদ্দ রাখার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনিবলেছেন, আগামী বাজেটে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। কিন্তু সেটি একটিনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্যদেরসঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর এনইসিসম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী নিজেই। ২০১৪-১৫অর্থবছরের বাজেটে এমপিওর জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ থাকবে না বলে তিনি জানিয়েদেন আলোচনার শুরুতে। তিনি বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে এমপিও পদ্ধতি একটি বড়বাধা। এবার এমপিওতে কোনো বরাদ্দ থাকবে না। তবে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষবরাদ্দ দেয়া হবে। এর আগেও এমপিও খাতে অর্থ বরাদ্দ না রাখার ব্যাপারে কয়েকদফা ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংসদ সদস্যদের সবাইঅর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের বিপক্ষে অবস্থান নেন। সংসদ সদস্যদের চাপের মুখেএমপিও খাতে বরাদ্দ রাখার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।

কয়েক বছর ধরে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ব্যানারে শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এমপিওভুক্তির প্রয়োজন অনুভব করে অধিকাংস সংসদ সদস্য এমপিওভুক্তির জন্য অর্থমন্ত্রীকে চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। এরই এক পর্যায়ে এমপিওভুক্তির জন্য বাজেটে অর্থ রাখতে সম্মত হলেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী এমপিওভুক্তির আশ্বাসসহ আলোচনায়বলেন, অনেকেই বলছেন আগামী বাজেট হবে উচ্চাভিলাষী। আমি উচ্চাভিলাষীবাজেট পছন্দ করি। পাঁচ বছর ধরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৬ শতাংশের ওপরে। এরআগে ছোট বাজেট থাকলেও ৯০ শতাংশের ওপরে বাস্তবায়ন হয়নি। এ অবস্থায় বড় বাজেটদেয়া হলে বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। এ সময় তিনি বলেন, যারা পরিবেশবান্ধবশিল্প প্রতিষ্ঠা করবে তাদের কর কমানো হবে। আর পরিবেশের ক্ষতি করলে করবাড়ানো হবে।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যুৎ খাতেসর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা উচিত। কম করে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করতে হবে। বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে করেরআওতা বাড়াতে হবে।

সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলি বলেন,এমপিওর বিষয়েঅর্থমন্ত্রী যেসব নেতিবাচক কথা বলেছেন,তা প্রত্যাহার করতে হবে। এমপিওভুক্তি চালু রেখেশিক্ষাব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, শিল্প খাতের কাঁচামালআমদানির ক্ষেত্রে কাস্টম ডিউটি কমানো উচিত। ধীরে ধীরে কাস্টম ডিউটি শূন্যপর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। শিল্প সুরক্ষায় বাজেটে বিভিন্ন উদ্যোগ থাকতে হবে।করও এমপিও নিয়ে বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিরসভাপতি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, রাজস্ব আয় এখনওমোট দেশজ আয়ের (জিডিপি) ১০ শতাংশের মধ্যে আছে। এটা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।রাজস্ব আয় বাড়াতে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত। বাড়ির মালিক, ডাক্তারও উকিলদের কর ফাঁকি বন্ধ করে করের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। অবকাঠামো উন্নয়ন ওসুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বিনিয়োগ বাড়বে।তিনি বলেন, পল্লীঅঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। ১৫ বছর ধরেবেতন হয় না এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওরআওতায় আনতে হবে। তবে এ কথা ঠিক, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিরসুযোগের অপব্যবহার করছে। মাদরাসাগুলোতে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। এগুলো কঠোর হাতেদমন করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমে এমপিওর আওতায়আনার দাবি জানান তিনি।মেজর রফিকুল ইসলাম এমপি বলেন, এমপিদের নামে যে১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় সেটি আগামী বাজেটে অব্যাহত রাখতে হবে।ভবিষ্যতে আরও নতুন রাস্তা তৈরি হওয়া দরকার। সেই সঙ্গে ব্রিজ-কালভার্ট তৈরিকরতে হবে। পল্লী বিদ্যুতের নানা সমিতির নামে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।সরকারি কাজে দুর্নীতির বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।রোস্তম আলী ফরাজিএমপি বলেন, পদ্মাসেতু না করতে পারায় সরকারের ভাবমূর্তি ম্লান হয়েছে।প্রকল্পটির দৃশ্যমান অগ্রগতির জন্য আগামী বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতেহবে। স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্ত করতে হবে।একেএম মাইদুল ইসলাম এমপিবলেন, এসিল্যান্ড দিয়ে কর আদায় করা যায় কি না,সেটি ভাবতে হবে। চরাঞ্চলেরজন্য থোক বরাদ্দ রাখতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করেমাদরাসাগুলোর ওপর নজরদারি রাখতে হবে। শওকত আলি এমপি বলেন, এলজিইডিদুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থানিতে হবে। নদী ভাঙন রোধে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।আবদুর রউফ এমপি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানরা যাতে এমপিদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করেন তার ব্যবস্থাকরতে হবে। এ ছাড়া তাঁতিদের জন্য অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে।বেগমরেবেকা মমিন বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো হলেও হাওর অঞ্চলে উন্নয়নেরছোঁয়া লাগেনি। হাওরের লোকজন খুবই কষ্টে রয়েছেন। অবহেলিত এলাকার উন্নয়নেবিশেষ ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।এ ছাড়া বাজেটের আলোচনায় সংসদ সদস্যরাশিক্ষা খাতের উন্নয়নের জন্য নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, খাদ্য ও ওষুধের ভেজাল রোধ, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থায়গুরুত্ব দেয়া, ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বিশেষ প্রণোদনা, অবহেলিত এলাকায় বেশিঅর্থ বরাদ্দ, বিদ্যুতের বিতরণ লাইন নির্মাণে অবহেলিত এলাকায় অগ্রাধিকারদেয়া, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীভাঙন রোধ, নদীর নাব্য রক্ষায় ড্রেজিংয়েরআওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। প্রাক-বাজেট আলোচনায় অন্যদেরমধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, অর্থ সচিবফজলে করিম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মেজবাহ উদ্দিন, জাতীয় রাজস্ববোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.আতিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।