দুটি বীমা কোম্পানির নামে গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

 

একই ব্যক্তি দুকোম্পানির আদায়কারী : জমা রসিদ জাল

 

স্টাফরিপোর্টার: একই ব্যক্তি দুটি বীমা কোম্পানির আদায়কারী হিসেবে গ্রাহকদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারী গ্রাহকগণ বলেন, আমাদের রক্ত ঘামানো টাকা ভবিষ্যতের কথা ভেবে জমা করলেও তার অনেক জমা স্লিপ জাল।

ভুক্তভোগী দুটি বীমা কোম্পানির গ্রাহকগণ গতকাল সোমবার একযোগে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের নিকট এসে অভিযোগ করেন, কীভাবে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগে জানাগেছে, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সোনালী ইসলামী ডিপিএস প্রকল্প ও প্রগতি বীমা ডিভিশনের প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের নামে এসব প্রতারণা করা হয়েছে বা হচ্ছে। তাদের দাবি দুটি বীমা কোম্পানি হয়ে একই ব্যক্তি থেকে সহজ-সরল গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উজিরপুরের কাটু মল্লিকের ছেলে আব্দুল জব্বার একাই দুটি বীমা কোম্পানির আদায়কারী হিসেবে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। উত্তোলনকৃত এসব টাকার অনেক জমা স্লিপ ভুয়া বা জাল বলে তারা জানান। ববিতা খাতুন ও আজিমউদ্দীন নামে দুব্যক্তি এ দুটি বীমা কোম্পানির হোতা বলে গ্রাহকরা দাবি করলেও বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ডিভিসি জেলা কো-অর্ডিনেটর ববিতা মাথাভাঙ্গাকে জানান, প্রতিষ্ঠান দুটি একই ব্যক্তির নয়। আমরা বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্সে চাকরি করি। আদায়কারী আব্দুল জব্বার কোন কোম্পানিতে চাকরি করেন জানতে চাইলে ববিতা খাতুন বলেন, আগে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সে চাকরি করতো কিন্তু এখন সে বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্সে আদায়কারী হিসেবে চাকরি করেন। তাদের বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণামূলকভাবে ম্যাসিউড ডিপিএস ও মৃত্যুদাবির টাকা না দেয়া প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। আমি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাহেবের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করে ফেলেছি এবং সময় নিয়েছি। প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সটি কার?এ প্রশ্নের জবাবে ববিতা বলেন, জানিনা তবে শুনেছি আজাদ ও শাকিল নামে দুব্যক্তি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।

এদিকে অভিযোগকারী হাটকালুগঞ্জের গোলনাহার বলেন, আমার স্বামী আব্দুল গফুর ৪ মাস আগে স্ট্রোক করে মারা যান। মারা যাওয়ার আগেই ৩৭ কিস্তি পরিশোধ করে গেছেন। কিন্তু খাতা-কলমে ৩২ কিস্তি জমা দেখালেও ৫ কিস্তির টাকা জমা হয়নি। অসহায় গোলনাহার বেগম নমিনি হিসেবে স্বামীর মৃত্যু দাবির দুলাখ টাকা কোম্পানি থেকে তো দিচ্ছেই না মূল জমা টাকারও হিসেবে গরমিল দেখাচ্ছে। একইভাবে কোষাঘাটার টিটলী খাতুনের ২০০ টাকা হারে জমা দেয়া ৩৬ কিস্তির ৭টি কোহিনুর ইসলামের ৬ কিস্তির ২টি, শাহিনুরের ১৮ কিস্তির ৭টি, হাটকালুগঞ্জের রাহি খাতুনের ৩০ কিস্তির ৭টি,মাজেদা খাতুনের ১৭ কিস্তির ৪টি, কোষাঘাটার ইসলামের ২৫ কিস্তির ৭টি, আরজেত আলীর ৩২ কিস্তির ১২টি, কামরুনাহারের ১৭ কিস্তির ৮টি, আন্না বেগমের ৩০ কিস্তির ৫টি ভুয়া রসিদ বা জাল জমা স্লিপ দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দাবি বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সোনালী ইসলামী ডিপিএস প্রকল্প ও প্রগতি বীমা ডিভিশনের প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নামে প্রায় দুশতাধিক গ্রাহকের নিকট থেকে ৩০ লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপরে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের নিকট অভিযোগের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জ এলাকার আদর্শ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী আব্দুল গাফফার কবিরাজের ২য় তলায় বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সোনালী ইসলামী ডিপিএস প্রকল্প ও ৩য় তলায় প্রগতি বীমা ডিভিশনের প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জেলা কার্যালয়। এখানে বসেই বীমার নামে চলে মানুষ ঠকানোর এসব কার্যক্রম।