দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশনের মালিক শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রতারণার অভিযোগ

 

 

লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ : একই জমি বারবার মডগেজ : ব্যাংক পায় কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার অসংখ্য মানুষের সাথে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। শেষমেশ জমির ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে ঝিনাইদহের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকার লোন উত্তোলন করতে গিয়ে তার প্রতারণা ফাঁস হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা ইসলামী ব্যাংকও তার কাছে ৯১ লাখ টাকা পায় বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে শাহজাহান আলী প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে দামুড়হুদা ব্রিজপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন। প্রথমে মুদি দোকানের ব্যবসা করলেও পরবর্তীতে তিনি লাখ লাখ টাকার মালিক বনে যান। ২০০৭ সালে তিনি দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশনটি ৩৬ লাখ টাকায় কিনে নেন। ওই বছরের জুলাই মাসে দামুড়হুদা দশমী এলাকায় তার ৩৩ নম্বর দাগের ১২ শতক জমির মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন নামের একজনের কাছে ৫ শতক ও রহিদুল নামের একজনের কাছে ৫ শতক বিক্রি করে দেন। কিন্তু চতুরতার সাথে তিনি জমি রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে ক্রেতাদের বছরের পর বছর ঘোরাতে থাকেন। এরই মধ্যে ক্রেতাদেরকে না জানিয়ে ওই জমি ইসলামী ব্যাংক লি. চুয়াডাঙ্গা শাখায় মডগেজ দিয়ে সে বছরেই ৭০ লাখ টাকা ঋণ নেন শাহজাহান আলী। কিন্তু এক পর্যায়ে তিনি ব্যাংকে নির্ধারিত কিস্তি দেয়া বন্ধ করে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই ব্যাংকে বর্তমানে তার ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১ লাখ টাকায়। এ অবস্থায় শাহজাহান আলীর একটি ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হলে ব্যাংকে তার ২২ লাখ টাকা পাওনা হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই ২২ লাখ টাকা ৯১ লাখ টাকা ঋণের সাথে সমন্বয় করার প্রস্তাব দিলে তিনি উল্টো ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তোলেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

অভিযোগকারীরা আরো জানান, বছর দুয়েক আগে শাহজাহান আলী এমএলএম কোম্পানি খুলে এক লাখে মাসে ২২ হাজার টাকা মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। দামুড়হুদার চটব্যবসায়ী হাবিব ১২ লাখ টাকা দেন ওই লাভের আশায়। পরে শাজাহান আলীর কাছ থেকে টাকা ফেরত না পাওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেন।

সূত্র আরো জানায়, জমিজমার কাগজপত্র ইসলামী ব্যাংকে মডগেজ থাকা সত্ত্বেও একই জমির কাগজপত্র নতুন করে উত্তোলন করেন এবং ওই জমি পুনরায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লি. ঝিনাইদহ শাখার অনুকূলে ২ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার শর্তে গত ২২ জুলাই মডগেজ রেজিস্ট্রি করেন দামুড়হুদা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। বিষয়টি জানাজানি হলে দামুড়হুদায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টি ঝিনাইদহ ডিবিএল ব্যাংকে জানানো হলে তার ২ কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ ভেস্তে যায়।

একটি সূত্র জানায় দামুড়হুদার ছোট বলদিয়ার চেয়ারম্যান নামে পরিচিত জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে বাকিতে প্রায় ২৪ লাখ টাকা মূল্যের ধান, গম, ভুট্টা, পাট ও পেঁয়াজ কিনে শাহজাহান আলী আত্মসাৎ করেন। তিনি এ উপজেলার খলিসাগাড়ি, হুদোপাড়া, হোগলডাঙ্গাসহ আশপাশ এলাকার কৃষকের কাছ থেকেও একই ধরনের ১২ লাখ টাকার ফসল বাকিতে কিনে আর টাকা দেননি। ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে দিয়ে দেবেন বলে তার আপন ভাই কার্পাসডাঙ্গার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেলিমের কাছ থেকেও তিনি ২০ লাখ টাকা নিয়ে আর দিচ্ছেন না। চাচাতো ভাই বজলুকে লাভ দেয়ার শর্তে চেকের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা নিয়ে তাও দিচ্ছেন না তিনি।

বর্তমানে শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে দামুড়হুদা এলাকার অসংখ্য পাওনাদার ফুঁসে উঠেছেন। খুব শিগগিরই তার দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশনটিও নিলামে উঠবে বলে সূত্র জানায়।