নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা : ১৯ ফেব্রুয়ারি ১০২ উপজেলায় ভোট

স্টাফ রিপোর্টার: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আগামী ১৯ ফেব্র“য়ারি ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে ১০২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রোববার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এ তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারি, যাচাই-বাছাই ২৭ জানুয়ারি ও প্রত্যাহার ৩ ফেব্র“য়ারি। রোববার দফায় দফায় বৈঠক করে নির্বাচনের এ সময়সূচি চূড়ান্ত করে কমিশন। এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকবে কি-না তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান সিইসি।

ইসি সূত্র জানায়, ধাপে ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। আগামী ২৫ মার্চ আরও দু শতাধিক উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণের জন্য কমিশনে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার তফসিল ঘোষণার আগে দীর্ঘ সময় বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। ওই বৈঠকে প্রথম দফা নির্বাচনে উপজেলা নির্বাচনের সংখ্যা কমিয়ে আনা ও ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়। যোগাযোগ করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে।

তফসিল ঘোষণা করে সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ বলেন, সামনে এসএসসি পরীক্ষা। নির্বাচনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি। আমরা চাই না শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ক্ষতি হোক। তবে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেই উপজেলা নির্বাচন করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য সীমিত সংখ্যক উপজেলায় নির্বাচন করতে হচ্ছে। এ সময় নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও মো. শাহনেওয়াজ, ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক ও যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রথম পর্যায়ে ১০২টি উপজেলায় নির্বাচন করা হচ্ছে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, মার্চে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উপজেলায় নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। সিইসি বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হচ্ছেন। আর সহকারী রিটার্নিং অফিসার হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। আগের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ওনাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রাখা হয়েছে। এছাড়া কমিশনের স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তাকেও রিটার্নিং অফিসার করা হবে বলে জানান তিনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা বজায় থাকে না- এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, যেসব দেশে গণতন্ত্র থাকে, যে কোনো নির্বাচনই রাজনৈতিক মাত্রায় চলে যায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিবন্ধিত দলের প্রতীকের মাধ্যমে হয় না। এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দল বলে কিছুই থাকবে না। কিন্তু এসব নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সমর্থক প্রার্থী হলে কিছুটা প্রভাব থেকে যায়।

নির্বাচন-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনে গোলযোগ হয়। তবে হামলা ও মামলা বলে কয়ে আসে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একটি পক্ষ থেকে প্রতিহত করা হয়েছে। এজন্য সহিংসতা বেশি হয়েছে। তারপরও যতোটা সহিংসতা হওয়ার কথা ছিলো তার চেয়ে কম হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে কি-না এখনও ঠিক হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই বাহিনীকে মাঠে নামানো হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা সবকিছু ঘোলাটে করে দেখেন। আমাদের কোনো তাড়াহুড়া নেই।

বিভক্ত ডিসিসি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে রকিবউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা আগেই পরিষ্কার করেছিলাম গত বছর ঈদ ও কোরবানির মাঝামাঝি ডিসিসির নির্বাচনটি করার জন্য। কিন্তু উত্তরে কিছুটা ও দক্ষিণে অনেকগুলো ওয়ার্ডে সীমানা জটিলতা থাকায় নির্বাচনটি করতে পারিনি। সমস্যার সমাধান হলেই নির্বাচন করা হবে।

উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের বিষয়ে গত শনিবার রাতে জরুরি বৈঠক করে ৪৮৭টি উপজেলা নির্বাচন ধাপে ধাপে করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। ওই বৈঠকে ১৮ ফেব্র“য়ারি ভোটগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়। ওইদিন বিকেলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে স্থানীয় সরকার, শিক্ষা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে এ সংক্রান্ত আলোচনা করে কমিশন।

এরপরই ভোটকেন্দ্রের তালিকা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৬ জানুয়ারির মধ্যে এসব ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে ইসিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

তফসিল ঘোষিত ১০২টি উপজেলা: খাগড়াছড়ির রামগড়, সদর, মাটিরাংগা, মহালছড়ি, মানিকছড়ি ও পানছড়ি উপজেলা; ঝিনাইদহের সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও শৈলকুপা উপজেলা; মাগুড়ার সদর ও শ্রীপুর উপজেলা; ভোলার লালমোহন উপজেলা; মানিকগঞ্জের শিবালয়, বাজিতপুর, দৌলতপুর, সিংগাইর ও সাটুরিয়া; গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা; রাজবাড়ীর সদর, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা; পঞ্চগড়ের সদর, বোদা, অটোয়ারী ও দেবীগঞ্জ উপজেলা; রংপুরের সদর, তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, গংগাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলা; কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, ভুরুঙ্গামারী ও উলিপুর উপজেলা; গাইবান্ধার সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা; বগুড়ার দুপচাঁচিয়া, ধুনট, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও সোনাতলা উপজেলা; চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল; নাটোরের সিংড়া; সিরাজগঞ্জের সদর, কাজীপুর, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলা; মেহেরপুরের সদর উপজেলা; কুষ্টিয়া সদর ও ভেড়ামারা উপজেলা; নড়াইলের কালিয়া; জামালপুরের সদর ও সরিষাবাড়ী উপজেলা; গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মকসুদপুর উপজেলা; মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা; শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, জাজিরা, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলা; নরসিংদীর পলাশ ও বেলাবো উপজেলা; সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলা; সিলেটের বিশ্বনাথ, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, গোয়াইনহাট ও জৈয়ন্তাপুর উপজেলা; হবিগঞ্জের বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলা; চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও মিরসরাই উপজেলা; নওগাঁর রানীনগর, মহাদেবপুর উপজেলা; সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা; কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, বাজিতপুর ও নিকলী উপজেলা; রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা; পাবনার সুজানগর, সাঁথিয়া ও আটঘরিয়া উপজেলা; খুলনার দিঘলিয়া ও কয়রা উপজেলা; বরিশালের গৌরনদী, বাকেরগঞ্জ উপজেলা; মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা; দিনাজপুরের কাহারোল ও খানসামা উপজেলা; নীলফামারীর ডিমলা, সৈয়দপুর ও জলঢাকা উপজেলা; যশোরের অভয়নগর উপজেলা; নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কেন্দুয়া উপজেলা এবং ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বের ১৮০ দিনের মধ্যে এ নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। শপথ গ্রহণের পর প্রথম বৈঠকের দিন থেকে ৫ বছরের মেয়াদ গণনা শুরু হয়। এ কারণে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এসব উপজেলা নির্বাচনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী ফেব্র“য়ারিতে ৪৮ জেলার ১১৩টি, মার্চে ৫৯ জেলার ২২১টি, এপ্রিলে ২৬ জেলার ৩৬টি, মে মাসে ৩৫টি জেলার ৮৬টি উপজেলাসহ জুন-জুলাই মাসেও বেশ কিছু উপজেলার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
১৯৮২ সালে উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো এবং ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আবার উপজেলা পদ্ধতি চালু করে। কিন্তু ওই সময়ে নির্বাচন হয়নি। ১৯ বছর পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদের তৃতীয় নির্বাচন হয়। নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদগুলোর প্রথম বৈঠক হয় ওই বছরের ২৩ ফেব্র“য়ারি থেকে ২৭ মের মধ্যে।