দমকা হাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে বিদ্যুত সরবরাহ লাইনে ত্রটি-বিভ্রাট

ভ্যাপসা গরমে আলমডাঙ্গায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু : দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড় ও বজ্রপাতে নিহত ৮

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বৃষ্টি হয়নি। দিনের ভ্যাপসা গরম শেষে সন্ধ্যায় দমকা বাতাসে ধুলো উড়িয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ টেনে আনে। অবশ্য রাত বৃদ্ধির সাথে সাথে শীতল বাতাস কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরায়। ভ্যাপসা গরমে আলমডাঙ্গায় হিটস্ট্রোকে এজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবোশেখি ঝড়ে ঘর ও গাছের নিচে চাপাপড়ে এবং বজ্রপাতে ৮ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৩৮ জন আহত হয়েছেন।

দমকা হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থার নাজুক রূপ ফুটে উঠেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর ঝড়ো বাতাস উঠতেই বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার একের পর এক বিকল হতে থাকে। কয়েকটি ফিডারে তার পড়ে ট্রিপ করে। বিজিবি ফিডারের ত্রুটি তো মধ্যরাত পর্যন্তও খুঁজে পাননি সংশ্লিষ্টরা। অভিন্ন দশা ছিলো হাসপাতাল ফিডারে। তবে মধ্যরাতের আগেই এ ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ পুনরায় চালু সম্ভব হয়। সামান্য বাতাসেই চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে কেন? সংশ্লিষ্টদের মুখ থেকে এ প্রশ্নের তেমন জবাব না মিললেও অভিজ্ঞমহলের অনেকেই বলেছেন, প্রতিবছর গরমের শুরুতে গাছের ডাল কেটে লাইনের তার পরিষ্কার করতে হয়। ট্রান্সফমরমারগুলোর দিকেও বাড়তি নজর দিতে হয়। এবার গরমের শুরুতে তেমনটি লক্ষ্য করা যায়নি। যদিও খাতা-কলমে গাছের ডাল কাটা হয়েছে, ট্রান্সফরমারগুলোরও বাড়তি যত্ন নেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৩ ও সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো রাঙ্গামাটিতে ৩৭ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন ছিলো রাজশাহীতে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে মূলত দেশের ভিবিন্ন স্থানে বৃষ্টির প্রভাবে। যদিও চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। গতকাল সন্ধ্যায় বৃষ্টির সম্ভাবনা ফুটে উঠলেও দমকা হাওয়ায় সরিয়ে দেয় আকাশের মেঘ। ধুলো উড়ে অস্বস্তির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিদ্যুত বিপর্যয়ে গ্রাহকসাধারণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। চুয়াডাঙ্গা বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্রে রাতে যোগাযোগ হলে বলা হয়, টিঅ্যান্ডটির সামনের ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় তা মেরামত করে পুনরায় বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সময় লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা। বিজিবি ফিডারের ফল্ট মধ্যরাত পর্যন্ত শনাক্ত করতে না পারায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিলো। মধ্যরাতের আগেই হাসপাতাল ফিডারের ত্রুটি শনাক্ত করে পুনরায় বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হয়। হাজরাহাটি ফিডারে ত্রুটি দেখা দিলেও অল্প সময়ের মধ্যেই সে ত্রুটি এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। ফলে পুনরায় বিদ্যুত সরবরাহ চালু করতে বেশি সময় লাগেনি। বড়বাজার ফিডারের ত্রুটিও দ্রুত মেরামত করে বিদ্যুত সবরাহ করা সম্ভব হয়। মেহেরপুরে কয়েকটি ট্রান্সফরমারে ত্রুটি দেখা দেয়ার কারণে দীর্ঘ সময় বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি।

আবহাওয়া অফিস বিদ্যুতের পূর্বাভাস দিতে গিয়ে বলেছে, পশ্চিমা লঘুচাপ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্নএলাকায় অবস্থান করছে। স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ফলে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে,আলমডাঙ্গায় দু ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। ডম্বলপুরের শহিদুল ইসলাম(৫৮) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে হাসফাঁস করতে করতে গতকাল আছরের নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে যাওয়ার পথে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে সাথে সাথেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকেশহরের মিয়াপাড়ার বিশিষ্ট বীজব্যবসায়ী বোরহান উদ্দীন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানাগেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ডম্বলপুর গ্রামের মৃত আকবার আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৫৮) গত কয়েকদিন প্রচণ্ড দাবদাহে কাহিল হয়ে পড়েন।গতকাল সকাল থেকেই সূর্যের তাপে তিনি হাসফাঁস করছিলেন। গত বুধবার বিকেলে আছরের আজান হলে তিনি বাড়ি থেকে মসজিদে যাওয়ার জন্য বের হন। পথের মধ্যেই হিটস্ট্রোকেআক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।অন্যদিকেগতকাল শুক্রবার দুপুরে আলমডাঙ্গা শহরের বাজারপাড়ার বিশিষ্ট বীজব্যবসায়ী বোরহান উদ্দীন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে ও পরে কুষ্টিয়ার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার রাতে কালবোশেখি ঝড়ে ঘর ও গাছের নিচে চাপাপড়ে এবং বজ্রপাতে ৮ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যেলালমনিরহাটে বজ্রপাতে চারজন নিহত এবং গুরুতর আহত হয়েছে তিনজন। নীলফামারীতেবজ্রপাতে দুজন নিহত এবং তিনজন আহত হন। এছাড়া ঘরের নিচে চাপা পড়ে দুভাইবোন আহত হয়। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজশাহীতে গাছচাপা পড়েএকজন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। চট্টগ্রামে বজ্রপাতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।কুষ্টিয়ায় ঝড়ে দেড় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। ঝড়ের কারণে সৃষ্টঅগ্নিকাণ্ডে শতাধিক বাড়ি ভস্মীভূত হয়। এতে দেড় কোটি টাকার মালামালক্ষয়ক্ষতিসহ ২০টি গবাদি পশু মারা যায়। গত বৃহস্পতিবার রাতে খুলনায় মরসুমেরবৃষ্টিপাত হয়েছে। একটানা ৮০ দিন খরার পর সামান্য বৃষ্টি হলেও তাতেই জনজীবনেস্বস্তি ফিরে আসে। নাটোরে কালবোশেখি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচাঘরবাড়ি, ভেঙে পড়েছে কয়েকশগাছপালা। গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায়অনেক এলাকায় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ভোলায় ঝড়ে ২০ বাড়ি বিধ্বস্ত ও বহুগাছপালা ভেঙে পড়ে। ঝড়ের কবলেপড়ে ধানবোঝাই একটি ট্রলার ডুবে যায়।মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ঝড়ের কারণে চারটি ফেরি ডুবোচরে আটকা পড়ে। পরেতিনটি ফেরি উদ্ধার করা হলেও একটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মাওয়ায় দীর্ঘযানজট দেখা দিয়েছে। এতে দু শতাধিক ট্রাক আটকে পড়েছে।