পথে পথে দুখিনী মা…

তাছির আহমেদ: মা আমার সারাদিন পথে পথে ফেরি করে বহু কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালায়। বাবা মারা গেছে প্রায় ৫ বছর আগে। স্বামীহারা দুখিনী এ মায়ের নিদারুণ কষ্ট আমাদের ভাবিয়ে তোলে। আক্ষেপ করে তাই বলতে হচ্ছে মা আমার পথে পথে।

গতকাল কাকডাকা ভোরে দামুড়হুদা বাসস্টান্ডের অদূরে ফিলিং স্টেশনের সামনে এভাবেই দেখা মেলে এ দুখিনী মায়ের সাথে। আশ্বিনের হালকা হালকা শীতে এলাকার মানুষ যখন শরীরের ফিটনেস ও ডায়াবেটিস সাভাবিক রাখতে এ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি নিয়ে ব্যস্ত; ঠিক তখন এ দুখিনী মা তার এক হাতে বাঁশের তৈরি দুটি ঝাঁপি ও পাঁচটি কুলা এবং আরেক হাতে তিনটি ঝাঁপি নিয়ে বিক্রির উদ্দেশে প্রায় দু কি.মি. পথ জয়রামপুর গ্রামের দিকে পায়ে হেঁটে ছুটছে। কাঁচা বাঁশের তৈরি এ হস্তশিল্পগুলোর ভার সইতে দুখিনী মায়ের তীব্র কষ্ট দেখে, এভাবে বহনের উদ্দেশ্য কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা এই কয়টা বিক্রি করে আর কয় টাকা লাভ হবে? তাছাড়া ভ্যান বা অন্য কোনো যানে নিলে এগুলোর ভাড়া দিতে হবে। বাঁকে করে কাঁধে তো নেয়া যায় না। কি নাম তোমার? সুষমা দাস। স্বামীর নাম- উনি মারা গেছেন প্রায় ৫ বছর আগে। সন্তানাদি নেই? আছে বড় ছেলে তার সংসার নিয়ে কালীগঞ্জে থাকে। ছোট ছেলে অবিবাহিত দু হাজার টাকা বেতনের একটি দামুড়হুদার এক আড়তের কর্মচারী। ছোট মেয়েটি নবম শ্রেণিতে পড়ে।

সন্ধ্যায় দুখিনী মায়ের সাথে তার আবাসস্থলে দেখা করতে গেলে চোখে পড়ে টিনের ছাউনি আর চাটায় দিয়ে ঘেরা জরাজীর্ণ এক কামরার ঘর। লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত করা স্বপ্নের বিভোরে থাকা সুন্দরি মেয়েটি সাংবাদিকের আগমন চিনতে পেরে মুখোমুখি দাঁড়ায়। মায়ের সাথে একটু কথা বলতাম ডেকে দিবে? অপূর্ব মিষ্টি চেহারার এ মেয়েটি দাম্ভিকের সাথে বলা শুরু করেন ওসব পেপারে টেপারে দেয়ার দরকার নেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নানা অজুহাতেও কাজ হলো না। দুখিনী মা নিরুদেশ। মিনিট ১৫ পরে মাকে সাথে নিয়ে মেয়েটি সাংবাদিকের বাড়িতে হাজির। খোঁজ করেন সাংবাদিকের। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে কারণ জানা যায় এসব খবর পেপারে টেপারে দিলে সন্তানদের মনে লাগতে পারে। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি প্রিয় পাঠক কিছু মনে করবেন না দুখিনী মা আমার পথে পথে।