ধর্ষণ শেষে শিশু হত্যার গুঞ্জন শুনলো না পুলিশ

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা হাড়োকান্দিস্কুলছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু : হত্যার গুঞ্জন

 

ঘোলদাড়ী প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার আইলহাস ইউনিয়নের হাড়োকান্দি গ্রামের স্কুলছাত্রী জান্নাতুলের রহস্যজনকমৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ভোরে বাড়ির সবার অলক্ষ্যে তালগাছ তলায় তাল কুড়োতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি সে। একদিন পর পুকুরের পানিতে ভেসে ওঠে লাশ। পারিবারের লোকজনের দাবিতাকে জিনে ডুবিয়ে মেরেফেলেছে। জিনের দোহাই দিয়ে আসল ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গ্রামে গুঞ্জন উঠেছে। ভোরে স্কুলছাত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে কেউ পুকুরের পানিতে ফেলে রেখেছে বলে জোর গুঞ্জন উঠলেও সে গুঞ্জনে অবশ্য পুলিশ কান দেয়নি। জিনে কাউকে মারতে পারে? পুলিশ অবশ্য এর জবাব না দিলেও ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমোদন দিয়ে বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার আইলহাস ইউনিয়নের পল্লি হাড়োকান্দি গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবুল কাশেমের মেয়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ওরফে ভুন্দি (১০) গত রোববার ভোর ৬টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের আনারুলের পুকুর পাড়ে তাল কুড়োতে যায়। দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। খোঁজ করা হয় আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে পুকুর মালিক আনারুল শিশুকন্যা ভুন্দির লাশ ভাসতে দেখে তার পরিবারের লোকজনকে খবর দেন। পরিবারের লোকজন লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সরেজমিনে গেলে সাংবাদিক দেখে স্কুলছাত্রী ভুন্দির নিকটাত্মীয়স্বজনেরা অনেকটা ভীত হয়ে ওঠেন। লাশের ছবি তুলতে গেলে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেন। পরিবারের লোকজন দাবি করেন, তাল কুড়োতে গিয়ে পানিতে ডুবে সে মারা গেছে। তার উপদৃষ্টির ভাব ছিলো বলে জানান তারা। জিনে তাকে মেরে ফেলেছে বলেও দাবি করেন। পরিবারের সাথে একমত পোষণ করে গ্রামের প্রভাবশালী কয়েকজন মাতবর। স্কুলছাত্রী ভুন্দি সাঁতার জনতো কি-না জানতে চাইলে প্রথমে সাঁতার জানতো না বলে জানালেও পরে বলে সে সাঁতার জানতো। এ বিজ্ঞানের যুগে জিনে মানুষ মেরে ফেলেছে মানতে নারাজ সচেতন গ্রামবাসী। গ্রামে গুঞ্জন উঠেছে ভোরে স্কুলছাত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণের পর কেউ তাকে হত্যা করে লাশ পুকুরের পানিতে ফেলে রাখতে পারে। সঠিক পুলিশি তদন্ত হলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করেন। স্কুলছাত্রীর পিতা-মাতার কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেয় পুলিশ। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।

এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউল হক জানান, সুরতহাল রিপোর্টে কোনো প্রকার হত্যার আলামত না পাওয়ায় ও লাশের পারিবারের লোকজনের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়। গ্রামের সচেতনমহল মনে করে, স্কুলছাত্রী জান্নাতুল ওরফে ভুন্দির লাশের ময়নাতদন্ত করলেই আসল রহস্য উন্মোচিত হবে। জিনের দোহাই দিয়ে আসল খুনি পার পেয়ে যাবে কি-না তা খতিয়ে দেখে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।