দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে চলছে মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ : চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার: শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশ। কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছে না চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে ৪ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এতে শীতকালীন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশই রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে। গত কয়েকদিন ধরেই শীতের তীব্রতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে খেটে খাওয়া মানুষগুলো ছুটছে কাজের সন্ধানে। প্রচণ্ড শীতের সাথে পাল্লা দিয়েই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম। শীতের তীব্রতার সাথে শীতজনিত রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ায় জেলার শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।জেলার জীবননগর, দামুড়হুদা আলমডাঙ্গা ও সদর হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গত এক সপ্তায় প্রায় তিন শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সাধ্য অনুযায়ী তাদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন জানান, সীতাকুণ্ডু, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। সীতাকুণ্ডু, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মাঝারি  শৈত্যপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, হাতিয়া ও সাতক্ষীরা অঞ্চলসহ রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে শৈত প্রবাহ। ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রি হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। হিমালয়ের শীতল বাতাসের প্রবাহে ৫ জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, দিনাজপুর ও নীলফামারিতে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রির কিছু বেশি ছিলো। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন। ফাউন্ডেশনের জেলা শাখার সভাপতি আলাউদ্দিন আলমগীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. খন্দকার মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল আমিন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. শাহাদত হোসেন প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জেবুন নেছা রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক রুবাইত বিন আজাদ সুস্তির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক, ফাউন্ডেশন সদস্য শাহাবুল, পাভেল, রাজিব, রিমন, রহমান, মনি, খালিদ, সৌরভ, জিম, বৃত্ত, সম্রাট, তানজির, স্বরুপ, শামীম, আকিদুল, প্রমী, মিতিসহ সদস্যবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য তানিম হাসান তারেক।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে তীব্র শীতে আরো এক জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার সুটিয়া গ্রামের দুদ মিয়া (৭২) গত বুধবার রাতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি শীত মরসুমে দ্বিতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হলো।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি শীত মরসুমে এ উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে হাড়কাঁপানো শীতে উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে গত ৫ দিনে জীবননগরে খুব একটা সূর্যের দেখা মেলেনি। মাঝে মধ্যে দেখা মিললেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। এ কারণে ক্রমেই বাড়ছে শীতের প্রকোপ। দিন দিন তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে বেশি। দুর্ভোগ দুর্দশা বাড়ছে ছিন্নমূল মানুষের। কষ্টে পড়েছে বৃদ্ধ, শিশু এবং সকাল হলেই কর্মের সন্ধানে ছুটতে হয় এমন মানুষরা। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখিও কাবু হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে উপজেলায় মাথাব্যথা, কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কনকনে শীতে সন্ধ্যায় বাজার-ঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। এলাকার ছিন্নমূল মানুষেরা শীত থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাজারের পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে উপজেলার প্রধান সড়কগুলোতে দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া গত কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে রবি ফসলসহ বোরো বীজতলায় নানা রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের দুস্থ শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে ইউনিয়ন চত্বরে শতাধিক কম্বল  বিতরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন, ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, দানিয়েল মোল্লা, ইউনুচ আলী মোল্লা, সোনালউদ্দীন প্রমুখ।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মহেশপুরে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার উদ্যোগে মহেশপুরের ফতেপুরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। সভাপতিত্ব করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সরদার। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামিদ। উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি ডা. আতাউর রহমান, সাবেক যুবলীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যাবস্থাপক সাইফুল ইসলাম, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড চুয়াডাঙ্গা শাখার ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম, ইউপি সদস্য আশাদুল ইসলাম প্রমুখ।

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক আলহাজ আহসানুল কবীর, মুসলিম বেকারীর মালিক আলহাজ আশরাফ আলী ও লাইজু ফুয়েলের মালিক শিপলু জামান।