দুর্নীতির মামলায় বিচার শুরুর আগে গ্রেফতারে অনুমতি লাগবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতিসংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে দেশের সাধারণনাগরিকদের কাতার থেকে বের হয়ে নিজেদের আলাদা ও বিশেষ অবস্থানে রাখতে তৎপরসরকারি কর্মকর্তারা। প্রস্তাবিত ‘সরকারি কর্মচারী আইন’-এ তা ফুটে উঠেছে। এআইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (বিচার শুরু)গ্রহণের আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতার করতে হলে সরকারেরঅনুমোদন লাগবে।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে সরকারিকর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদননেয়ার বিধান রাখা হয়েছিলো। কিন্তু সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে হাইকোর্টতা অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করে দেন।বর্তমানে দুর্নীতিসংক্রান্ত মামলায় এফআইআরের (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) পরই যে কাউকে গ্রেফতার করা যায়।বর্তমানেদুর্নীতি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো অপরাধে এক বছরেরসাজাযোগ্য অপরাধ করলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হয়।প্রস্তাবিত আইনে সাজা তিন বছরের বেশি হলে চাকরিচ্যুত করার প্রস্তাব করাহয়েছে।এ অবস্থায় আইনটি অনুমোদন হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রস্তাবিত ‘সরকারি কর্মচারী আইন’ এর খসড়া সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনুমোদন নিয়েপ্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব সভার জন্য পাঠানো হয়েছে। আজ রোববারঅনুষ্ঠিত সচিব সভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনটি উঠছে। আজই সচিব সভার অনুমোদননিয়ে শিগগির এটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরদায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

নতুন আইনটির বিষয়ে জানতে চাইলেট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালকইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছিলাম, একটি বিশেষ মহলদুদক আইনে এটি করতে না পেরে হয়তো অন্য কোনো আইন দিয়ে তা করতে চাইবে। এখনসেদিকেই যাচ্ছেন তারা। আইনটি হলে দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে। একই ধরনের ঘটনায়বিশেষ শ্রেণির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে পারে না।’

ইফতেখারুজ্জামানআইনের ওই ধারার বিরোধিতা করে বলেন, ‘সরকার যে দুর্নীতিবিরোধী কথা বলে, এউদ্যোগ তার বিপরীত অবস্থান। আমরা বলছি না সব কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিকরেন। কিন্তু এটি হলে যারা দুর্নীতি করেন, তারা লাভবান হবেন ও যারাভালো কর্মকর্তা-কর্মচারী, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
দুদক আইনেরসংশ্লিষ্ট ধারা (৩২/ক) অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে হাইকোর্ট গতজানুয়ারি মাসে যে রায় দিয়েছিলেন তাতে বলা হয়, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদঅনুসারে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সংবিধানের ২৬(২) অনুচ্ছেদ অনুসারেমৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বাতিল হবে। সংবিধানের ৭(২)অনুসারে কোনো আইন যতোখানি সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততোটুকু বাতিলহবে। সংশোধিত আইনে একটি শ্রেণিকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে, যা সংবিধানের২৭ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। ওই ধারাটি আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বাতিলযোগ্য।