নজরুলের চেতনায় শাণিত হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

 

এমআর কচি/শরিফ রতন কার্পাসডাঙ্গা থেকে ‘জাতীয় কবি নজরুল আমাদের দেশের সম্পদ ছিলেন। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে তিনি তার লেখা কবিতা ও গানের মাধ্যমে বাঙালিদের সাহস জুগিয়ে ছিলেন। তার লেখা কবিতা ও গান মুক্তিযোদ্ধাদের স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। যার ফলাফল আমাদের স্বাধীনতা।’ গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত জাতীয় নজরুল সম্মেলনে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। তিনি আরও বলেন, এটি অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে আমাদের জাতীয় কবি চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় সপরিবারে কিছু দিন অবস্থান করেছিলেন। তার স্মৃতিবিজড়িত আটচালা ঘরটি এখনও বিদ্যমান রয়েছে। তবে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় কবির ঘরটি সংস্কার ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে স্ত্রী প্রমীলা, বড় ছেলে বুলবুল ও শাশুড়ি গিরিবালাকে নিয়ে কার্পাসডাঙ্গায় প্রায় দু’মাস অবস্থান করেন। কবির অবস্থান করা সেই আটচালা ঘরটি এখনও বিদ্যমান রয়েছে। কবির সেই রেখে যাওয়া স্মৃতিকে অক্ষুণ্ণ  রাখতে প্রথমবারের মতো চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী জাতীয় নজরুল সম্মেলন। কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে এ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্কৃত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নজরুল ইনস্টিটিউট ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সম্মেলন উপলক্ষে কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য ৱ্যালি বের করা হয়। ৱ্যালিতে নেতৃত্ব দেন জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। ৱ্যালিটি কার্পাসডাঙ্গা বাজার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সম্মেলন প্রাঙ্গণে ফিরে আসে। পরে বেলুন উড়িয়ে ও শান্তির প্রতীক কবুতর অবমুক্ত করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। উদ্বোধনী শেষে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্যবাদ ও মানবতার কবি। তিনি সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন কলম ধরেছেন শাসকের বিরুদ্ধে। তিনি প্রেমের কবি বিদ্রোহের কবি। কাজী নজরুল ইসলাম একই হাতে লিখেছেন প্রেম বিরহ যুদ্ধ এবং ধর্মীয় সঙ্গীত। তিনি বলেছেন এক হাতে মম বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য। তাই এই মহান কবিকে পশ্চিম বঙ্গ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাংলাদেশে এনে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলেন। এই পৃথিবী যতদিন থাকবে কাজী নজরুল তার মেধা প্রজ্ঞা ও সৃষ্টির মধ্যে বেঁচে থাকবেন। তিনি আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ তাই আসুন নজরুলের চেতনায় শানীত হয়ে অরাজকতা ও সম্প্রাদায়িকতা রুখে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের অহঙ্কার।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনজুরুর রহমান ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। মূল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাক্তন মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. এনামুল হক। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল ইনস্টিটিউটের সচিব আবদুর রহিম। অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবদুর রাজ্জাক, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম মামুন উজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, কেরু অ্যান্ড কোম্পানির এজিএম (প্রশাসন) মনোয়ার হোসেন, চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নির্মল কুমার দে, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, অ্যাড. শামশুজ্জোহা, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হযরত, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর বেগম, জীবননগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম গোলাম মোর্তূজা, কার্পাসডাঙ্গা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হামিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কামাল হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুর জাহান, নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু, কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুফি মো. রফিকুল ইসলাম, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ভূট্ট, আওয়ামী লীগ নেতা নজির আহমেদ, শওকত আলী, আবদুস সালাম, রহমাতুল্লাহ শাহ, একরামুল করিম, আবদুল করিম, শহিদুল হক, সহিদুল ইসলাম, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল গফুর, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও সহসম্পাদক হাসেম রেজা। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোয়ারা খুশি অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান নজরুল সঙ্গীত শিল্পী এম এ মান্নান, ফাতেমা-তুজ্- জোহরা, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান, ছন্দা চক্রবর্তী, নাসিমা শাহীন এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সঙ্গীত, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশন করেন।