নাটোরে জামায়াত নেতা নিহত : রাজশাহীতে শটগান ছিনিয়ে নিয়ে ওসিকে মারপিট : আজ ফের হরতাল

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে ককটেল বিস্ফোরণ : ভাজা বিক্রেতাসহ দু পথচারী হালকা আহত : ঝিনাইদহে শৈলকুপায় পুলিশ-জামায়াত সংঘর্ষে দোকানপাটে ভাঙচুর

 

স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধ-হরতাল চলাকালে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ-হামলায় একজন নিহত ও ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরে ও স্টেশনের অদূরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। এতে হালকা আহত হয়েছেন তিনজন। দামুড়হুদা উপজেলা শহরেও গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মেহেরপুরের কায়েম কাটার মোড়ে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। ঝিনাইদহে কয়েকটি সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। সন্ধ্যার পর শৈলকুপায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী সমর্থকদের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। কয়েকটি দোকানে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিবাদে সারাদেশে আজ বুধবার ফের জামায়াত সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার জামায়াতের হরতালের দ্বিতীয় দিন এবং ১৮ দলের অবরোধের ৪র্থ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর ছিলো অনেকটাই শান্ত। হরতাল ও অবরোধ তেমন প্রভাব ফেলেনি। স্থানীয় বিএনপির একাধিক অংশ ঝটিকা মিছিল বের করলেও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়নি। বিকেল থেকে পুলিশি টহল জোরদার হয়ে ওঠে। রাত ৮টার দিকে শহীদ হাসান চত্বরের অভিজাত সু স্টোরের অদূরে রাস্তায় একটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। ককটেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। পাশের ভাজা বিক্রেতা অশিত কুমার সাহা ওরফে ফকির ভাজার মুখে স্প্লিন্টারে আহত হন। একই ককটেল বিস্ফোরণে আহত হন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চুয়াডাঙ্গা মসজিদপাড়ার ইউনুস আলীর দু ছেলে ইকলাস ও রনি। এদেরকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। স্থানীয়দের কয়েকজন মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, মোটরসাইকেল যোগে দু যুবক এসে ককটেলটি নিক্ষেপ করেই সটকে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরই চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের পুলিশ ফাঁড়ির অদূরে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। প্রায় একই সময়ে বাসটার্মিনালের নিকট বিস্ফোরিত হয় ককটেল। পুলিশ অবশ্য বলেছে, ওগুলো ককটেল নয়। পটকা। তবে হালকা স্প্লিন্টার ছিলো। দু প্রান্তে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের পর জেলা শহর জনশূন্য হয়ে পড়ে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের তৃতীয় দফা অবরোধের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার নওগাঁয় সংঘর্ষে এক জামায়াতকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া সারাদেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছেন। নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবিরের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে জামায়াতকর্মী নিহত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে পুলিশ কনস্টেবলের শটগান ছিনিয়ে নিয়ে ওই শটগান দিয়ে পিটিয়ে নগরীর মতিহার থানার ওসির পা ভেঙে দিয়েছে শিবির ক্যাডাররা। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো চার কনস্টেবল। সিলেটে পুলিশবাহী টেম্পুতে ও বরগুনায় একটি মন্দিরে আগুন দিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। জেলার কানাইঘাটে এক এসআইকে পিটিয়েছে তারা। মুক্তাগাছায় পিকেটারদের হামলায় দু সহযোগীসহ এক লেগুনা চালক আহত হয়েছেন। এছাড়া অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিরোধীদলের অর্ধশত নেতাকর্মীকে আটক ও অর্ধশতাধিক ককটেল উদ্ধার করেছে।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তৃতীয় দফা এ অবরোধ আহ্বান করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। অবরোধ চলবে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত। এছাড়া দলীয় নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে গতকাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে জামায়াত। ১৮ দলীয় জোটের সারাদেশে অবরোধ আর জামায়েতের সকাল সন্ধ্যা হরতালের সকালে রাজধানীর বংশালে অবরোধের সমর্থনে বিএনপি মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আবু সাঈদ খান খোকন, সৈয়দ মনজুরুল হক, শহিদ খান, মো. সাবের হোসেনসহ বিএনপির ২৫ নেতাকর্মী আহত হন। এসময় তাঁতিদল নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু ও কৃষকদলের নেতা সজীবকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩ মাসের সাজা দেন। এছাড়া ওয়ারী থানা যুবদল অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া করে। এ সময় যুবদল কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ মো. ইব্রাহিমসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর-জামান সিজারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃত ছাত্রদল নেতা আবাবিল হোসেন সাদ্দাম, আবু বক্কর সিদ্দিক সোহেল ও হিরোকের নিঃশর্তে মুক্তি দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার জেলা ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বেলা ১১টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহীদ হাসান চত্বরে পৌঁছুলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি বাধে। এক পর্যায়ে মিছিলটি হাসান চত্বর ঘুরে পুনরায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য এমএ তালহা। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম জেনারেল ইসলাম। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মুঞ্জুরুল জাহিদ, রাজিব খান, জেডএম তৌফিক খান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সারাদেশে মানুষ যখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ তার দলীয় প্রশাসন দ্বারা আন্দোলনের গতিরোধ করার অপচেষ্টা মানসে  ছাত্রদলের নেতাকর্মীর নামে অহেতুক মামলা দিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে। এ ঘটনার পরিক্রমায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর-জামান সিজারকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদল নেতা সাদ্দাম, সোহেল ও হিরোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের এ পক্ষপাত দুষ্টু আচারণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক রাজিব খান স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর-জামান সিজার, সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য এমএ তালহা, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মুঞ্জুরুল জাহিদ, রাজিব খান, জেডএম তৌফিক খান, সোহেল আহম্মেদ মালিক সুজন ও মোমিনুর রহমান মোমিন যশোর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি কবির হোসেন পলাশ গত রোববার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সেই সাথে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।

অবরোধ ও হরতালের সমর্থনে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কোর্টমোড় থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় কোর্টমোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা পৌর ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দপ্তর সম্পাদক আবু আলা সামসুজ্জামান, জেলা জামায়াতের সূরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, পৌর জামায়াতের আমীর মফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাজি আব্দুল মান্নান, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান খান, জেলা শিবিরে সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাও. আনোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, প্রচার সম্পাদক নুরগনি প্রমুখ।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশের দপ্তর সম্পাদক আবু আলা সামসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চলমান আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে জেলা বিএনপি একাংশের সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য রেখে হাজি মোজাম্মেল হক ও শামসুজ্জামান দুদু গ্রুপ থেকে রাসেল ও শরিফের নেতৃত্ব একশ ছাত্রদল নেতাকর্মী পক্ষ ত্যাগ করে। জেলা বিএনপির কেদারগঞ্জস্থ দলীয় কার্যালয়ে পক্ষ ত্যাগ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারাণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম বাবলু, দপ্তর সম্পাদক আবু আলা সামসুজ্জামান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. হেদায়েত হোসেন আসলাম, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান খান প্রমুখ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ১৮ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা বিএনপি নোয়াব আলী গ্রুপ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও সোমবার বিকেলে জীবননগর পৌর বিএনপি ও বিএনপির অহিদুল-টিপু গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে করে। হাসপাতাল সড়কের দলীয় কার্যালয় থেকে এসব মিছিল বের করা হয়।

পরে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- পৌর বিএনপি সভাপতি সাহজাহান কবীর, সাধারণ সম্পাদক মাহতবাব উদ্দিন, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম, বিএনপি অহিদুল-টিপু গ্রুপের নেতা সাবদার রহমান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- পৌর বিএনপি নেতা পৌর কাউন্সিলর নবী শাহ্, সাবেক পৌর কাউন্সিলর হাসান আলী, পৌর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি রবি সর্দার, আহাম্মদ আলী, শহিদুল ইসলাম, ছানোয়ার হোসেন, কিনারউদ্দিন, হবিবর রহমান, আমিনুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম রবু, নজরুল ইসলাম ও আব্দুল বারী। ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে বদরউদ্দিন বাদল, হাফিজুর রহমান অহিদুল-টিপু গ্রুপের মধ্যে জাফর আলী, হাসান, সোহাগ মেম্বার, সেলিম মেম্বার, মশিয়ার রহমান, যুবদল নেতা মনির, বকুল, হামিদ, আরিফ, আজমত, সাইদুর, আবুল হোসেন, জাকির, ইছাহক আলী, ছাত্রদল নেতা জাকির আহম্মেদ শামীম, খোকন, ইকরামুল, জাহিদ, সাইদুর, নেতা আব্দুস সামাদ ও আশাবুল হক।

বিএনপি নোয়াব আলী গ্রুপের প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আক্তার রিনি, পৌর বিএনপি সভাপতি পৌর কাউন্সিলর মশিউর রহমান, কাউন্সিলর সামসুজ্জামান হান্নু, কাউন্সিলর হযরত আলী, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হারুনর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক আনিছুর রহমান শিপলু, যুবদল সভাপতি আবুল হোসেন প্রমূখ।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টানা হরতাল ও অবরোধের কারণে ঝিনাইদহে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে দোকানপাট খুলছেন না। যানচলাচল বন্ধ থাকায় পেঁয়াজ, আটা, ময়দা, চিনিসহ নিত্যপণ্য আমদানি করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে সরবরাহের ঘাটতির কারণে পণ্যের দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে জেলার ৬ উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। যানচলাচল বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় মালামাল আমদানী করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা এবং ব্যাংক ঋণের সুদ মিটাতে গিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম তাদের। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে নিঃস্ব হয়ে যাবেন তারা।

জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা নেই। ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে বসে আছেন। শহরের এইচএসএস সড়কের ওয়ালটন প্লাজা গত তিন দিন ধরে বন্ধ। ওয়ালটন প্লাজার ঝিনাইদহের ব্রাঞ্চ ইনচার্জ ওয়ালিউর রহমান বলেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে গত দুই মাসে বিক্রি অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে। এর ফলে দোকান ভাড়া, বিদ্যুত বিলসহ অন্যান্য খরচ বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকার ও বিরোধী দলকে দ্রুত সমঝোতায় এসে চলমান সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে দুর্ভোগ যেমন বাড়বে তেমনি সাধারণ মানুষ রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আস্থা হারাবে।

সদর উপজেলার হাটগোপালপুরে অটোরাইস মিলের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লাগাতার হরতালে-অবরোধে আমরা চাল ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। রোপা আমনের ভরা মৌসুমেও হাট-বাজার থেকে ধান কিনতে পারছি না। ফলে জেলার অধিকাংশ চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্য চলমান রাখার স্বার্থে অবিলম্বে দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জল বিশ্বাস বলেন, অবরোধে ও হরতালের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। ধার দেনা করেও চলতে পারছেন না তারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে শ্রমিকদের।

শৈলকুপা উপজেলার দুধসর গ্রামের সবজি চাষী আসাদুর রহমান বলেন, ছয় বিঘা জমিতে সিম চাষ করেছি। শুরুতে ভালো দামও পেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে হরতাল অবরোধের কারণে পাইকাররা আসতে না পারায় এলাকার হাট-বাজারে লোকসান দিয়ে সিম বিক্রি করত হচ্ছে।

শহরের গীতাঞ্জলি সড়কের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অসিত কুমার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রেতারা  শহরে আসতে পারছেন না। গত সাতদিন ধরে কোন বেচাকেনা হয়নি। কর্মচারীদের বেতন দেব কিভাবে ভেবে পাচ্ছি না। দেশের এই সঙ্কটে কার লাভ কার ক্ষতি জানি না। তবে আমরা ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। এ অবস্থা চলতে পারে না। এর সমাধান দ্রুত হওয়া প্রয়োজন।

ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সাজ্জাদ আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে জীবন রক্ষাকারী ঔষুধ সঠিক সময়ে জেলার সর্বত্র পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে আমার মতো অনেককে।

ঝিনাইদহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ফোটন বলেন, কোন স্তরের ব্যবসায়ীরাই কোন পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না। যার ফলে সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বর্তমানে প্রায় স্থবির। এর ফলে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমনি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। দ্রুত রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন না হলে সামনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীদের।

কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহের শেখপাড়া বাজারে মহাসড়ক অবরোধ, সহস্রাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিক্ষোভ

কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশকে সামনে রেখে ঝিনাইদহের শৈলকুপার শেখপাড়া বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে  খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের মদনডাঙ্গা থেকে শুরু করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত অবস্থান নেয়। তারা শেখপাড়ারে বাজারে টায়ার অগ্নিসংযোগ ও গাছের গুড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। বাজারের দোকানপাট ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রেখেছে শিবির কর্মীরা। সহস্রাধিক শিবির কর্মী এসব কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছে। তবে ফাঁসির আদেশ বুধবার সকাল স্থগিতের খবরে তাদের মধ্যে এক ধরণের স্বস্তি দেখা গেছে।

এদিকে ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইদুল্লাহ জানান, কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ ও সড়কে অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যাবে। শৈলকুপা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, জামায়াত-শিবির কর্মীরা শেখপাড়া বাজারে মিছিল করেছে। এ ছাড়া মহাসড়কে যেসব গাছ ফেলা হয়েছে তা সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, একতরফা নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা সরকারের বিরুদ্ধে জুলুম নিযাতনের অভিয়োগ, এছাড়া জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে সারাদেশে ডাকা সকাল সন্ধ্যা-হরতালে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে মেহেরপুর মুজিবনগর সড়কের গৈরীনগর খালের ধার নামক এলাকায় জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ছিদ্দিকুর রহমানের নেত্রীতে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা সড়ক বিক্ষোভ মিছিল ও সড়কে আগুন জালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন- জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ছিদ্দিকুর রহমান, মুজিবনগর জামায়াতের আমির মশিউর রহমান, সেক্রেটারী খান জাহান আলী, মুজিবনগর শিবিরের সভাপতি আনোয়র হোসেন, সেক্রেটারী আব্দুল আলিম, জামায়াত নেতা তৈফিক মোল্লা প্রমুখ।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ ও জামায়াতের ডাকা হরতাল পালনকালে মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়কের ৫টি স্থানে সড়ক অবরোধ করেছে জোটের নেতার্কীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর ও দারিয়াপুর, মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েম কাটার মোড় ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগরে অবরোধ করেন জামায়াত-শিবির নেতার্কীরা। একই সময়ে মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের উজলপুর মোড়ে অবরোধ করেন যুবদল নেতাকর্মীরা। অবরোধ-হরতালের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। সড়কে গাছের গুঁড়ি ও ইট ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কায়েম কাটার মোড়ে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।