নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রসহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার

 

লাশ শনাক্তের পরপরইসিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে যানবাহনে ব্যাপক ভাচুর : অগ্নিসংযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: অপহরণের চারদিন পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নংওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ ছয়জনের লাশপুলিশ উদ্ধার করেছে।লাশ৫টি এক কিলোমিটারের মধ্যে পায়ে ২৪টি করে ইটবোঝাই সিমেন্টের ব্যাগ দিয়েবাঁধা অবস্থায় নদীতে ডোবানো ছিলো। পা ছিলো দড়ি দিয়ে বাঁধা। হাত পেছনে দড়িদিয়ে বাঁধা ছিলো। মুখমণ্ডল পলিথিন দিয়ে গলার কাছে বাঁধা ছিলো। পেট ধারালোঅস্ত্র দিয়ে সোজাসুজি ফাড়া ছিলো।

গতকাল বুধবার বিকেলে প্যানেল মেয়র নজরুলের ভাই আব্দুস সালাম এবং স্ত্রী সেলিনাইসলাম বিউটি নজরুলের লাশ শনাক্ত করেন। এছাড়া নজরুলের সাথেই অপহৃত স্বপনেরলাশ তার ছোট ভাই রিপন এবং তাজুল ইসলামের লাশ তার বোন শিরিন আক্তার শনাক্তকরেন। আইনজীবী চন্দন সরকারের লাশ শনাক্ত করেন তার মেয়ে অপর্ণা সরকার এবংভাগ্নে অ্যাডভোকেট প্রিয়তম সেন। চন্দন কুমার সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমেরলাশ শনাক্ত করেন তার ভাগ্নে। এছাড়া নজরুল ইসলামের সহযোগী লিটনের লাশ শনাক্তকরেন তার স্বজনরা।

বর্বরতা আর নৃশংসতার আরেক নজির স্থাপন হলো নারায়ণগঞ্জে। বুধবারবিকেলে প্যানেল মেয়র নজরুলের ভাই আব্দুস সালাম এবং স্ত্রী সেলিনা ইসলামবিউটি নজরুলের লাশ শনাক্ত করেন। এছাড়া নজরুলের সাথেই অপহৃত স্বপনের লাশতার ছোট ভাই রিপন এবং তাজুল ইসলামের লাশ তার বোন শিরিন আক্তার শনাক্ত করেন।আইনজীবী চন্দন সরকারের লাশ শনাক্ত করেন তার মেয়ে অপর্ণা সরকার এবং ভাগ্নেঅ্যাডভোকেট প্রিয়তম সেন। চন্দন কুমার সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমের লাশশনাক্ত করেন তার ভাগ্নে। এছাড়া নজরুল ইসলামের সহযোগী লিটনের লাশ শনাক্তকরেন তার স্বজনরা।

ময়না তদন্তের জন্য রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৬টি লাশই নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়াজেনারেল হাসপাতাল মর্গে ছিলো। আজ সকাল ১০টায় মৌচাক ঈদগাহ মাঠে নজরুলেরজানাজা হবে।

এর আগে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া এলাকারশীতলক্ষ্যায় অজ্ঞাত পরিচয় অর্ধগলিত ৪টি লাশের সন্ধান পায় পুলিশ। পরে আরোদুটি লাশ পাওয়া যায়। উদ্ধার অভিযান চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
লাশ উদ্ধার করতে যাওয়া বন্দর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোকাররম হোসেনসাংবাদিকদের জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা লাশ উদ্ধার করেছেন।প্রতিটি লাশই ইট দিয়ে বাঁধা ছিলো। লাশ যেন ভেসে উঠতে না পারে, সেজন্যইদুর্বৃত্তরা এমনটি করে থাকতে পারে। চেহারা বোঝা যাচ্ছে না।পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা লাশটি প্রথমে শান্তিনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। আরএটাই প্যানেল মেয়র নজরুলের বলে শনাক্ত হয়েছে।

তিনি আরো জানান, দুপুরের পর থেকে লাশগুলো ভেসে উঠতে শুরু করে। প্রতিটিলাশের হাত-পা বাঁধা ছিলো। মুখ পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছিলো। কোনো সংঘবদ্ধ চক্র এঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।

এদিকে, লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে উদ্ধারস্থলে ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শহীদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (‘ক’ অঞ্চল) আজিমুল আহসান এবংবন্দর থানার ওসি আক্তার মোর্শেদ।বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আক্তার মোর্শেদ জানান, শীতলক্ষ্যা নদীতেলাশ ভেসে যাওয়ার খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬টি লাশ উদ্ধার করে। পরেখবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা এসে লাশগুলো শনাক্ত করেন।নজরুল অপহরণের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশসুপার, র‌্যাবের সিও এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানার ওসিকে প্রত্যাহার করাহয়েছে।

ভাচুর, পুলিশের ফাঁকা গুলি: এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামেরহত্যাকাণ্ডের জের ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের পুল এলাকায় দোকানপাট ভাঙচুর করেবিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় পুলিশের সাথে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে স্থানীয় জনতা পুলএলাকায় রাস্তার পার্শ্ববর্তী দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময়দায়িত্বরত পুলিশ জনতাকে ভাঙচুরে বাধা দিলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
অন্যদিকে, নজরুল হত্যাকাণ্ডের জের ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড থেকেশুরু করে কাঁচপুর পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা।
মহাসড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়েযায়। এছাড়া মহানগরীতে চলাচলকারী যানবাহনগুলোও যাত্রাবাড়ী পেরিয়েসানারপাড়ের দিকে যেতে পারেনি। এতে এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের চরমদুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। যাত্রীদের অনেকে পায়ে হেঁটে আতঙ্কের মধ্যেইগন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করে।

এছাড়া প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের জের ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাকবাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সানারপাড়ের মেসার্স শ্যামস ফিলিং স্টেশনে আগুন দেয়বিক্ষুব্ধ জনতা।ফিলিং স্টেশনে আগুন দেয়ার সাথে সাথে একটি ট্রাক ও বাস ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর চালানো হয়।

এলাকাবাসী জানায়, এই ফিলিং স্টেশনটির স্বত্বাধিকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগনেতা ইয়াসিন। এ অপহরণের ঘটনার সাথে ইয়াসিন জড়িত বলে বিক্ষুব্ধরা অভিযোগকরছেন। আগুন দেয়ার পর লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে পাম্পটি ঘিরে রাখে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জসিটি করপোরেশনের (নাসিক) সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডেরকাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয়কমিটির সাবেক সদস্য নজরুলের সাথে অপহৃত হন তার প্রাইভেটকারচালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহসভাপতিতাজুল ইসলাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগকর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন এবংতার গাড়ির ড্রাইভার।

জানা গেছে, ওইদিন দুপুর আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলার হাজিরা শেষেশাদা রঙের এক্স করোলা (ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৯১৩৬) দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে ফিরেযাওয়ার পথে শিবু মার্কেট এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়াহয়। ওই রাতে নজরুলের গাড়িটি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে শালবনের পাশেপরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে তাদের কোনো সন্ধান মিলছিল না।একই দিন আদালতপাড়া থেকে আইনজীবী চন্দন সরকারসহ দুজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।চন্দন সরকারের গাড়িও পরে ঢাকার নিকেতন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাদেরও হদিসবুধবার পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছিলো না। আর এ দুটি অপহরণের ঘটনায় ফুঁসে ওঠেনারায়ণগঞ্জ।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ: নারায়ণগঞ্জে অপহৃত ৬ জনের লাশ উদ্ধারের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীআসাদুজ্জামান খান কামালকে ডেকে নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারেরনির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবংপ্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ ৬ জনের ভাসমান লাশ পাওয়ার পর রাতেপ্রতিমন্ত্রীকে গণভবনে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী।গণভবন থেকে বেরিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। এর সাথে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বেরকরা হবেই।তবে একসাথে ৭ জনকে অপহরণ করে হত্যার পরও তা সরকারের জনপ্রিয়তার ওপর প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কমবে কেন?