ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত ২ : পুলিশকে হুমকি : আজিজ চেয়ারম্যানের নামে জিডি করলেন ওসি তদন্ত

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার ছুটিপুর থেকে ভোট চেয়ে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষ আজিজ চেয়ারম্যানের লোকজন আ.লীগ নেতা জাফর প্যানেলের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলায় জাফর আলী পক্ষের মুকুল ও মফিজ নামের দুজন রক্তাক্ত জখম হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুলিশকে মান অপমান করাসহ হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক বাদী হয়ে চেয়ারম্যান আজিজের নামে থানায় জিডি করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ছুটিপুর-ভগিরথপুর সড়কের ইলামের পুকুরপাড়ের অদূরে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ নভেম্বর দামুড়হুদার নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন। নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি আজিজ চেয়ারম্যান প্যানেল এবং অপরটি নতিপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী প্যানেল। নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আলী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, মহাসিন আলীসহ অন্য প্রার্থীরা ছুটিপুর ও পোতারপাড়া গ্রামে ভোট চাইতে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভোট চেয়ে ছুটিপুর থেকে বাড়ি ফেরার সময় ভগিরথপুর-ছুটিপুর সড়কের ইলামের পুকুরের পাশে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকে ১০-১৫ জন মুখোশধারী জাফর আলীর মোটরসাইকেলের গতিরোধের চেষ্টা করে। দুর্বৃত্তরা রাস্তায় ওঠার আগেই জাফর আলী মোটরসাইকেল চালিয়ে ভগিরথপুরে পৌঁছে যান। দুর্বৃত্তরা এরপর পুনরায় আরও একটি মোটরসাইকেল আসতে দেখে তাদের গতিরোধ করে এবং মোটরসাইকেলে থাকা নতিপোতা গ্রামের মৃত খেজমত আলীর ছেলে আবুল হাশেম ও মোস্তফাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুজনকে পার্শ্ববর্তী একটি বাঁশবাগানে আটকে রাখে। এরপর আরও একটি মোটরসাইকেল আসতে দেখে দুর্বৃত্তরা পুনরায় রাস্তায় উঠে আসে এবং রামদা হাতে মোটরসাইকেলের গতিরোধের চেষ্টা করে। মোটরসাইকেলে থাকা ভগিরথপুরের খলিলুর রহমানের ছেলে মুকুল (৩৫) এবং একই গ্রামের মৃত ইজাহার আলীর ছেলে মফিজুর রহমান অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসতে গেলে দুর্বৃত্তরা রামদা দিয়ে মুকুলের পিঠে এবং মফিজের হাতে কোপ মারে। মুকুল ও মফিজ আহত অবস্থায় পালিয়ে ভগিরথপুরে পৌঁছে চিৎকার দিলে গ্রামবাসী ছুটে যায়। গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে দুর্বৃত্তরা জিম্মি করে রাখা ওই দুজনকে ফেলে চলে যায়। পরে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে তারা দুজন জানায় দুর্বৃত্তরা বলাবলি করছিলো চেয়ারম্যান ও মাস্টার বলেছে ডিসকভারি গাড়ির গতিরোধ করতে। এলাকাবাসীর মনে প্রশ্ন কে ওই চেয়ারম্যান এবং কে ওই মাস্টার? এ ঘটনার সময় ভগিরথপুরের ফারুক মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী হতবাক হয়ে পড়ে। পরে এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্নের দানা বাঁধে। কেউ কেউ বলেন, সন্ধ্যা থেকেই ফারুক ভগিরথপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন দীর্ঘসময় মোবাইলফোনে বলছিলো। এ সময় এলাকাবাসী ফারুককে মারমুখি হয়ে উঠলে ফারুকের বড় ভাই তুরাব আলী প্রকাশ্যে খুনের হুমকি দেয় জাফর আলীকে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এর পরপরই ভগিরথপুর ও ছুটিপুর ক্যাম্পের পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এ সময় নতিপোতার হাশেম ও মোস্তফা বাড়ি ফেরার পথে আজিজ চেয়ারম্যানের লোকজনের তোপের মুখে পড়তে হয় তাদের। আজিজ চেয়ারম্যানের অনুসারী প্রায় ১৫-২০ জন তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে গালাগালি দিতে থাকে। এক সময় তারা খুনেরও হুমকি দেয়। পরে চেয়ারম্যান ও মাস্টারের পরিচয় তাদের কাছে অনেকটাই পরিষ্কার হয়। ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় একটি পত্রিকার সংবাদকর্মী যান। তাকেও খুনের হুমকি দেয় নতিপোতা গ্রামের তারার ছেলে হাশেম ও এলাকার ত্রাস বিল্লাল। তারা ওই সংবাদকর্মীকে বলে, তোর নামে অনেক অভিযোগ। তুই চেয়ারম্যানের নামে অনেক নিউজ করেছিস। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এ বিষয়ে ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক বলেন, আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে জাফরকে তার লোকজনকে সরিয়ে নিতে বললে সে তার লোকজনকে সরিয়ে নেয়। কিন্ত আজিজ চেয়ারম্যান দামুড়হুদা থেকে মোবাইলফোনে বলে আপনি ওখান থেকে চলে আসেন। ওখানে মারামারি খুন খারাবি যা হয় হোক। ওসি (তদন্ত) আরও বলেন, আমি তার কথায় প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকে হুমকি-ধামকি দেন এবং আমাকে অপমান করার জন্য কূটকৌশল অবলম্বন করেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আজিজ নতিপোতার চেয়ারম্যান হলেও তিনি দামুড়হুদায় বাড়ি করে ওখানেই বেশির ভাগ সময় অবস্থান করেন। তিনি এলাকার পরিস্থিতি না জেনে না বুঝে তিনি তার সমর্থকদের উত্তেজিত করে প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধে জড়ানোর উসকানি দেন। তিনি যদি চেয়ারম্যানসুলভ আচরণ করতেন তাহলে এলাকায় এ ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো না। এ বিষয়ে নতিপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী বলেন, মিজান চেয়ারম্যানের পর এবার টার্গেট আমি। আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেই তারা হামলা চালিয়েছিলো। কিন্তু আমি আগে চলে আসায় এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেছি। এদিকে নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজিজ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ওই ঘটনার সময় ইউপি সদস্য ইয়ামিন মেম্বারকে পুলিশের উপস্থিতিতে মারধর করা হয়েছে। বিধায় আমি তখন ওসি তদন্তকে বলেছি আপনি থেকে যদি একজন জনপ্রতিনিধিকে মার খেতে হয় তাহলে আপনাকে ওখানে থাকতে হবে না। আপনি ওখান থেকে চলে আসেন। ওখানে মারামারি খুন-খারাবি যা হয় হোক। তখন ওনি আমাকে তুই তুকারি করে বেশকিছু বাজে কথা বলেন। তাছাড়া মুকুল ও মফিজকে কোপানোর ঘটনায় আমার কোনো লোকজন জড়িত নয়। ওটা তাদের সাজানো নাটক।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ জানান, নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হামলার বিষয়ে আমার কাছে তেমন কোনো তথ্য আপাতত নেই। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।