পুলিশের জন্য অত্যাধুনিক শব্দযান আর টিয়ার গ্যাস লঞ্চার আসছে

স্টাফ রিপোর্টার: দাঙ্গাসন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বের অত্যাধুনিক সব ধরনের প্রযুক্তিব্যবহারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি লং রেঞ্জ একুস্টিকডিভাইসসহ আরও সাত ধরনের সরঞ্জাম আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশেপৌঁছেছে মাল্টিপল টিয়ারগ্যাস লঞ্চার। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, নিকটভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে, যাঅতীতের তুলনায় বহুমাত্রিক নেয়ার সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে পুলিশও তার ব্যাপকপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসব শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পুলিশেরনির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অনেক সময় শব্দ প্রয়োগই অস্ত্রের চেয়ে বেশিশক্তিশালী। তাই হৃদপিণ্ড কাঁপানো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শব্দ যন্ত্র ‘একুস্টিকডিভাইস’ আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদেরজন্য এই শব্দ যন্ত্র অনেকটা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। জানতেচাইলে বিশিষ্ট নাক, কান গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু শফি আহমেদ আমিনবলেন, মানুষ ৪০ ডিগ্রি ডেসিবেল শব্দে স্বাভাবিকভাবে শুনতে পায়।এই মাত্রা ৯০’র ওপরে উঠে গেলেই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এক প্রশ্নেরজবাবে তিনি বলেন, একটি বিমান উড়ে গেলেই তো মানুষের অস্বস্তি বোধ হয়। উচ্চশব্দে গাড়ির হর্ন বাজলেও আমাদের সহ্য হয় না।

যেসব সরঞ্জাম আসছে: পুলিশসূত্র জানায়, দাঙ্গা সন্ত্রাস দমনে লং রেঞ্জ একুস্টিক ডিভাইস, ক্রিসসাব-মেশিনগান, ভিডিও স্ট্রিমিংযুক্ত লেভেল থ্রি হেলমেট, ইন্টিগ্রেটেডওয়ারলেস সিস্টেম, মোবাইল কমিউনিকেশন কমান্ড কোস্ট, বুলেট প্রুফ কেস্ট ওএরিয়া সার্ভিল্যান্স।এর মধ্যে লং রেঞ্জ একুস্টিক ডিভাইসের কাজ হবেভীতিকর সাইরেন তৈরি করে সন্ত্রাস ও দাঙ্গায় লিপ্তদের দ্রুত ছত্রভঙ্গ করা।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, হংকং, থাইল্যান্ড, জর্জিয়া, হন্ডুরাস, পোল্যান্ড ও ইসরাইলে একুস্টিক ডিভাইস ব্যবহৃত হচ্ছে। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র ভারি শব্দের সংমিশ্রণ দিয়ে এ যন্ত্রযান উদ্ভাবন করে ২০০৪সালে। এর অন্তত ৫ বছর পর ২০০৯ সালের ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর একটি বিক্ষোভ দমনেনিউইয়র্ক সিটি পুলিশ সর্বপ্রথম এ ডিভাইস ব্যবহার করে। একই বছরের ২৮ আগস্টব্যাংককের একটি কারখানার কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এটি ব্যবহৃত হয়। ওইবছরই ২২ ও ২৫ সেপ্টেম্বর হন্ডুরাসের সরকারবিরোধী একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গকরতে এ শব্দ যন্ত্রযান ব্যবহার করার তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ১৭জানুয়ারি বার্সেলোনা ও স্পেনের বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এটি ব্যবহারহয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, এ শব্দযানের আওয়াজ একশমিটার এলাকার মধ্যেঅত্যন্ত অসহ্য। সাইরেন বাজানোর পর এ শব্দ যন্ত্রযান সংশ্লিষ্ট আশপাশের ৫০থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে যারা থাকবেন তাদের মাথাসহ শরীরে এক ধরনের যন্ত্রণা অনুভূত হবে।

প্রথম ধাপে ৪টি: ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত হয়েছেবিশ্বের অত্যাধুনিক মাল্টিপল টিয়ারগ্যাস লঞ্চার। পুরনো আমলের গ্যাস গান বাদদিয়ে এবার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ টিয়ারগ্যাস লঞ্চার ব্যবহার করবে পুলিশ।যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এই গ্যাস লঞ্চার পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের জন্য গতসপ্তায় দেশে আনা হয়েছে। প্রথম ধাপে আনা চারটি লঞ্চারের দাম পড়েছে প্রায় ১কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি দেখতে সাধারণ গ্যাসগানের মতো নয়। মূলত এটি একটি ভারিযন্ত্র, যা মাটিতে রেখে ব্যবহার করতে হয়; দেখতে অনেকটা ছোটখাটো বিমানবিধ্বংসী কামানের মতো।

এদিকে মাল্টিপল লঞ্চারে ব্যবহারের জন্য ৭ হাজারটিয়ারগ্যাসসেল আনা হয়েছে। এর প্রতিটির দাম প্রায় দু হাজার টাকা। জানাগেছে, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, বাহরাইন, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, মালাবি, সুদান, গ্রিস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মোনাকো, পানামা, চিলি, লাইবেরিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, সৌদি আরব এবং দুবাই মাল্টিপল গ্যাসলঞ্চার ব্যবহারকারী দেশ।

আধুনিক এ গ্যাস লঞ্চারের প্রধান বৈশিষ্ট্যহচ্ছে- একটি লঞ্চার থেকে পর পর ৩২টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা যাবে। এর গতি ওঝাঁঝও হবে অনেক বেশি। উপপুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এ গ্যাসলঞ্চার সম্পর্কে বলেন, টিয়ারগ্যাস বিস্ফোরণে বর্তমানে যে গানব্যবহার হয়ে থাকে তার নাম গ্যাসগান। আর অত্যাধুনিক যে যন্ত্র আনা হয়েছেসেটি ‘মাল্টিপল লঞ্চার’। এটি দেখতে অনেকটা বড় মেশিনগানের মতো। প্রতিটিলঞ্চারে একবারে ৩২টি শেল ভরে রাখা যায়। এ লঞ্চারের সাহায্যে দু থেকেতিনশ’ মিটার দূরত্বের লক্ষ্যস্থলে টিয়ারগ্যাসসেল নিক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ।প্রতিটি গ্যাসসেল প্লাস্টিকের মোড়কে থাকায় খুব সহজেই শেল বিস্ফোরিত হয়েকাঁদানে গ্যাস ছড়ায়। নিক্ষেপের ৫ থেকে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে শেল বিস্ফোরিত হয়।মেশিনগানের মতো ট্রিগারে প্রতিটি চাপেই অনেকটা গুলির মতোই টিয়ারসেল বেরহবে আর বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হবে। এর প্রতিটি শেলের গ্যাস একই ব্যাসার্ধএলাকা জুড়ে ছড়িয়ে যাবে।

বর্তমানে যে গ্যাসগান ব্যবহার করা হয় সেখানেএকটি শেল মারার পর আবার আরেকটি শেল ভরে নিতে হয়। এতে সময় অপচয় হয় এবং অনেকসময় টিয়ারসেল বিস্ফোরিত হয় না। কিন্তু মাল্টিপল টিয়ার লঞ্চার খুবই উন্নত, এর প্রতিটি শেল বিস্ফোরিত হবে।

এদিকে সূত্র জানায়, আমদানিকৃত নতুনটিয়ারগ্যাস লঞ্চার থেকে বিস্ফোরিত শেলের ধোঁয়ায় নাক, চোখ, মুখমণ্ডল ওগলাসহ চামড়া জ্বালা-যন্ত্রণা হবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত।বর্তমানে ব্যবহৃত টিয়ারসেলের তুলনায় এর সক্ষমতা ও কার্যকারিতা কয়েকগুণবেশি।

পুলিশ সদর দফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মান্ধাতাআমলের টিয়ারগ্যাস গান ব্যবহার এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। অনেক সময় এই শেলেরআঘাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। তিনি বলেন, পুরনো মডেলের গ্যাসগান ব্যবহারেসময়ক্ষেপণ হয় অন্যদিকে এটা ঝুঁকিপূর্ণও। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখাগেছে, দাঙ্গাবাজদের দিকে ছুড়ে মারা অবিস্ফোরিত টিয়ারসেল আবার ওপাশ থেকেপুলিশের দিকেও ছুড়ে মারা হয়। এতে ক্ষেত্র বিশেষে পুলিশও আহত হয়। মাল্টিপলটিয়ারগ্যাস লঞ্চারের সাহায্যে পুলিশ খুব কম সময়ের মধ্যে যে কোনো ধরনেরনাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে পারবে।