দর্শনা কাস্টমস সার্কেলে ফি বছর সরকার পাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব

নেই লোকবল শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কার্যক্রম ॥ এবারো পেরুলো লক্ষ্যমাত্রা

 

দর্শনা অফিস: দর্শনা কাস্টমস সার্কেল। যেখান থেকে ফি বছর সরকার গুনছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব। অথচ এখানে নুন্যতম উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ জন্য নেই কারো মাথা ব্যাথা। শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই করা হচ্ছে বসবাস, চলছে অফিসের কার্যক্রম। লোকবল সমস্যাতো লেগেই আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার। অফিসের কার্যক্রম হচ্ছে বিঘ্নিত। এবারো সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। দর্শনা কাস্টমস সার্কেল কবে নাগাদ প্রতিষ্ঠিত তার সঠিক হিসেব কেউ দিতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। কাস্টমস এলাকায় অফিস কক্ষ, গোডাউন, অফিসার ও স্টাফদের বসবাসের জন্য এফজি এবং এইচ কোয়ার্টারের কক্ষ সংখ্যা প্রায় আড়াই ২শ। ভবনগুলো ১৯৮৫ সালে সরকার পরিত্যাক্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেও নেয়নি কোনো পদক্ষেপ। হয়নি নতুন করে কোনো ভবন, করা হয়নি ভবনের সংস্কার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে অফিসের কার্যক্রমের পাশাপাশি করা হচ্ছে বসবাস। এরই মধ্যে গোডাউনগুলো পরিপূর্ণ ধসে যাওয়ায় তা অব্যবহৃত রয়েছে। অফিস ও আবাসিক কোয়ার্টারগুলোই দীর্ঘদিন থেকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ গোডউনে মালামাল রাখায় পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ।

এদিকে প্রায় আড়াইশ কক্ষের মধ্যে ১৪/১৫টি কক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে স্টাফরা। কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে অফিস হিসেবে। ১০/১২টি কোর্য়াটারে রয়েছে বহিরাগতরা। শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ জরাজির্ণ ভবনগুলো যেকোনো সময় ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। সরকার দর্শনা কাস্টমস সার্কেল থেকে প্রতি বছর শ শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে। কাজের তুলনায় এ সার্কেলে লোকবল একেবারেই অপ্রতূল। তুলনামূলক কর্ম লোকবল দিয়েই হেলায় ফেলায় চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। একেক জন অফিসারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দর্শনায় দেয়া হচ্ছে। যে কারণে দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে অফিসারদের।

এদিকে মাত্র ১২ জন নিরাপত্তা সদস্য রয়েছে এ সার্কেলে। এদের মধ্যে ৪ জন প্রতিনিয়ত দায়িত্বে থাকেন কাস্টমস চেকপোস্টে। বাকি ৮ জন এ সার্কেলে থাকেন নিরস্ত্র। সার্কেলের গোডাউনে কোটি কোটি টাকার মালামাল জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পাহারা দিতে হয় নিরাপত্তা সদস্যদের। ফলে সশস্ত্র চোরদের মহাৎসব লক্ষ্য করা যায়। চোরদের ঠেকাতে বেকায়দায় পড়তে হয় নিরস্ত্র নিরাপত্তা সদস্যদের। অথচ দর্শনা কাস্টমস সার্কেল প্রতিবছরই সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আসছে। সরকারের খাতায় ফি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব জমা হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরের দর্শনা কাস্টমস সার্কেলের রাজস্ব আদায়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩২ কোটি টাকা। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এবার সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ কোটি টাকা বেশি। রাজস্ব আয়ের খাতের মধ্যে এবার সিডি খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ কোটি ৮৩ লাখ ৮৮ হাজার ২৭১ টাকা ১ পয়সা, আরডি এবং এসডি খাতে আদায় নেই। ভ্যাট উত্তোলন করা হয়েছে, ২৪ কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৭৯১ টাকা ৭ পয়সা, এটিবি থেকে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬ হাজার ৭৩০ টাকা, এআইটি থেকে ৮৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৫ টাকা, সিঅ্যান্ডএফ ভ্যাট আদায় ২৫ লাখ ৬ হাজার ৬৯৮ টাকা, সিঅ্যাফে আয়কর ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৫ টাকা ও পিএসআই থেকে ১১ লাখ ৮০ হাজার ৩শ ৪ টাকা। গত অর্থ বছরের শেষদিন পর্যন্ত সর্বমোট রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ৪০ কোটি টাকারো বেশি।

সরকার যে বিভাগ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা গুনছে। সে বিভাগের দিকে নজর নেই কেন? এ প্রশ্ন অনেকেই মুখেই। সচেতনমহল অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, সরকার মাত্র ১ বছরের রাজস্ব এ সার্কেলে উন্নয়নে খরচ করলেই যতেষ্ট। সরকারের কাছে আবারো এলাকাবাসী দাবি তুলেছে দর্শনা কাস্টমস সার্কেলের উন্নয়ন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের মধ্যদিয়ে অসংখ্য জীবনহানীর আশঙ্কা থেকে রক্ষা করার জন্য। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সরকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।