পদত্যাগ করুনতা না হলে মানুষ রাস্তায় নামবে : খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগেচাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদসহ র‌্যাবের সাবেক তিনকর্মকর্তাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগমখালেদা জিয়া। হাইকোর্ট আদেশ দেয়ার পরবর্তী তিনদিনেও তাদের গ্রেফতার নাকরায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, তাদেরকে জেলে পাঠাতে হবে, সর্বোচ্চশাস্তি দাবি করছি, দিতে হবে। তাদেরকে গ্রেফতারে ধানাই-পানাইয়েই প্রমাণ হয়, এই সাত খুনের সাথে সরকার জড়িত। সরকারই র‌্যাবকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে এই খুনকরিয়েছে।

খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, অপহরণ ও সাত খুনের ঘটনারপ্রধান সন্দেহভাজন নূর হোসেনকে র‌্যাবই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।গুম-খুন-অপহরণের দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে সরকারের প্রতি আহ্বানজানিয়ে তিনি বলেন, না হলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। জনগণই তখন এ সরকারেরপতন ঘটাবে।

অপহরণের পরে খুন হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনেরওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইন-জীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনেরপরিবার-স্বজনদের সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানাতে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবারসাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

গতকাল সকালসোয়া ১১টার দিকে খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসা থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশেরওনা হন। নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে দুপুর ১২টার দিকে দলীয় নেতাদের নিয়ে প্রথমেসিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়ায় কাউন্সিলর নজরুলের বাড়িতে যান তিনি।সেখানে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা জানানোর পর বিএনপিচেয়ারপারসন সাংবাদিকদের বলেন, র‌্যাব এখন জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারাটাকার বিনিময়ে মানুষকে গুম-খুন করছে, এরা মানুষ খেকো। এরা রক্তচোষা। এরাযতোদিন থাকবে ততোদিন মানুষকে গুম করবে। এদের আর প্রয়োজন নেই। র‌্যাব যতোদিনথাকবে ততোদিন মানুষের মনে আতঙ্ক থাকবে। মানুষ শান্তিতে থাকবে না। তাইঅবিলম্বে এই বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে। না হলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে জনগণরাস্তায় নেমে আসবে। এ সময় বিএনপি প্রধান বলেন, একজন খুনিকে দেশের বাইরেপাঠিয়ে দিয়েছে, র‌্যাব এতো সাহস পায় কোথায়?

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও এই খুনেরদায়-দায়িত্ব নিতে হবে, তিনি দায় এড়াতে পারেন না। নিহতদের পরিবার-স্বজনদেরধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, অপেক্ষা করুন, একদিন এর বিচারহবেই। এ সময় উপস্থিত থাকা নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যানকে দেখিয়ে খালেদাজিয়া বলেন, তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার কিছু হলে পরিণতি ভালো হবে না।নজরুলের পরিবারের কিছু হলে দেশে আগুন জ্বলবে। নজরুলের শ্বশুরকে তিনি বলেনআপনি নির্ভয়ে বলে যান, আমরা আপনার পাশে আছি।

এ সময় নজরুলের বাড়িতেতার সাথে নিহত যুবলীগ কর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন, তার গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহসভাপতিতাজুল ইসলাম ও যুবলীগকর্মী সিরাজুল ইসলাম লিটনের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন।

চন্দন সরকারের বাড়িতে খালেদা জিয়া: নজরুলেরবাড়িতে প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থান শেষে খালেদা জিয়া বেলা পৌনে একটায় জালকুড়িবৃষ্টিধারা এলাকায় আইনজীবী চন্দন সরকারের বাসায় যান। সেখানে তার গাড়িচালকনিহত মো. ইব্রাহিমের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। উভয় স্থানেই খালেদাজিয়া খুনের শিকার প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে ধরে, মাথায় হাতবুলিয়ে ও চোখের পানি মুছে দিয়ে সান্ত্বনা ও সহমর্মিতা জানান।

চন্দনসরকারের বাড়িতে দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন চেষ্টা চলছে। সাতখুনের ঘটনার তদন্তকাজে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, খুনের সাথের‌্যাব ওনূর হোসেন জড়িত। এ র‌্যাব প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই আছে। এ র‌্যাব এখন যাকরছে, তা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশেপ্রতিদিনই গুম, খুন ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে। সরকার খুনিদের মদদ দিচ্ছে। তারার্যাবকে দিয়ে হত্যা ও গুমের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকার কোনো খুনিকেগ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ সরকার অবৈধ। তবুও সরকারকে বলছি, খুনিদেরঅবিলম্বে গ্রেফতার করুন।

সাত খুনের বিচারের দাবিতেনারায়ণগঞ্জবাসীকে আন্দোলনে নামতে বলার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চারহতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এই খুনের বিচারহতেই হবে। এ সরকার এই খুনের বিচার করতে না পারলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিচারকরবে। তার দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, খুন-গুম বন্ধে সরকারসম্পূর্ণ ব্যর্থহয়েছে।

বেলা ২টার কিছুক্ষণ আগে নারায়ণগঞ্জ থেকেঢাকার পথে রওনা হন খালেদা জিয়া। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টারমওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, আব্দুসসালাম, আমানউল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও নারায়ণগঞ্জ জেলাবিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার প্রমুখ তার সাথে ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের আগমনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ।প্রসঙ্গতঅপহৃত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনের লাশউদ্ধারের ১৩ দিন পর নারায়ণগঞ্জ গেলেন খালেদা জিয়া। তিনি নারায়ণঞ্জে আজ বুধবারসমাবেশ করতে চাইলেও সিটি করপোরেশন অনুমতি দেয়নি। যার কারণে একদিন আগে গিয়েনিহতদের পরিবারের সাথে কথা বলেন তিনি।

টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করার অভিযোগবিএনপিচেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করার সময় নারায়ণগঞ্জেরফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারবন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।