দেশজুড়ে ক্ষোভ-ধিক্কার : কামরুল সৌদিতে গ্রেফতার

শিশু রাজনের শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন : রিমান্ডে মুহিত

 

syl-pic-childe-kill

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটের কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে আসামি মুহিত আলমের পর তার স্ত্রীকেও আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শেখপাড়া এলাকায় মুহিতের বাড়ি থেকে স্ত্রী লিপি বেগমকে আটক করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। মুহিত আলমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অপরদিকে সিলেটের শিশু রাজন হত্যামামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলামকে (২৮) সৌদি আরবে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার জেদ্দা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।

চুরি নয়, বলাৎকারে রাজি না হওয়াই ছিলো শিশু রাজনের অপরাধ! এই ক্ষোভেই নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করা হয় শিশু রাজনকে। তাও আবার চুরির অপবাদ দিয়ে। রাজনের আত্মীয়স্বজন ও ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী লোকজন ঘাতকদের ব্যাপারে এমন তথ্যই দিয়েছেন। তাদের দাবি, চৌকিদার ময়না বলাৎকার ছাড়াও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। এসব অপকর্মে জড়িতদের কাছে সে সোর্স হিসেবে পরিচিত। চৌকিদার ময়না রাজনকে সৌদি ফেরত কামরুলের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষোভে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে খুন করা হয় রাজনকে। রাজনের ওপর চালানো নির্যাতন কতোটা পৈশাচিক তা উঠে এসেছে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে। এতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, রাজনের শরীরে মোট ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন ছিলো। এসব আঘাতে তার হৃদপিণ্ডে জমে গিয়েছিলো দু পাউন্ড রক্ত। যে কারণে রাজনের মৃত্যু ঘটে। চুরির অপবাদ দিয়ে শিশু রাজনকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে খুন করা হয়েছে। আসলেই  কি রাজন চোর? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গতকাল কুমারগাঁও এলাকায় গেলে এলাকাবাসী ও রাজনের আত্মীয়স্বজনরা আঁতকে ওঠার মতো এসব তথ্য দেন। খুন হওয়া শিশু রাজনের খালু ওমর ফারুক দাবি করেন, সৌদি প্রবাসী কামরুলের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। তার অভাবী ভায়েরা তার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। কামরুল দেশে এলে তাকে খুশি করার প্রতিযোগিতায় নামেন বাকি ভায়েরা। এই কামরুলের সোর্স হিসেবে শিশু রাজনকে কুপ্রস্তাব দেয় চৌকিদার ময়না মিয়া। এতে রাজি না হওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে খুঁটিতে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে খুন করা হয় শিশু রাজনকে। নিহত রাজনের আত্মীয় ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ বলেন, শিশু রাজন চোর নয়। চরিত্রহীনদের অপকর্মের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে।

এদিকে মামলায় মুহিতে স্ত্রী ও ইসমাঈল হোসেন আবলুস নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে জাঙ্গাইল মিরেরচক এলাকা থেকে আবলুসকে গ্রেফতার করা হয়। আবলুসের বাড়িতে হত্যা মামলার সকল খুনিরা বৈঠক করছে এমন খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অপরদিকে রিমান্ডে নেয়া মুহিতের শ্বশুরবাড়ি বিশ্বনাথে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে পুলিশ মুহিতের স্ত্রীকেও গ্রেফতার করে।

খুঁটির সাথে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন করে শিশু রাজন হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি মুহিত আলমকে ৫ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। সিলেটের মহানগর হাকিম আদালত-২’র বিচারক ফারহানা ইয়াসমিন সোমবার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন রোববার মুহিতকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। পরে শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।

এদিকে এ মামলার আরেক আসামি ইসমাঈল হোসেন আবলুকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) জালালাবাদ থানা এলাকার লামাকাজি মিরেরগাঁও থেকে গতকাল সোমবার ভোরে ইসমাঈলকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ইসমাইল শিশু রাজন হত্যার প্রধান আসামি মুহিত আলমের মামাতো ভাই। মামলার অন্যতম আসামি সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলামের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে রাজনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আঘাতের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মারা গেছে রাজন। তার শরীরের ৬৪টি স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাজনকে পৈশাচিক নির্যাতন করে লাশ গুমের চেষ্টা করে ঘাতকরা। ওইদিন ঘাতকরা বেলা ১১টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে তার লাশ পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামের মাঠে ফেলে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীর সন্দেহ হলে মাইক্রোবাসসহ পুলিশের হাতে আটক হয় মুহিত আলম। খবর পেয়ে রাতে থানায় গিয়ে পরিবারের সদস্যরা রাজনের লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করে। মামলায় আটক মুহিত আলম (২৫) ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৮), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে।