দামুড়হুদায় পীরের মুরিদি গ্রহণ না করায় গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা : মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার : কথিত পীর লিয়াকতের শাস্তির দাবি

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় পীরের মুরিদি গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় শিউলী খাতুন (২৬) নামের এক গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবেশীরা আহত গৃহবধূ শিউলীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পিতার বাড়িতে নেয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গুরুতর আহত গৃহবধুর গলায় রশির দাগ রয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার হেমায়েতপুর বেড়বাড়ি গ্রামে গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে ভণ্ডপীর লিয়াকত আলীর উপস্থিতিতে তার দুই অনুসারী তরুলতা বেগম (৫০) ও আরিছন নেছা (৪৫) এবং স্বামী বিল্লাল হোসেন গৃহবধু শিউলীর গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এদিকে ভণ্ডপীর লিয়াকত আলীর শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের হেমায়েতপুর বেড়বাড়ির তেতুল শেখের ছোট মেয়ে শিউলী খাতুনের দ্বিতীয় বিয়ে হয় একই গ্রামের বজুলের ছেলে বিল্লালের সাথে। বিয়ের পর থেকেই গাঁজাখোর স্বামী বিল্লাল যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী শিউলীকে দফায় দফায় মারধর করতো। দিনমজুর পিতা তেতুল শেখ মেয়ের সুখের আশায় জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দেন। এরই মধ্যে তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। নাম রাখা হয় গোলাপী। তার বয়স এখন ১ বছর। কিন্ত বছর গড়াতে না গড়াতেই নেশা করে সমস্ত শেষ করার পর আবারও টাকার জন্য স্ত্রী শিউলীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে গাঁজাখোর স্বামী বিল্লাল। গৃহবধু শিউলীর পিতা সে দফায়ও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে একটি গরু কিনে দেন। স্বামী বিল্লাল এরই মধ্যে ওই গ্রামের সাবেক মেম্বার কথিত পীর লিয়াকত আলীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। পীর লিয়াকত আলী নেশাখোর বিল্লালকে বলে তোর ভাগ্যে ছেলে নেইরে পাগল। তবে তোর বউ যদি আমার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তবেই ছেলের মুখ দেখবি।  এ কথার পর বিল্লালের পিতা বজুল, নানি তরুলতা ও ছোট নানি আরিছন নেছা কথিত পীর লিয়াকতের শিষ্যত্ব গ্রহণ কনরে স্বামী বিল্লাল ও তার পরিবারের লোকজন কথিত পীরের শীষ্যত্ব গ্রহণ করলেও গৃহবধু শিউলীকে কোনোভাবেই রাজি করাতে পারেনি তারা। সম্প্রতি ওই কথিতপীরের শিষ্যত্ব গ্রহণের জন্য গৃহবধূ এক সন্তানের জননী শিউলীর ওপর অনবরত চাপ সৃষ্টি করতে থাকে স্বামী বিল্লাল ও তার পরিবারের লোকজন। তাকে রাজি করাতে না পেরে শেষমেশ ওই কথিত পীরের কথামত গৃহবধূ শিউলীর ওপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। এরই এক পর্যায়ে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে ভণ্ডপীরের উপস্থিতিতে তার দুই অনুসারী তরুলতা বেগম, আরিছন নেছা এবং নেশাখোর স্বামী বিল্লাল গৃহবধূ শিউলীর গলায় লাইলনের রশি পেঁচিয়ে বসতঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। গৃহবধূ শিউলীর গোঙানির শব্দে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে তাকে মৃত প্রায় অবস্থায় উদ্ধার করে পিতার বাড়িতে নিয়ে যায়। আহত গৃহবধূকে গ্রামেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শিউলীর মা মনোয়ারা বেগম জানান, মেয়ের নির্যাতনের কথা শুনে দিন পনের আগে আমি তাকে আনতে গিয়েছিলাম। কিন্ত জামাই বিল্লাল ও তার পরিবারের লোকজন মেয়েকে নিয়ে আসতে দেয়নি। এমনকি তার সাথে দেখা পর্যন্তও করতে দেয়নি। তিনি আরও জানালন মেয়েকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হতো। বাড়ির বাইরে আসতে দেয়া হতো না। কথাগুলো বলার সময় মা মনোয়ারার দু চোখ বয়ে ঝরে পড়ছিলো বিন্দু বিন্দু অশ্রু। পিতা তেতুল শেখ জানান, মেয়ের সুখের আশায় কয়েক দফায় জামাইয়ের হাতে প্রায় এক লাখ টাকা তুলে দিয়েছি। কিন্তু মেয়ে আমার সুখ পেলো না বলে তিনিও কাঁদতে লাগলেন।

প্রতিবেশী মৃত খইরদ্দিন শেখের ছেলে আবু তালেব, ইউপি সদস্য সেলিম উদ্দীনসহ বেশ কিছু এলাকাবাসী জানান, শিউলীর প্রথম বিয়ে হয় উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের জুয়েলের সাথে। সেই ছিলো বাউত্তারা। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই বউকে ফেলে ঢাকায় চলে গোল। পরে তার সুখের আশায় গ্রামেই দ্বিতীয় বিয়ে দেয়। কিন্তু ওখানেও সুখ হলো না। আসলেই ওর কপালে সুখ নেই। তিনি আরও বলেন, শিউলীর স্বামী বিল্লাল গাঁজা খোর এবং তার বাপ বজুলও গাঁজা সেবন করেন। কথিত পীর গ্রামেরই সাবেক মেম্বার লিয়াকত আলী বছর দুয়েক ধরে ফকিরী কেরামতি দেখিয়ে পীরসেজে নেশাখোর বিল্লাল ও তার পরিবারের লোকজনসহ এলাকার ৬-৭ জনকে মুরিদ বানিয়েছে। তাদের কাজই গাঁজা খাওয়া। তারা গাঁজাসেবন করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত। এদিকে গৃহবধূকে হত্যার অপচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত কথিত পীর লিয়াকত আলী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ।