পিস্তল উচিয়ে ট্রাক হেলপারকে পেটালেন মেয়রের দুই সঙ্গী ॥ সড়ক অবরোধ

মেহেরপুরে গাংনী পৌর মেয়রের গাড়ির সাইড দেয়া নিয়ে ট্রাক ড্রাইভারের সাথে দ্বন্দ্ব

মেহেরপুর অফিস: বকুল হোসেন (১৮) নামের এক ট্রাক হেলপারের দিকে পিস্তল উঁচিয়ে বেতের লাঠি দিয়ে মারধর করলেন মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার মেয়র আশরাফুল ইসলামের দুই সঙ্গী। আহতাবস্থায় বকুল হোসেনকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়রের গাড়ি ও সবজি বোঝাই ট্রাকের সাইড দেয়া নিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে মেহেরপুর শহরে তাহের ক্লিনিক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কিছু সময় সড়ক অবরোধ করেন। বকুল হোসেন মেহেরপুর শহরের ৯নং ওয়ার্ড গোরস্তানপাড়ার ইছারুল ইসলামের ছেলে ও আমঝুপি গ্রামের খোকন মিয়ার মিনিট্রাকের চালকের সহকারী। তবে ওই হেলপারের বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও অসদাচরণের অভিযোগ করলেন মেয়র আশরাফুল ইসলাম।
হাসপাতালে চিকিৎসারত আহত ট্রাক হেলপার বকুল হোসেন বলেন, সদর উপজেলার শৈলমারী গ্রাম থেকে কিছু সবজি বোঝাই করে গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামে আরও সবজি বোঝাইয়ের জন্য যাচ্ছিলাম। সেখান থেকে চালককে ট্রাকটি হস্তান্তর করার কথা ছিলো। কিন্তু তা না হওয়ায় আমি মিনি ট্রাকটি চালিয়ে মেহেরপুর শহরের বড় বাজার এলাকায় পৌঁছুলে সামনে একটি মাইক্রোবাস দেখতে পায়। বারবার হর্ন দেয়া সত্ত্বেও মাইক্রোবাসটি সাইড দেয়নি। এক পর্যায়ে মাইক্রোবাসটি কলেজ মোড় থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে চলে গেলে আমি সাইড পাই। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক দিয়ে গাড়াডোবের দিকে যাওয়ার পথে ফায়ার সার্ভিস অফিসের কাছাকাছি পৌঁছুলে ওই মাইক্রোবাসটি আমার সামনে আড় করে গতিরোধে বাধ্য করে। তড়িঘড়ি করে ব্রেক কষে দুর্ঘটনা সামাল দেই। এ সময় মাইক্রোবাস থেকে গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম ও তার দুই সঙ্গী নেমে আমার দিকে তেড়ে আসেন। মেয়র আমার দিকে পিস্তল উঁচিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় মেয়রের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ট্রাকে থাকা শ্রমিকদের দিকে শর্টগান তাক করে নড়াচড়া না করার জন্য হুমকি দেন। এ সময় মেয়রের চালক আমাকে বেতের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তারা চলে যান।
এদিকে খবর পেয়ে শ্রমিকদের কয়েকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। মেয়র ও তার সঙ্গীদের বিচারের দাবিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে মালিক-শ্রমিকদের মাঝে। হেলপারকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আশরাফুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বড় বাজার থেকে কলেজমোড় পর্যন্ত অযথা ওই মিনি ট্রাকের চালক হর্ণ বাজিয়ে বিরক্ত করতে থাকে। তাকে সাইড দিয়ে বের করে দিলেও কলেজ মোড় এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকে। আমার গাড়ি নিয়ে গাংনীর দিকে যেতে দেখে সেই মিনি ট্রাকটি স্ট্যার্ট করে বেপরোয়া চালানোর কারণে আমার গাড়িটি দুর্ঘটনায় ঝুঁকিতে পড়ে। গাড়ি থামিয়ে এর প্রতিবাদ করায় ট্রাকের ১০/১২ জন শ্রমিক ধারালো হেঁসো (ধারালো অস্ত্র) হাতে করে আমাদের দিকে তেড়ে আসে। তাদের হাত থেকে বাঁচতেই আমার লাইসেন্সকৃত পিস্তল উঁচিয়ে ধরি।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বকুল হোসেনের হাতে ও পিঠে লাঠির আঘাত রয়েছে। তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তবে জনভোগান্তি মাথায় রেখে সড়ক অবরোধ তুলে দেয়া হয়েছে। মেহেরপুর পৌর মেয়র বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের আশ^াস দিয়েছেন। কাঙ্খিত সমাধান না হলে আইনি ব্যবস্থার দিকে যাব আমরা।
মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলেছেন। বিষয়টি মীমাংসার পথে আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বসে সমাধান করে ফেলা হবে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, মেহেরপুর পৌর মেয়র ও শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। আহত বকুল হোসেনের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি।