পৃথক পরিবহনে কলেজ শিক্ষকসহ ৭ জনকে অজ্ঞান করে ১৫ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে চম্পট

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় অজ্ঞানপার্টির অপতৎপরতা ভায়াবহ রূপ নিয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুহাট ও হাটমুখি বাসে অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গতপরশু রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭ জনকে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে কয়েক লাখ টাকা হারিয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে অজ্ঞান হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একজন কলেজ কলেজ শিক্ষককে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ছিলো চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের শিয়ালমারী পশুহাট। কুমিল্লা, নোয়াখালী থেকে গরু কেনার জন্য নগদ টাকা নিয়ে শিয়ালমারী পশুহাটের উদ্দেশে রওনা হন ৫ গরুব্যবসায়ী। এদের মধ্যে দুজনকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশকোচে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা অজ্ঞান করে। এদের জীবননগরে অজ্ঞান অবস্থায় নামিয়ে দিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। এছাড়া বড়সলুয়া মডেল কলেজের শিক্ষক আব্দুল করিম গতকাল লোকাল বাসযোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে দর্শনায় ফেরার সময় অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েন। তাকে জীবননগরে বাস থেকে অচেতন অবস্থায় নামিয়ে দেয়া হলে তাকেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। এদিকে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার হোসেনপুর থেকে শিয়ালমারী পশুহাটে গরু কেনার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে গোলাম মল্লিক (৬০) অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে ৩৩ হাজার টাকা হারিয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে দামুড়হুদার জয়রামপুর থেকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে কোথায় কীভাবে অজ্ঞান করে তার নিকট থাকা গরু কেনার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তা বলতে পারেননি তিনি। গোলাম মল্লিক আলমডাঙ্গার হোসেনপুর গ্রামের মৃত ইছাহক আলীর ছেলে। এদিকে নোয়াখালীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত মকলেছুর রহমানের ছেলে তোফাজ্জেল আহম্মেদ (৫২), নোয়াখালীর শিবপুর গ্রামের মুনসাদ মিয়াকে (৬৫)  কয়েকজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চম্পট দেয়। ওরাই তোফায়েল আহম্মেদের নিকট থাকা ১৫ লাখ টাকার ব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়েছে। এছাড়া তাদের সাথে থাকা নোয়াখালী লক্ষ্মীনারায়ণপুরের ফন্টের ছেলে সোহেল তাদের সাথে থাকলেও তার হদিস মিলছে না। এ তথ্য জানিয়ে তোফায়েল আহম্মেদ বলেছেন, পরশু রাতে রয়েল পরিবহনে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হই। দর্শনায় নামিয়ে দিলে একটি লোকাল বাসযোগে পশুহাটের জন্য যাত্রা করি। বাসের মধ্যে অল্প বয়সী এক ছেলে আমাদের পেয়ারা খেতে দেয়। আমি ও আমার সাথে থাকা সোহেল অল্প খাই। মুনসাদ বেশি খেয়ে বাসের মধ্যেই ঝিমিয়ে পড়ে। বিষয়টি বুঝে ওর কাছে থাকা টাকা আমার ব্যাগে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই। সোহেল বমি শুরু করে। সহযোগিতা করার জন্য কয়েক যুবক এগিয়ে আসে। হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে ওরা দ্রুত সরে পড়ে। এরপর দেখি আমার কাছে থাকা ব্যাগটি নেই। সোহেলের কী হয়েছে তাও জানি না। তার মোবাইলফোন নম্বরও বন্ধ। আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। মুনসাদের এখনও জ্ঞান ফেরেনি।

আমাদের জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে এক কলেজ শিক্ষক ও দুই গরু ব্যবসায়ী অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে পরিবহনযোগে শিয়ালমারী পশুহাটে আসার পথে ও চুয়াডাঙ্গা থেকে যাত্রীবাহী বাসে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েন তারা। এলাকাবাসী অচেতন অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া গরু ব্যবসায়ী খবির (৩৭) ও সোহেল (২৭) কুমিল্লার মতলব থানার বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষক আব্দুল করিম (৪০) দর্শনার আব্দুল জব্বারের ছেলে।

হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা জেলার মতলব থানার মোহাম্মদ আলীর ছেলে খবির উদ্দীন ও একই এলাকার হোসেন মোল্লার ছেলে সোহেল গরু ব্যবসায়ী। তারা তাদের সহযোগী ব্যবসাদারদের নিযে ঢাকা গাবতলী থেকে রাতে পরিবহনযোগে জীবননগরের শিয়ালমারী পশুহাটে গরু কেনার উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে খবির ও সোহেল অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে। জীবননগর পৌঁছানোর পর তাদের সহযোগীরা অচেতন অবস্থায় পেয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তবে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তারা কি পরিমাণ টাকা খুঁইয়েছেন তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি। অপরদিকে দর্শনার আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল করিম (৪০) বড়সলুয়া মডেল কলেজের শিক্ষক। তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে যাত্রীবাহী বাসে দর্শনার উদ্দেশে রওনা হলে পথিমধ্যে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অচেতন হয়ে পড়ে। জীবননগর বাসস্ট্যান্ডে তাকে অচেতন অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের জ্ঞান ফেরেনি।