পুলিশ জনগণের সহযোগিতা পেলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে

চুয়াডাঙ্গায় কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান

 

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ-জনতার দূরত্ব কমিয়ে অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যেই কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম। মনে রাখতে হবে, কমিউটি পুলিশ নয়, কমিউনিটি পুলিশিং। এ ফোরামের সদস্যদের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য করণীয় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, থানার ওসি, এসপি সার্কেল, এসপির মোবাইলফোন নম্বর রাখতে হবে। বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ডে এ নম্বরগুলো লিখে রাখা হয়েছে। ফাঁড়ির ইনচার্জকে জানানোর পর পদক্ষেপ না নিলে ওসিকে জানাতে হবে, তারপরও কাজ না হলে এএসপি সার্কেল আছে। তিনি নিশ্চয় পদক্ষেপ নেবেন। আর তাতেও সাড়া না মিললে আমাকে জানান।

পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত চুয়াডাঙ্গা কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশের প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান উপরোক্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে দেশে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি বা ফোরামের কার্যক্রম শুরু হলেও মাঝে কিছুদিন ঝিমিয়ে ছিলো। সমাজের সার্থেই আবারও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের কার্যক্রম জোরদার করার কাজ চলছে। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নসহ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এ ফোরাম গঠন করে অপরাধমুক্ত সমাজ গঠন করার নির্দেশনা রয়েছে। পুলিশ সব সময়ই জনগণের পাশে রয়েছে। পুলিশ জনগণকে পাশে পেলে অপরাধী ধরে আইনে সোপর্দ করা সহজ। পুলিশ জনগণের সহযোগিতা পেলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।

গতকাল সোমবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের (সিপিএফ) জেলা সমন্বয়কারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম বেনজীর। তিনিই সভাপতিত্ব করেন। সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, সরকারি কৌসুলি (পিপি) অ্যাড. মহ. শামসুজ্জোহা ও জেলা সিপিএফের সদস্য সচিব এমএম মনিরুজ্জামান। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন- মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার, পুলিশিং ফোরামের স্থানীয় অন্যতম সমন্বয়কারী ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নূঝাত পারভীন।

বক্তব্য দিতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস পুলিশের অপ্রতুলতা প্রসঙ্গ টেনে সকলকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান। অ্যাড. শামসুজ্জোহা পিপি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আড়ালে বাঘা বাঘা সন্ত্রাসীদের পতন আর জেলে বন্দি রাখার বিষয়টি সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সকলেই যদি দায়িত্বশীল হয়ে অপরাধীর শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা প্রত্যাশিত সমাজ পাবো। গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, পুলিশ সক্রিয় হলে আর এলাকার জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্বশীল হলে অপরাধীদের দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বক্তব্য দেয়ার পূর্বে উপস্থিত সকলের জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নের সুযোগ দেন। মুক্ত মাইক পেয়ে অনেকেই বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পৌর কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মনি বলেন, পুলিশিং কমিটির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হত্যা মামলার আসামি হতে হয়েছে। বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। আবারও তেমন হয়রানির শিকার হতে হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? কাউন্সিলর চান্দু পুলিশের কোনো সদস্য প্রকাশ্যে টাকা নিচ্ছে দেখলে পুলিশিং কমিটির সদস্যদের কিছু করণীয় আছে কি-না তা জানতে চান। কেউ বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যদের পরিচয়পত্র দেয়া হবে কি-না? এসব প্রশ্নের জবাব দেন পুলিশ সুপার। প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শহরে পরপর কয়েকটি দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের একার পক্ষে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করা প্রায় অসম্ভব। সে করণে পুলিশের সহযোগিতায় কয়েকটি মহল্লায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বস্তরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যসহ সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।

সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান মুন্সি, সদর থানার ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান খান, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবীর, দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জান ও আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির উদ্দিন মোল্লা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, প্রেসক্লাব সভাপতিসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে সদর থানা চত্ত্বরে পুলিশের প্যারেডগ্রাউন্ড ও ৱ্যাকেট খেলার কোর্ট উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার।