পিতার পা ছুঁয়ে ক্ষমা চেয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর দিলেন ৪ ছেলে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: পিতার বয়স একশ পার। বড় ছেলের বয়স? কমপক্ষে পঁচাত্তর। ওই বয়সের বড় ছেলেসহ ৫ ছেলের হাতে মারা খাওয়া পিতার নালিশ পেয়ে ইউএনও যখন উভয়পক্ষকে ডেকে শুনানি শুর করেন, তখন বড় ছেলে পিতার পা ছুয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পিতা ছেলেদের সব কুলাঙ্গারপনা ভুলে একবাক্যেই ক্ষমা করে দেন। ঘটনাটি ঘটে গতকাল বুধবার ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে। ছেলেদের মাফ করে দেন, আর ছেলেরা তাদের পিতাকে জীবনের বাকি দিনগুলোতে পালাক্রমে কীভাবে যত্ন করবেন, খাবার দেবেন সে বিষয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছেন।

জানা গেছে, পাঁচ ছেলের চারজনের হাতেই মার খেয়েছেন শতবর্ষী বাবা জামির উদ্দিন শেখ। মার খেলেও বাবা জামির উদ্দিন শেখ সন্তানদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উসমান গনির অফিসে সন্তানদের উপস্থিতিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি সন্তানদের ক্ষমা করে দেন। জামির উদ্দিন শেখের বাড়ি শৈলকুপার বিপ্র বগদিয়া গ্রামে। উসমান গনির অফিসকক্ষে সকালে শুনানির একপর্যায়ে সন্তানেরা তাদের ভুল বুঝতে পারেন। বড় ছেলে সাহেব আলী বাবার পা ধরে ক্ষমা চান। ছেলেরা বাবার সাথে আর কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করবেন না বলে অঙ্গীকারও করেন। তারা এখন থেকে পিতার ভরণপোষণ, চিকিৎসার খরচসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন। দ্বিতীয় সন্তান ঢাকায় অবস্থান করায় তাকে ফোনে অবহিত করা হলে তিনি সব বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

শুনানির পর নিম্নোক্ত বিষয়ে আপসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়: *ছোট ছেলের সংসার না থাকায় এখন থেকে বাবা চার ছেলের বাড়িতে এক মাস করে অবস্থান করবেন। এ সময় অবস্থানকালে পিতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পিতার সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। *সন্তানের বাড়িতে অবস্থানকালে পিতার যাবতীয় ভরণপোষণ ও যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। *পিতাকে মামলা পরিচালনা বা আইনের আশ্রয় গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধা প্রদান করা যাবে না। *পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে তিনি তা সন্তানকে অবহিত করবেন। সন্তান এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। * শুনানিতে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এবং আবেদনকারীর ভাতিজা গোলাম রসুল এ বিষয়ে তদারকি করবেন। তারা ইউএনওকে সময়ে সময়ে বিষয়গুলো অবহিত করবেন। *উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে বৃদ্ধ লোকটির বাসস্থান পরিদর্শন করবেন এবং তার অবস্থা ঠিক আছে কি-না, তা যাচাই করবেন। *চার মাস পর ইউএন জামির উদ্দিন শেখের সাথে কথা বলবেন। কোন ছেলে বেশি যত্ন করেছেন, তা তিনি ইউএনওকে অবহিত করবেন। *কোনো শর্ত কোনো সন্তান অমান্য করলে বাদী পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন-২০১৩ বা অন্য কোনো উপযুক্ত আইনের আশ্রয় গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে পিতাকে দায়ী করা যাবে না। এসব শর্ত ছেলেরা বিনা বাক্যে মেনে নিয়েছেন।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বাদী জামির উদ্দিন এ মাসের ৮ তারিখে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গণশুনানিতে উপস্থিত হন। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক টেলিফোনে আমাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাদী জামির উদ্দিন চলতি মাসের ১০ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে উপস্থিত হয়ে সন্তানদের বিরুদ্ধে মারধর ও ভরণপোষণ না দেয়ার অভিযোগ দেন। গতকাল বুধবার সব সন্তানের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। শুনানিতে ছেলেরা পিতার সাথে আর কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। পিতার ভরণপোষণ, চিকিৎসার খরচসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন তারা। শুনানিতে কয়েকটি বিষয়ে আপসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়। ‘পাঁচ ছেলের চারজনের হাতেই মার খেয়েছেন শতবর্ষী বাবা’ শীর্ষক এক খবর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপরই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক শৈলকুপার ইউএনওকে ফোন করে বিস্তারিত জানতে চান। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।