পুলিশের খুনি সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি : লাশ নিয়ে জামায়াত-শিবিরের মিছিল

সরোজগঞ্জে জানাজায় উপচে পড়া মুসল্লি : প্রতিবাদসভায় বিএনপিসহ জোট নেতাদের অংশগ্রহণ : মসজিদে দোয়া মাহফিল

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল আজ : আগামীকাল রোববার আধাবেলা হরতাল

 

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশের খুনি সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ও ছাত্রশিবিরের নিহত কর্মী রফিকুল ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনার মধ্যদিয়ে বেদনা বিধুর পরিবেশে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়া ঈদগা কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে সকাল সাড়ে ন’টার দিকে লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিকটজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। লাশ নিয়ে ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মিছিল শুরু করে। মিছিল সহকারে লাশ নেয়া হয় বোয়ালিয়া গ্রামে। আগে পরে ছিলো পর্যাপ্ত পুলিশ। লাশ হস্তান্তরের সময় সদর চুয়াডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।

Rofiqul Islam Shibir

লাশ নেয়ার সময় সরোজগঞ্জ বাজারে দু দফা মিছিল করা হয়। সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়মাঠে জানাজার আয়োজন করা হয়। সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদসভা। সভায় ছাত্রশিবির, জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি নিহত রফিকুলের দরিদ্র করিমনচালক পিতা দেলোয়ার হোসেন এবং ছোট ভাই রানা উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। দাফন শেষে বাদ জুম্মা মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আজ ছাত্রশিবির চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা করবে। আগামীকাল রোববার এ জেলাগুলোতে সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় অতিরিক্ত পুলিশ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে রদবদল করার খবর পাওয়া গেছে।

ছাত্রশিবির এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিবিরের উদ্যোগে বিকেল তিনটার দিকে দর্শনায় আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশের অতর্কিত গুলিবর্ষণে শিবিরের সাথী চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র রফিকুল ইসলাম (২১) নিহত হয়। নিহত রফিকুলের লাশ গতকাল শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, ওলামা পরিষদের আহ্বায়ক মাও. আবুজার ফারুকী, জামায়াত নেতা ডা. আহমদ জালাল, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, মেহেরপুর জেলা শিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহ জেলা শিবির সভাপতি শেখ শাহজাহান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারি আসাদুল্লাহ, কুষ্টিয়া শহর সভাপতি সোহেল রানা, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা আমির আব্দুর রউফ, শিবিরের কেন্দ্রীয় মাদরাসা বিষয়ক সম্পাদক মহিউদ্দীন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মতিন শেখ, শহীদ রফিকুলের পিতা মো. দেলোয়ার হোসেন, ছোট ভাই রানা, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি রুহুল আমীন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল হক মালিক, চুয়াডাঙ্গা পৌর কাউন্সিলর খুলনা বিভাগীয় কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি প্রমুখ।

Shibir News

সমাবেশে বক্তারা ক্ষমতাসীন দলের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের অর্থে পালিত পুলিশবাহিনী এখন পুলিশলীগে পরিণত হয়েছে। যে কারণে গতকাল দর্শনায় শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই অর্ধকিলোমিটার পথ তেড়ে এনে পাখির মতো গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

জেলা আমির আনোয়ারুল হক মালিক বলেন-বর্তমান পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ আমাদের সাথে কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন। ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার এসপিকে জনগণের টাকায় বেতন না নিয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা উচিত।

নিহত রফিকুল ইসলামের পিতা চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়ার করিমনচালক দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, এক ছেলে হারিয়েছি, হাজার ছেলে পেয়েছি। আমি গর্বিত সন্তানের পিতা। আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। তিনি জনতার কাছে প্রশ্ন তুলে বলেন, একমাত্র আশার প্রদীপটি কোন অপরাধে শহীদ করা হলো? তিনি তার ছেলে ও পরিবারের জন্য সকলের নিকট দোয়া চান। পরে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মতিন শহীদ পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় শহীদের একমাত্র ভাই রানা বারবার চিৎকার করে মুর্ছা যেতে থাকে। জানাজা শেষে বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে রফিকুলের লাশ তার গ্রামের বাড়ি বোয়ালিয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে বেদনা বিধুর পরিবেশে দাফন করা হয়। এ সময় রফিকুলের মা ও নিকটজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

গতপরশু ঘটনার পর রাতে জানা যায়, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবীবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ওসির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাকে ওইদিন সকালেই চুয়াডাঙ্গা কোর্টে বদলি করা হয়েছে। এদিকে রফিকুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ এবং পরিবার উভয়ের পক্ষ থেকে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছিলো বলে জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়া গ্রামের দোলোয়ার হোসেন বর্তমানে করিমনচালক। তার দু ছেলের মধ্যে রফিকুল বড়। সে কলেজছাত্র ছিলো। তার ছোট ভাই রানা টাইলস্ মিস্ত্রির কাজ করে। গ্রামের সাধারণ মানুষ রফিকুলকে ভদ্র বলেই জানতো। তবে সে যে রাজনীতি করতো তা গ্রামের সাধারণ মানুষ জানতো না বলেই জানিয়েছেন তারা।

Shibir News-2

লাশ নেয়ার সময় এবং লাশ নিয়ে মিছিলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে আশঙ্কায় গতকাল শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের নিকট তুলে দেয়া হয়। লাশ নেয়া হয় একটি পিকআপে। স্লোগানে ভারী হয়ে ওঠে রাজপথ। পুলিশের খুনি সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিই ছিলো মূল দাবি। লাশবহন করা পিকআপ যখন সরোজগঞ্জের দিকে ছুটতে থাকে, তখন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের নেতা কর্মীরা গাড়িবহরে যোগ দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও বিজিবিসহ ৱ্যাবের ছিলো সতর্ক দৃষ্টি। চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার নওশের আলী, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি তদারকি করেন। শাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও ডিএসবির নজরদারিও ছিলো।

জেলা ছাত্রশিবির এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জেলা সভাপতি হাফেজ বেলাল হুসাইনের সভাপত্বিতে সেক্রেটারি তরিকুল ইসলামের সহোযাগিতায় জানাজাপূর্ব সমাবেশটি পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সহকারী সেক্রেটারি মো. রুহুল আমীন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরি পরিষদের সদস্য কেন্দ্রীয় মাদরাসা ছাত্রআন্দোলন সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় টিম সদস্য আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়ক মাও. আব্দুল মতিন, জেলা আমির মো. আনোয়ারুল হক মালিক, নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক, ঝিনাইদহ শহর ছাত্রশিবির সভাপতি ইমরুল ইসলাম পারভেজ, জেলা সভাপতি শেখ শাহাজালাল, জেলা সভাপতি রেজাউল করিম নয়ন, মেহেরপুর জেলা সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম,  চুয়াডাঙ্গা জেলা শিবিরের  সাবেক সভাপতি মো. মফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দার, অ্যাড. আসাদুজ্জামান, নুর মোহাম্মদ হুসাইন টিপু, মো. আবুল কালাম আজাদ, জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি মাও. আজিজুর রহমান, জীবননগর থানা আমির মো. খলিলুর রহমান, দামুড়হুদা থানা আমির মো. নায়েব আলী, চুয়াডাঙ্গা সদর থানা আমির আব্দুর রউফ। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রফিকুল ইসলামের লাশের জানাজা শেষে ১২টার দিকে বোয়ালিয়া ঈদগা কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর বোয়ালিয়া জামে মসজিদে ও শহীদের বাড়িতে রুহের মাগফেরাত কামনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দোয়া মাহফিল করা হয়।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের সাথে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে নিহত শিবিরকর্মী রফিকুল ইসলামের স্মরণে মেহেরপুর ছাত্রশিবিরের কার্যালয়ে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে গতকাল গতকাল শুক্রবার বাদ আসর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন- জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বর্তমান সেক্রেটারি সাব্বির আহমেদ, শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু সাঈদ, জেলা ছাত্রশিবিরের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। পরে সেখানে নিহত শিবিরকর্মী রফিকুল ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।