তীব্র দাবদাহ থাকছে আরো কয়েকদিন : চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড

আজ চুয়াডাঙ্গায় এস্তেস্কার নামাজ : গ্রামে গ্রামে শিশু-কিশোরদের কাদা মেখে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা-গান
স্টাফ রিপোর্টার: সাগরে লঘুচাপ থাকায় ও বৃষ্টির অভাবে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ।সর্বত্র বিরাজ করছে ভ্যাপসা গরম।আর গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিশূন্যতাজনিত রোগ।আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরো কয়েকদিন দাবদাহ থাকবে এবং বিস্তার ঘটবে। এদিকে বৃষ্টির জন্য চুয়াডাঙ্গায় আজ এস্তেস্কার নামাজ আদায় করবে। গতপরশু মেহেরপুরে একই নামাজ আদায় করা হয়। এছাড়া গ্রামে গ্রামে বৃষ্টির জন্য কাদায় ভিজে বৃষ্টির জন্য গান গেয়ে শিশু কিশোরেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। আর ব্যাঙের বিয়ে তো হচ্ছেই। কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা একের পর এক নতুন রেকর্ড করছে। মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রিসিলসিয়াস, যা গত মাসের সর্বোচ্চ রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ এপ্রিল যশোরেরতাপমাত্রা ছিলো ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বর্তমানে মরসুমের দ্বিতীয় দফা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।এর আগে গত ২০ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল দেশজুড়ে বয়ে যায়তীব্র তাপপ্রবাহ।অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. রাশেদুজ্জমান জানান, পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে বৃষ্টিপাত নাথাকায় গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন।দু চার দিনের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও কম। এ সময় দাবদাহ থাকবে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়েতীব্র তাপপ্রবাহ এবং ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, মাইজদী র্কোটও দিনাজপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মাঝারি থেকেমৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।বুধবারেরপূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবেদমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং এছাড়া দেশের অন্যত্রআকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।স্বাস্থ্যঅধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশে ৮৮৯ জন ডায়রিয়াআক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময়কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) ভর্তি হয়েছে ৪৬৫ জন।গতএক সপ্তায় দেশজুড়ে ৬ হাজার ৫৪১ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।

অধিদপ্তরেরকর্তব্যরত চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন জানান, গত কয়েকদিনে তীব্র গরমে মানুষের হাসফাঁসঅবস্থা। রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও তুলনামূলক বাড়বে।এমনগরমে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শের সাথে প্রতিবার খাওয়ার আগেভালোভাবে হাত ধোয়া ও বাসি খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি।এইচিকিৎসক জানান, গরমে দ্রুত খাবার নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে খোলা খাবারও দূষিত হয়েপড়ছে। এক্ষেত্রে পানীয় ও খাবার খেতে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।মঙ্গলবারঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবশ্য গত মাসেঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে।এ সময়চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতবছরএপ্রিলে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করাহয়।বুধবারও সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতেপারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গার বুজরুকগড়গড়ি মাদরাসাপাড়ায় মহিলা কলেজমাঠে, বেলগাছি ঈদগাপাড়া মাঠে এস্তেস্কার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে নূরনগর-কলোনিপাড়ায় বৃষ্টির প্রার্থনায় প্রাচীন প্রথায় ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়। পাড়ায় পাড়ায় বৃষ্টির জন্য সিন্নির চাল তোলা হয়। জেলা সদরের জাফরপুরে বৃষ্টির জন্য কাদায় ভিজে গান-বাজনা ও লাঠিখেলা হয়।

বারাদী প্রতিনিধিজানিয়েছেন,প্রচণ্ড খরতাপে মাঠ-ঘাট খাঁ খাঁ করছে। প্রাণি জীবন অতিষ্ঠ। নেই স্বস্তির বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য আল্লাহর রহমত কামনায় মেহেরপুর সদর উপজেলার গহরপুর গ্রামবাসী এস্তেস্কার নামাজ আদায় করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে গ্রামে মাঠে নামাজ আদায় করে আল্লাহার দরবারে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজে দোয়া পরিচালনা করেন গহরপুর গ্রামের মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিকুল ইসলাম।