পাখিদের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে বাঁশ ও বেতের বাগান

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার শিবনগর ডিসি ইকোপার্কটি নতুন সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে। কুমির, বক, দোয়েল, জিরাফ, মাছরাঙা, ব্যাঙ, বাঘ, হরিণসহ কৃত্রিম নানা পশুপাখির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ-বনজ ও ঔষধি গাছ এবং রঙ বে রঙের বাহারি সব ফুল বাগান তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। পার্কের মধ্যেই পাখিদের অভয়ারণ্যের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে বাঁশ ও বেতের বাগান। ৭৬ একর জলাশয়ের লেকের সাথে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা ইকোপার্কটি প্রকৃতি প্রেমি মানুষের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে পার্কে গড়ে তোলা হচ্ছে পাখি ও বন্য প্রাণীদের অভয়ারণ্য। শতবর্ষী তালের সারি, পল্লব ঘেরা আম্রকানন আর বিশালাকৃতির লেক মিলে পার্কটি হয়ে উঠেছে অসাধারণ এক পর্যটন কেন্দ্র। যা বৃদ্ধি করেছে জেলার সম্মান ও আকর্ষণ। সৌন্দর্যের  লীলাভূমি আজকের এই ইকোপার্কে প্রতিদিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটছে। পার্কের লেকের পানিতে সাম্পানে চড়ে আগত পর্যটকগণ আনন্দ উপভোগ করছেন। শিবনগর ডিসি ইকোপার্কের পাশাপাশি চিৎলা আশ্রায়ণে এবং দর্শনা মেমনগরেও গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক। এ দুটি পার্কে ইতোমধ্যেই লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে পার্ক দুটি।

                নদীয়া এস্টেটের জমিদার শ্রী নফর চন্দ্র পাল চৌধুরী ১৮৯৫ সালে দামুড়হুদা উপজেলার শিবনগরের বৃহৎ এলাকা জুড়ে আম, কাঁঠাল, ও লিচু গাছের সমন্বয়ে একটি বাগান তৈরি করেন। বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষে প্রবেশ পথের দু ধারে সারিবদ্ধভাবে শ শ তাল গাছ রোপণ করেন।  নফর চন্দ্রপাল চৌধুরী ১৯৪০ সালে পরলোকগমন করেন। তার ২ পুত্র ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে বাগানটি সরকারের মালিকানায় চলে আসে। বহু বছর পরিচর্যার অভাবে বাগানটি প্রায় বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ে এবং ঘন জঙ্গল সৃষ্টি হয়ে সর্বহারা পার্টির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। ২০১৪ সালের শুরুতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাগান ও জলাশয়কে নুতনভাবে সাজিয়ে সরকারি সম্পদ রক্ষা ও সরকারি আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বাগানটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ৭১ প্রজাতির দশ হাজারের অধিক দেশি-বিদেশি ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে ১২৮ দশমিক ২৩ একর জমিতে গড়ে তোলা হয় ডিসি ইকোপার্ক। এরপর ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন ও খুলনা বিভাগের দশ জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ ইকোপার্কের গেস্ট হাউজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম পার্কের মিনি চিড়িয়াখানা উদ্বোধন করেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি হাজি আলী আজগার টগর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজুসহ বেশকিছু দেশবরেণ্য মানুষের পদধুলী পড়েছে এ পার্কে। প্রত্যেকে রোপণ করেছেন একটি করে গাছের চারা। ৭৬ একর জলাশয়ের লেকের সাথে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা ইকোপার্কটি প্রকৃতি প্রেমি মানুষের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে পার্কে গড়ে তোলা হচ্ছে পাখি ও বন্য প্রাণীদের অভয়ারণ্য।

                যার অক্লান্ত পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়ে উঠছে এ ইকোপার্ক তিনি হলেন বৃক্ষপ্রেমিক দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান। তিনি বলেন, গাছ লাগানোটা আমার নেশা বা সখ। খালি জায়গা পেলেই আমার গাছ লাগাতে ইচ্ছে করে। আমি সকলকে বলবো আপনার বাড়ির ভেতরেও যদি খালি জায়গা পড়ে থাকে তাহলে সেখানেও গাছ লাগান। কারণ গাছই আমাদের পরম বন্ধু।

শিবনগর ডিসি ইকোপার্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আদর্শ একটি বিনোদন কেন্দ্র এবং প্রসিদ্ধ ও বিলুপ্তপ্রায় সকল ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ এবং প্রাণীকূলের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে এ ইকোপার্কটি। এ পার্কে  ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জাতের আম, কাঠাল, লিচু, কুল, নারিকেল, সুপারি, তাল, বাবলা, বেল, পেয়ারা, জাম্বুরা, জাম, নিম, কদবেল, আমলকি, অর্জুন, আমড়া, বাসক, জগডুমুর, জিবলী, শিলকড়াই, খেজুর, লেবু, ছাতিয়ান, ইপিলইপিল, হিজল, চেরী, নাগেশ্বর, চন্দন, হরতকি, বহেরা, তমাল, বোতলব্রাস, জয়ফল, সোনালু, জারুল, কাঠবাদাম, কাঞ্চন, পবনঝাউ, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, গামারী, কাঠ গোলাপ, তেঁতুল, এরিকা পাম, কোকোনাট লেবু, পিচফল, চায়না টগর, গোলাপ, ঝাউ, বিলাতি গাব, জয়তুন, আগর, মহুয়া, রঙ্গন, উইপিং দেবদারু, লটকন, কফি, চা, সাতকড়া, কমলা লেবু, ছফেদা, কামরাঙ্গা, অশোক, বাঁশ, বেতসহ বাহারী রঙের বিভিন্ন ফুলের বাগান প্রস্তুত করা হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শিবনগর ডিসি ইকোপার্কটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস।

                ইউএনও ফরিদুর রহমান আরও জানান, চিৎলা আশ্রায়ণের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইকোপার্ক। নাম দেয়া হয়েছে চিৎলা ইকোপার্ক। পার্কে ইতোমধ্যেই ৬৫টি আম, ৫টি খেজুর, ৫টি লিচু এবং অন্যান্য আরও ৫টি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া দর্শনার মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দু একর জমিতে ইকোপার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। নাম দেয়া হয়েছে মেমনগর মেমরী ইকোপার্ক। এখানে আম, লেবু, লিচু, নিমসহ অন্যান্য আরও গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে পার্ক দুটি। এছাড়া ঢাকা গাজিপুর থেকে ৫৬ প্রজাতির ১ হাজার ঔষধি গাছের চারা আনা হচ্ছে। চিৎলা এবং মেমনগর এপার্ক  দুটিও দৃষ্টিনন্দন করতে যা যা করার তা পর্যায়ক্রমে করা হবে বলে জানা গেছ।