দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎকে হত্যার দায়ে ছাত্রলীগের ৮ নেতার ফাঁসি ১৩ জনের যাবজ্জীবন

স্টাফ রিপোর্টার: দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীর ফাঁসি ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে অভিযুক্ত ২১ আসামির সবাইকে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৪ ও ১৪৩ ধারায় দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। গতকাল বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে তিনি এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় কাঠগড়ায় ৮ আসামি হাজির ছিলেন।

দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ছাত্রলীগ ক্যাডার রফিকুল ইসলাম শাকিল (চাপাতি শাকিল), মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, কাইউম মিয়া টিপু, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- এইচএম কিবরিয়া, খন্দকার মো. ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন ইমরান, আজিজুর রহমান আজিজ, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন।

রায়ের আদেশে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া দণ্ডের অতিরিক্ত বেআইনি সমাবেশে অংশ নেয়ায় দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারার অপরাধে তাদের প্রত্যেককে ৬ মাস করে কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির ২১ আসামির সবাইকে দণ্ড দেয়া হলো। তাদের মধ্যে ১৩ আসামি পলাতক। পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। তাদের পলাতক দেখিয়েই এ রায় ঘোষণা করা হলো। মামলা দায়েরের ১ বছর ১০ দিনের মাথায় এ রায় ঘোষণা করা হয়।  আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। কারাগারে থাকা ৮ আসামিকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের বিশ্লেষণে বিচারক বলেন, মানব সমাজে কোনোরকম অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড কোনো বিবেকবান ও গণতন্ত্রকামী মানুষের কাম্য নয়।

বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডটি অন্য দশটি হত্যাকাণ্ডের মতো নয়। বরং বিভিন্ন দিক থেকে ব্যতিক্রম ও স্পর্শকাতর। কারণ এ হত্যাকাণ্ডটি রাতের আঁধারে কিংবা গোপনে করা হয়নি বরং প্রকাশ্য দিবালোকে আসামিকে ছুরি, চাপাতি, লোহার রড ও লাঠি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। যা মানবতা ও নৈতিকতার কোনো স্তরেই নিরপরাধ এমন মানুষের প্রাণহানি ও অহেতুক রক্তপাত সমর্থনযোগ্য নয়। উপরন্তু ঘটনার সময় আসামিদের দ্বারা বিশ্বজিৎকে প্রচণ্ডভাবে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করার দৃশ্যটি আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তা দেখে সমগ্র মানুষ হতবাক ও আতঙ্কিত হয়েছে। বস্তুত ওই অপরাধের নিষ্ঠুরতা ছিলো এমনই মর্মান্তিক যা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে ও অপরাধীরা অর্থাৎ আসামিরাও রাষ্ট্রযন্ত্রে স্বাভাবিক ও সহনীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে বহির্বিশ্বসহ দেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা দেয়ার প্রয়াস চালিয়েছে। কাজেই সামগ্রিকভাবে অপরাধের মাত্রা পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও গভীরতা বিবেচনা করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করলে ন্যায়বিচার সমুন্নত হবে বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন।

রায়ে আরও বলা হয় হত্যাকৃত ব্যক্তি ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, যুবক-বৃদ্ধ যে রকমই হোক না কেন, হত্যাকারীকে এর শাস্তি পেতেই হবে।
ট্রাইব্যুনালের পিপি এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এমদাদের আইনজীবী মো. সেলিম সরকার বলেন, এ রায় যথাযথ হয়নি। মামলার অসংখ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করে ট্রাইব্যুনাল একপেশে রায় দিয়েছেন। অবশ্যই আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো। আশা করি সর্বোচ্চ আদালতে আমরা খালাস পাবো।

বিশ্বজিৎ দাসের বড় ভাই উত্তম দাস এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে তিনি দ্রুত এরায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান। তিনি বলেন, আমরা ভাই হারিয়েছি। ভাইকে ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই আসামিদের ফাঁসির প্রত্যাশা ছাড়া আর কিছু চাওয়ার নেই। রায় কার্যকর করা হলে বিশ্বজিতের আত্মা শান্তি পাবে। তবে বিশ্বজিতের বাবা-মা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তারা তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর ভোজেশ্বরে আছেন বলেও জানান তিনি। বিশ্বজিৎ হত্যার রায় জেনে উপস্থিত উৎসুক জনতা সন্তোষ প্রকাশ করে। আসামিদের সবারই ফাঁসি আশা করেছিলেন বলে জানান অনেকেই।

মামলার বিচারিক কার্যক্রম মামলার বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগপত্রভুক্ত ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনকে আদালতে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন। ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষে বিশ্বজিৎ দাসকে সংঘবদ্ধভাবে কোপানোর সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ফুটেজ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীত প্রমাণিত হয়েছে মর্মে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করে। টানা ছয় তারিখে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষে গত ৪ ডিসেম্বর মামলার রায়ের জন্য এ দিন ধার্য হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে তার দেয়া সাক্ষীর সাক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে এ হত্যা ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, কারাগারে থাকা ৮ জনের মধ্যে শাকিল, নাহিদ, এমদাদ ও শাওন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ও অন্য আসামিদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এছাড়াও ঘটনার দিন গত বছরের ৯ ডিসেম্বর এটিএন বাংলা চ্যানেলের সন্ধ্যা ৭টার সংবাদ থেকে ধারণকৃত ফুটেজের ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, শাদা ক্যাপ মুখে রুমাল বাঁধা হাতে রক্তমাখা ছুরি নিয়ে ওপর থেকে নিচে নামতে দেখা যাচ্ছে আসামি রাজন তালুকদারকে। লাল গেঞ্জি গায়ে কাইয়ুম ওরফে টিপুকে অস্পষ্টভাবে ঘটনাস্থলে দেখা যাচ্ছে। হাফ সোয়েটার লাল শার্ট গায়ে খন্দকার ইউনুসকে ইনটেনসিভ ডেন্টাল কেয়ারের ভেতর থেকে ইট দিয়ে মারতে মারতে নিয়ে আসতে দেখা যায়। ভিকটিম বিশ্বজিতের শরীরে আঘাতের ফলে রক্ত বারান্দায় পড়েছে এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

শাদা ফুলহাতা শার্ট, নীল রঙের সোয়েটার পরা আসামি নাহিদকে বাম হাতে ভিকটিমকে ধরে ডান হাতে মারতে দেখা যায়। সাদা শার্ট, জিন্সের প্যান্ট পরা সাদা চাদর গায়ে আসামি আবদুল আজিজকে বাম হাতে বিশ্বজিৎকে ধরে ডান হাতে মারতে দেখা যায়। ফুলহাতা সাদা হালকা মেরুন কালারের স্ট্রাইপ গেঞ্জি পরা আসামি রাশেদুজ্জামান শাওনকে ডান হাতে থাকা রড দিয়ে বিশ্বজিৎকে পেটাতে দেখা যায়। শাদা স্ট্রাইপ ফুলহাতা গেঞ্জি জিন্সের প্যান্ট পরা আসামি ইমদাদকে দুই হাতে রড দিয়ে বিশ্বজিতের মাথা লক্ষ্য করে মারতে দেখা যায়। কালো ফুলহাতা গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরা আসামি রফিকুল ইসলামকে দুই হাতে রড দিয়ে ভিকটিমকে পেটাতে দেখা যায়।

একুশে টেলিভিশন চ্যানেলে ঘটনার সময় সকাল ৯টায় ধারণকৃত দৃশ্যের ধারাভাষ্যে আসামি নাহিদ, এমদাদ, কিবরিয়াকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ছাত্রলীগ কর্মীদের মিছিলের সামনের দিকে দেখা যাচ্ছে। রফিকুল ইসলাম শাকিলকে ইনটেনসিভ কেয়ারে প্রবেশের দরজায় বিশ্বজিৎকে ডান হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে কোপাতে দেখা যায়। কিবরিয়াকে পাশে দাঁড়ানো দেখা যাচ্ছে। চ্যানেল ৭১ টেলিভিশনে ধারণকৃত দৃশ্য ও ধারাভাষ্যে ঘিয়ে রঙের সাফারি পরা আসামি তমালকে হাতে কাঠের রোলার দিয়ে বিশ্বজিতের মাথায় আঘাত করতে দেখা যায়। লাল শার্ট ও চশমা পরা ওবায়দুল কাদের তাহসিনকে বিশ্বজিৎকে ভেতর থেকে টেনে এনে শাকিলকে কোপাতে সহায়তা করতে দেখা যায়। আসামি আলাউদ্দিনের পরনে ছিল সাদা সোয়েটার, যাতে ভিকটিমের শরীরের রক্ত লাগা অবস্থায় বিশ্বজিতের পকেট হাতাতে দেখা যায়। শাকিলকে ভিকটিমের রক্ত তার গায়ে লাগা অবস্থায় বের হয়ে আসতে দেখা যায়। আল আমিনকে টিয়া রঙের ফুলহাতা গলাবদ্ধ গেঞ্জি পরা অবস্থায় ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

বাংলাভিশন চ্যানেলে ধারণকৃত ফুটেজে আসামি লিমনকে খয়েরি জ্যাকেট পরা অবস্থায় ঘটনাস্থলে দেখা যায়। সাইফুলের আংশিক ছবি দেখা যায়। তার মুখ দেখা যায়। আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর মামলাটি বিচারের জন্য বদলিমূলে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। ২৬ মে সংশ্লিষ্ট বিচারক মো. জহুরুল হক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন। ২ জুন সব আসামির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে হত্যার অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন একই বিচারক। গত ১৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল আইন অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মামলাটির বিচার নিষ্পত্তির জন্য ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। ২৭ জুন তা গৃহীত হয়। ১৪ জুলাই সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শুরু হয়ে গত ২৪ অক্টোবর শেষ হয়।
মামলা দায়েরের ২ মাস ২৪ দিন তদন্ত শেষে গত ৫ মার্চ ৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে ২১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (দক্ষিণ) পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামুন-অর-রশিদ, ফারুক হোসেন, কাজী নাহিদ-উজ্জামান তুহিন ও মোসলেহ উদ্দিন মোসলেম নামের ৪ জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২০০-২৫০ জনের একটি অবরোধবিরোধী মিছিল বের হয়। মিছিলটি মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে এলে কয়েকজন আইনজীবী অবরোধের পক্ষে স্লোগান দেন। এ সময় অবরোধবিরোধী মিছিলকারীরা কয়েকজন আইনজীবীকে পিটিয়ে জখম করেন। এরপর মিছিলটি ভিক্টোরিয়া পার্কের দিকে যেতে থাকলে মিছিলের পেছনের অংশে ২-৩টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় বিশ্বজিৎ দৌড় দিলে ককটেল বিস্ফোরণকারী সন্দেহে মিছিলকারীরা তাকে ধাওয়া করে আটক করেন। তারা বিশ্বজিৎকে বেধড়ক পেটাতে ও কোপাতে শুরু করলে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে রাস্তার এক পাশের ইনটেনসিভ ডেন্টাল কেয়ারের ভেতরে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকেও ইট, কাঠের রোল ও লোহার রড দিয়ে মারতে মারতে বের করে আনেন আসামিরা। এরপর বিশ্বজিৎকে কিরিচ ও চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আসামি রাজনই প্রথম তার হাতে থাকা কিরিচ দিয়ে বিশ্বজিতের পিঠে ঘা বসান। এরপর রক্তাক্ত বিশ্বজিৎকে শাকিল তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকেন। পরে আসামি তমাল ও অন্যরা লোহার রড দিয়ে বিশ্বজিৎকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন।

গুরুতর আহত বিশ্বজিৎ তাদের হাত থেকে বাঁচতে শাঁখারিবাজারের দিকে দৌড় দেন। এ সময় রিকশাওয়ালা রিপন তাকে নিয়ে তার টেইলারিং দোকানের দিকে নিয়ে যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বিশ্বজিৎ মারা যান। ওইদিন রাতেই অজ্ঞাতনামা ২৫ আসামির বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্ট থানার উপপরিদর্শক জালাল আহমেদ। ঘটনার তিন দিন পরই বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত রফিকুল ইসলাম শাকিল, মীর মোহাম্মদ নুরে আলম লিমন ও ওবায়দুল হককে স্থায়ী বহিষ্কার এবং মাহফুজুর রহমান নাহিদ ও মো. এমদাদুল হকের সনদ বাতিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আসামিরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। যদিও ঘটনার পরপরই আওয়ামী লীগ দাবি করে, বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, তারা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন নিরীহ টেইলার্স ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ। রাত সোয়া ৮টার দিকে অজ্ঞাতনামা ২৫ আসামির বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় মামলা করে পুলিশ।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল আদালতে অতিরিক্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়।