নৌকার ভেতরেই প্রথম গুলি করে সলোক ডাঙায় নিয়ে মাথায় গুলি করে ওল্টু

আলমডাঙ্গা গ্রেফতারকৃত নৈশপ্রহরী সলোক আবদারের জিয়া হত্যাকাণ্ডে নিজেদের স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দি

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: নাইটগার্ড সলোক ও আব্দারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যে আলমডাঙ্গার রামদিয়া-কায়েতপাড়া বাঁওড়ের সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য পুরোপুরি উদঘাটিত হলো। বাঁওড়ের ফিশিঙের টাকার অর্ধেকাংশ পাওয়ার লোভের বশবর্তী হয়ে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ওল্টুর  সাথে হত্যাকাণ্ডে যোগ দেয় সকল নৈশপ্রহরী। নৌকার ভেতরেই প্রথম গুলি করে নৈশপ্রহরী সলোক। পরে ধরাধরি করে ডাঙায় নিয়ে গেলে মাথায় ৩টি গুলি করে চরমপন্থি বাহিনি প্রধান ওল্টু। গত ২ মে আদালতে ১৪৪ ধারায় বাঁওড়ের নৈশপ্রহরী আটককৃত সলোক ও আব্দার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকালে এমন তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশসূত্রে  জানা গেছে, গত ১ মে উপজেলার ঘোষবিলা গ্রাম থেকে বাঁওড়ের নৈশপ্রহরী সলোক ও আব্দারকে পুলিশ আটক করে। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা উভয়েই জিয়া হত্যাকাণ্ডের সাথে সমৃক্ত বলে স্বীকার করে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। গতকাল তাদের দুজনকে আদালতে হাজির করতে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। তারা দুজনই প্রায় একই রকম স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানা যায়। আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদানকালে তারা জানায়, বাঁওড় সভাপতি জিয়া হত্যাকাণ্ডের সাথে সকল নৈশপ্রহরী সম্পৃক্ত। ফিশিং’র টাকা ফিফটি ফিফটি ভাগের প্রতিশ্রুতি পেয়ে চরমপন্থি নেতা ওল্টুর সাথে তারা যোগ দিয়ে জিয়াকে হত্যা করে। কৌশলে এক নৌকায় একা জিয়াকে রেখে সকল নৈশপ্রহরী ঘটনার রাতে পৃথক অপর নৌকায় অবস্থান করে। রাত গভীর থেকে গভীরতর হলে প্রথমে পানির ভেতর নৌকাতেই গুলি করেছিল নৈশপ্রহরী সলোক। ওল্টু সলোককে একটি কাটা রাইফেল দিয়েছিলো এ অপকর্মের জন্য। পরে সকল নৈশপ্রহরী মিলে অর্ধমৃত জিয়ার দেহ ডাঙায় নিয়ে গিয়ে মাটিতে ফেলে রাখে। সে সময় নৈশপ্রহরীরা টর্চলাইট মেরে গ্যাং লিডার ওল্টুকে সংকেত পাঠালে বেশ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় নাটের গুরু ওল্টু। ওল্টু পরে অর্ধমৃত জিয়ার মাথায় ৩টি গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে চলে যায়। এছাড়া তারা আরও জানিয়েছে যে, হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে তারা (নৈশপ্রহরীরা) ওল্টুর সাথে মিটিং করেছিল। মিটিং-এ চরমপন্থী নেতা ওল্টু তাদের প্রস্তাব দিয়েছিলো – জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে তাদেরকে (নৈশপ্রহরীদের) সাহায্য করতে হবে। যদি করে তাহলে তারা ফিশিং’র ফিফটি ফিফটি পার্সেন্ট টাকার ভাগ পাবে। আর না করলে তাকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দিতেই হবে। এমন শর্তের এক পর্যায়ে নৈশপ্রহরীরা ওল্টুর প্রথম প্রস্তাব লাইফ নেয়।

ইতঃপূর্বে গত ২৭ এপ্রিল নৈশপ্রহরী কায়েতপাড়া পর্যায়ে ধৃত নৈশপ্রহরী কায়েতপাড়া গ্রামের মৃত আনসার আলীর ছেলে ইউনুস আলী ও একই গ্রামের তাহাজ আলীর ছেলে মুনিয়ার মণ্ডলকে আদালতে উপস্থিত করা হলে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় নিজেদেরকে বাঁচিয়ে জবানবন্দি প্রদান করেছে। নিজেদেরকে বাঁচিয়ে তারা দুজনই অভিন্ন ভাষায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছিল যে, বাঁওড়ের আধিপত্য হাতিয়ে নিতেই জিয়াকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে এলাকার চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ওল্টু- টাকু গং। ওল্টু নিজে গুলি করে হত্যা করেছে। তবে ওই হত্যাকাণ্ডে জবানবন্দী প্রদানকারি দুজন জড়িত নয় বলে দাবি করে তারা জানিয়েছে যে, তারা এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া দেখেছেন এবং হত্যাকারীদের চিনতে পেরেছেন।

এদিকে, পুলিশ এখন প্রধান হত্যাকারী ও চরমপন্থি গ্যাং গ্রুপের শীর্ষ নেতা তিয়রবিলার ওল্টুকে গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় – তিয়রবিলার ওল্টু হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ঠকপাড়ার হানেফ আলীর সাথে চরমপন্থি গ্রুপ করতো। তারা দুজনেই প্রায় দেড় যুগ জেল খেটে বাড়ি ফেরে।

উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গার কায়েতপাড়া গ্রামের মৃত আবুল মণ্ডলের ছোট ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া ছিলেন রামদিয়া-কায়েতপাড়া বাঁওড় (বড় বিল) মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি। গত ১৯ এপ্রিল ভোরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে বাওড়ের কিনারে গুলি করে হত্যা করে। রাতে জিয়াউর রহমান জিয়া বাওড়ের নৌকায় ছিলেন। ভোর রাতে বাড়ির নিকট বাওড়ের তীর থেকে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় ।