পাঁচ সচিব ও যুগ্ম সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল : তালিকা কিছু স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে বর্তমানে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় নিয়োজিত সরকারের একজন সাবেক সচিব, কর্মরত তিন সচিব ও এক যুগ্ম সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ এবং তাদের  নাম অর্ন্তভুক্ত করে প্রকাশিত গেজেট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া লাল মুক্তিবার্তা এবং ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নাম ছাড়া অন্য যেসব নামে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা রয়েছে তাও স্থগিত করা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে পৃথক গেজেট ও একটি প্রশাসনিক আদেশ জারি করবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতের কাছ থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণ তালিকায় ১ লাখ ৪৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। এ সংখ্যা ছাড়া বাকিদের সনদ স্থগিত থাকবে। আগামী ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে।

গতকাল রোববার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের দ্বিতীয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেসব ব্যক্তির সনদ ও মুক্তযোদ্ধার নামসম্বলিত গেজেট বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান ও (বর্তমানে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ততে বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান), স্বাস্থ্যসচিব এম নিয়াজউদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব একেএম আমির হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী (বর্তমানে ওএসডি) এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার। তবে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান একই কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয় জামুকা। কিন্তু অপর চারজনের ক্ষেত্রে এ সুযোগ রাখা হয়নি। সনদ বাতিল হওয়াদের মধ্যে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান আপিল করতে পারবেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সনদ নেয়ার জন্য তিনি তিনটি শর্তের একটি পূরণ করেছেন। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আপিল করতে পারবেন তিনি। পক্ষান্তরে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, তিনি আপিলের সুযোগ নেবেন কি-না সেটি ভেবে দেখবেন। তার দাবি, তিনি কোন অনৈতিক কাজ করেননি। সরকারের দেয়া চার শর্তের যে কোন একটি পূরণ করলেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাওয়া যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল তিনি সেই সুযোগ নিয়েছেন মাত্র। অন্য চার কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ার বিষয়ে কোনো আবেদনই করেননি বলে মন্ত্রী জানান।

প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, এটি জঘন্য অপরাধ। এ ধরনের ঘটনা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। তারা মনে করেন, জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে তারা সনদ নিয়েছেন। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ধরনের কাজ অশোভন ও নৈতিকতারস্খলন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ যার সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুতি।

ওইসব কর্মকর্তা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ই পারতো তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা করতে। কিন্তু তারা সেটি ঠেলে দিচ্ছে জনপ্রশাসনের দিকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচিত সনদ বাতিলের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত পাওয়ার সাথে সাথে তাদের সবাইকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া এবং বিভাগীয় মামলা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। তারা বলেন, ব্যবস্থা না নিলে প্রশাসনকেই এই কেলেঙ্কারির দায় বহন করে বেড়াতে হবে। এতে প্রশাসনের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১৮২ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভুয়া চিহ্নিত করে তা বাতিল করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া এসব কর্মকর্তার অবসরত্তোর ভাতা (পেনশন) স্থগিত করার জন্য সিভিল অডিট অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছে। সিভিল অডিট অধিদপ্তর কে কত টাকা নিয়েছেন তা যাচাই-বাছাই করে গৃহীত টাকা কেটে নিচ্ছে।