পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে লালুপ্রসাদ জেলে

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বিহারে ৯৫০ কোটি রুপির পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব। গতকাল সোমবার বেলায় রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অভিযুক্ত নেতাকে বিরসামুন্ডা জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর জেল থেকে আদালতের মধ্যে ভিডিও কনফারেনসের মাধ্যমে সাবেক রেলমন্ত্রীকে তার সাজার মেয়াদ জানিয়ে দেয়া হবে। আইনজীবীদের অনুমান, কমপক্ষে চার বছর কারাদণ্ড হবেই লালুপ্রসাদের। এদিকে আগস্টে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য দোষী সাব্যস্ত হলেই তার সংসদ সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে এবং তারপরই নির্বাচন কমিশন আবার নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। শীর্ষ আদালতের সেই নির্দেশ অনুযায়ী, লালুপ্রসাদ যাদবের সংসদ সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেল। আগামী ৬ বছর তিনি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর শাস্তি নিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকেই লালুপ্রসাদের সাজা নিয়ে রাঁচি আদালতে শুরু হবে সওয়াল-জবাব। ইউপিএ-২ সরকারের শরিক আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদের শাস্তি নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র জানিয়েছেন, আইন-আইনের পথেই চলবে। বিরোধী দল বিজেপি রায়কে স্বাগত জানিয়েছে রাঁচি আদালের দোষী সাব্যস্ত করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লালুর ক্রিকেটার পুত্র তেজস্বী যাদব বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালুসহ আরও ৪৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক প্রভাসকুমার সিংয়ের এজলাস। দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বিহারের আর এক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের জগন্নাথ মিশ্রও। দোষী সাব্যস্তদের মধ্যে ছয়জন রাজনীতিক, চারজন আইএএস ও অন্যরা সরকারি আমলা। এরই মধ্যে এদিন দোষী সাব্যস্ত ৪ জনকে তিন বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি শুনিয়েছে বিশেষ আদালত। অন্যদিকে আগামী ৩ অক্টোবর লালুপ্রসাদ যাদব ও জগন্নাথ মিশ্রসহ যারা পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তাদের ৪ বছরের বেশি কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হবে। লালুপ্রসাদের ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এমনকি এ মামলায় আরজেডি সুপ্রিমোকে কোনোমতেই জামিন দেয়া হবে না বলে স্পষ্ট জানান তারা। ১৯৯০ সাল থেকে টানা সাত বছর অবিভক্ত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এবং পরে ২০০৪ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর ভারতের রেলমন্ত্রী ছিলেন লালুপ্রসাদ। তার মুখ্যমন্ত্রিত্বের আমলেই পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি হয়। নব্বইয়ের দশকে চাইবাসা ট্রেজারি থেকে বেআইনিভাবে ৩৭ কোটি ৭০ লাখ রুপি তুলে নেয়ার অভিযোগ ওঠে লালুর বিরুদ্ধে। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে লালু ও জগন্নাথসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। সে সময় অবিভক্ত বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তাল হয়েছিলো গোটা দেশ। লোপাট হয়েছিলো প্রায় ৯৫০ কোটি রুপি। গবাদি পশুখাদ্য কেনার নামে ভুয়া বিল দেখিয়ে চাইবাসা ট্রেজারি থেকেও ৩৭ কোটি ৭০ রুপি তুলে নেন লালু। পরে পাটনা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছিলো। সকালেই রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতে পৌঁছে যান লালুপ্রসাদ যাদব। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। তবে এদিনই যে তার সংসদ সদস্যপদ খারিজ করে জেলে নিয়ে যাওয়া হবে কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। এদিকে কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা আদালতের বাইরে এদিন আরজেডি সমর্থকরা ভিড় করেছিলেন। তাদের শীর্ষ নেতাকে রাঁচিতে এসে এভাবে বিপাকে পড়তে হবে ভাবতে পারেননি তারাও। ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশুখাদ্য মামলা রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই সময় আদালতে আত্মসমর্পণের পরে কাঁকেতে একটি অতিথি নিবাসকে জেল হিসেবে ব্যবহার করে ভিআইপি স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে লালুকে রাখা হয়েছিলো। তবে বিহারের এক সময়ের সর্বময় কর্তা যে এবার জেলে কোনো স্বাচ্ছন্দ্যই পাবেন না তা জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারাও। এদিন দোষী সাব্যস্ত করার পরই যেভাবে তড়িঘড়ি ৬৫ বছরের লালুপ্রসাদকে বিরসা মুণ্ডা জেলে নিয়ে যাওয়া হলো তা থেকে স্পষ্ট, খুব সহজে তিনি এবার মুক্তি পাচ্ছেন না। এরপর লালুপ্রসাদ ফের সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন কি না তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে একাধিকবার জেলে গিয়েছিলেন আরজেডি প্রধান। সেসময় তার স্ত্রী রাবড়ি দেবী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ সামলেছিলেন। তবে পেছন থেকে শাসন করতেন লালু স্বয়ং। এদিনের ঘটনার পর বিহারে আরজেডি দল যে ঘোর সংকটে পড়বে তা নিয়েও দ্বিধা নেই। আর আগামী লোকসভা নির্বাচনে লাভ হবে বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের। গত সপ্তাহেও অর্ডিন্যান্স প্রসঙ্গে বিজেপির নেতারা কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলো। বিজেপির অভিযোগ ছিলো, অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে রাহুল লালুপ্রসাদ যাদবকে বাঁচাতে চাইছেন। কিন্তু এদিনের রায়ের পর আপাতত দৃষ্টিতে রাহুল গান্ধীই জিতলেন। আরও চাপে পড়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন দেখার বিষয় এ রায়ের পর এবার লোকসভা নির্বাচনে লালুপ্রসাদের আরজেডি আদৌ কংগ্রেসের সাথে জোট রাখে কি-না।