নারায়ণগঞ্জেরআলোচিত সাত হত্যা মামলায় তারেক সাঈদের দোষ স্বীকার

 

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষেকঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে নারায়ণগঞ্জে ৭ অপহরণ ও খুনের ঘটনায় নিজেরসম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন র‌্যাব-১১ এর সাবেক সিও লে. কর্নেল (অব.)তারেক সাঈদ মোহাম্মদ। রোমহর্ষক ওই ঘটনায় নিজের দোষ স্বীকার করে দণ্ডবিধির১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। ১৬ মে গ্রেফতারের পরমোট ৬ দফায় ৩২ দিনের পুলিশি রিমান্ড শেষে গতকাল বুধবার আদালতের কাছে জবানবন্দিদিলেন তারেক সাঈদ।নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএমমহিউদ্দিনের খাস কামরায় সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা আলাদা দুটি মামলায় এদিনবেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তারেক সাঈদের জবানবন্দি গ্রহণ করাহয়। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।তবে গতকাল বুধবার জবানবন্দি শেষে তারেক সাঈদকে হাস্যোজ্জ্বল ও খোশ মেজাজে দেখাগেছে। এর আগে ৪ জুন একই আদালতে আরিফ হোসেন ও ৫ জুন এমএম রানা ১৬৪ ধারায়স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপহরণ ও সাত খুনের ঘটনায় নিজেদের দোষ স্বীকারকরেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, তারেক সাঈদ ৭ অপহরণ ও খুনের ঘটনার প্রথমথেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। মেজর আরিফ ও এমএম রানার দেয়া জবানবন্দিরপ্রায় ৯০ ভাগই মিলে গেছে তারেকের বর্ণনায়। তবে তারেক সাঈদ দাবি করেছেন, নজরুল ও স্বপনকে গুম এবং খুনের জন্য কয়েক কোটি টাকার চুক্তি হলেও তিনি এইঘটনায় কোনো টাকা পাননি। যার আদেশ ও নির্দেশে এই কাজ করেছেন টাকার পুরোটাইরয়েছে তার কাছে। নির্দেশ ছিল আগে কাজ পরে টাকা।
এর আগে রিমান্ডে তারেকনিজেকে বারবার নির্দোষ দাবি করেছিলেন বলে তদন্তের সঙ্গে জড়িত একাধিক সূত্রজানিয়েছে। কিন্তু তদন্ত দলের সদস্যদের অব্যাহত জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শেষপর্যন্ত নিজেকে আর শক্ত অবস্থানে ধরে রাখতে পারেননি। সোমবার থেকে তারেকসাঈদকে ক্রমাগত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তাকে বিশ্রামের খুব একটা সময়দেয়া হয়নি। বিশেষ করে জিজ্ঞাসাবাদকারী টিমের সদস্যরা রাত ১২টা থেকে ৩টাপর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারেক সাঈদ ঘুমিয়ে পড়েন। ঠিক ১৫ মিনিট পরেই তাকেআবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তোলা হয়। মানসিকভাবে দুর্বল করতে তদন্তকারীদের এইফর্মুলা শেষ পর্যন্ত কাজে দেয়। মঙ্গলবার ভোর রাতেই তারেক সাঈদ নিজের দোষস্বীকার করে জবানবন্দি দেয়ার জন্য রাজি হন।
আদালত ও তদন্তের সঙ্গে জড়িতএকাধিক সূত্র জানায়, বুধবার সকাল ৮টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলাপুলিশ লাইন থেকে তারেক সাঈদকে আদালতে আনা হয়। পরে তাকে নেয়া হয় সিনিয়রজুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম মহিউদ্দিনের আদালতে। সেখানে জবানবন্দি দেয়ারব্যাপারে প্রথমে তাকে চিন্তাভাবনার সুযোগ দেয়া হয়। পরে বেলা ১১টা থেকেজবানবন্দি দেয়া শুরু করেন তারেক সাঈদ। প্রথম দফায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামও তার ৪ সহযোগীকে হত্যার ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির দায়েরকরা হত্যা মামলায় জবানবন্দি দেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারও তার গাড়িচালককে হত্যার ঘটনায় চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় পালের দায়ের করামামলায় জবানবন্দি দেন র‌্যাবের সাবেক এই কমান্ডার। জবানবন্দি শেষে তারেকসাঈদকে আদালতে তোলা হলে একই বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবেতারেক সাঈদকে আগের মতো এবার বুলেট প্র“ফ জ্যাকেট ও হেলমেট কোনো কিছুইপরানো হয়নি। ক্লিন সেভড্ আর ক্রিম কালার পলো শার্টে তারেক ছিলেনহাস্যোজ্জ্বল।
তারেক সাঈদকে জেলহাজতে পাঠানোর পর গণমাধ্যমের সামনেসমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়ালম্যাজিস্ট্রেট আদালতের খাস কামরায় তারেক সাঈদের জবানবন্দি রেকর্ড করাহয়েছে। এতে তিনি বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। তবে জবানবন্দিতে কি ছিল সেব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। এদিকে তারেক সাঈদকে ৩য় দফায় রিমান্ডআনার সময়েই তার স্ত্রী ডিভোর্স দিয়েছেন বলে গুজব উঠেছে আদালতপাড়ায়। বেশকয়েকজন সাধারণ আইনজীবী জানান, তারেক সাঈদের ডিভোর্স দেয়ার বিষয়টি সাধারণমানুষের মাঝে বলাবলি হচ্ছিল।
আমি সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার মালিক : এদিকেভারতে গ্রেফতার হওয়ার বেশকিছু দিন আগে সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জের একজন পুলিশপরিদর্শকের (ওসি) কাছে দুই দফায় ফোন করেছিলেন নূর হোসেন। নূর হোসেনের সঙ্গেওই ওসির ফোনালাপের বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানলেও বিষয়টিগোপন রাখা হয়েছিল। তবে এ নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মাঝে আলোচনা চলছে কয়েক দিনথেকেই। নাম প্রকাশ না করে ওই সূত্র জানায়, ৯/১০ দিন আগে নূর হোসেন একটিভারতীয় নম্বর থেকে ওই ওসিকে ফোন দেন। নূর হোসেন এ সময় তার কাছে ৭ খুনেরমামলা থেকে বাঁচার পরামর্শ চাইলে ওই ওসি কথাবার্তায় কৌশল অবলম্বন করেন।তিনি নূর হোসেনকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকলে দেশে এসে আত্মসমর্থন করারপরামর্শ দেন। এরপরই নূর হোসেন ওই ওসিকে বলেন, আত্মসমর্থন করার কথা বলে আপনিআমাকে ফাঁসিয়ে দিতে চাচ্ছেন। আমি সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার মালিক। একশ’ কোটিটাকা দিয়ে দেব, এই মামলায় আমার কিছুই হবে না। এর পর তিনি ফোন কেটে দেন।বিষয়টি তাৎক্ষলিকভাবে ওই ওসি জেলার একজন শীর্ষ পুলিশ কর্তাকে জানালে তিনিওওই নম্বরে ফোন দিয়ে নূর হোসেনকে আত্মসমর্পণ করার জন্য অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে ফোনের অপর পাশ থেকে হিন্দি ভাষায় গালাগাল শুরু হয়।