নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী : সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বো না

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বো না।’ গতকাল রোববার বিকেলে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দেশি পাটের জন্মরহস্য উন্মোচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে: নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে  হবে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর কতোবার আন্দোলন করে নির্বাচন হবে?’ তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনারা কি চান আবার দেশকে অন্ধকারের দিকে নিঙে যেতে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে সেখানে কীভাবে নির্বাচন হয়, তা অনুসরণ করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, সেভাবেই নির্বাচন হবে।’এর আগে বক্তব্য দেয়ার সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পাঁচ হাজার ৭২৩টি নির্বাচন হয়েছে। ৬৩ হাজার ৯৪১ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম কারচুপির কথা কেউ বলতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌর, সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে। আমরা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি, তা প্রমাণ করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী দল জিতেছে। কিন্তু তারা নির্বাচনে জয়ীদেরকে সাথে নিয়ে বলে, এ সরকারের আমলে অবাধ , নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তখন মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে তিনি জিতলেন কীভাবে? শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, ‘মিথ্যা কথা বলা ও জনগণকে বিভ্রান্ত করা তাঁদের মজ্জাগত।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী। আমাদের সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা হবে ও নির্বাচন হবে। অসাংবিধানিকভাবে কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে। কেউ যেন ক্ষমতা দখল করতে না পারে।’শেখ হাসিনা আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘বিরোধী দল আদালতের কোনো নির্দেশ মানে না। উচ্চ আদালত থেকে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক। কিন্তু তা না মেনে বিরোধী দল বারবার সে দাবির কথাই বলছে। তারা কিছুই মানবে না।’

পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে: পদ্মা সেতু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় যান। গিয়ে দেখুন।’

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের হিসাবনিকাশ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারের আমলে সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আমরা সরকার গঠন করি। তখন থেকেই জনগণ বুঝতে পারে যে সরকার হলো সেবক।’ তিনি বলেন, ‘চার বছর আট মাস ধরে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে, সেজন্য ২০২১ সালের রূপকল্প তৈরি করা হয়। কারণ, সে বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হবে। সে সময় বাংলাদেশ অন্তত মধ্যম আয়ের একটি দেশ হবে, এই ছিলো লক্ষ্য। অনেক ক্ষেত্রেই সে লক্ষ্য অর্জনের দিকে সফল হয়েছে সরকার।’ প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ে বিদ্যুত, খাদ্য, দ্রব্যমূল্য, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা খাতে উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়েনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। দেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়সম্পূর্ণ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানীসহ সারাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা জনগণ নিজেরাই দেখতে পাচ্ছে।’ তবে বিরোধী দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অবশ্য অনেকে আবার সব দেখেও দেখতে চান না। কারণ এসব উন্নয়ন আওয়ামী লীগ করেছে।’

বিদ্যুতের ঘাটতি নেই, তবে লোডশেডিং বাড়বে: প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লোডশেডিং কমে গেছে। এখন কেবলমাত্র লোডশেডিং করা হয় যাতে মানুষ এ সমস্যা ভুলে না যায় সেজন্য। বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকলেও সামনে এ কারণে লোডশেডিং কিছুটা বাড়ানো হবে।’

টক শোতে টক টক কথা বলা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে: প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এতো টিভি চ্যানেল আগে ছিলো না। আমরা এবার এসে অনেক চ্যানেল দিয়েছি।’ এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তবে দেখলে মনে হয় আমরা দিলাম আর আমরাই শত্রু হয়ে গেলাম। টক শো বেড়ে গেছে। টক টক কথা বলে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।’

সাংবাদিকদের জন্য ট্রাস্ট: শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। আমরাই প্রথমে সাংবাদিক হত্যার বিচার শুরু করেছি।’ সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকেরা বিপদে পড়লে দেখার কেউ থাকে না। কিন্তু আমি আছি।’