তিন মাস পর ফিরলেন খালেদা জিয়া

বিমানবন্দর সড়কে নেতাকর্মীদের বিশাল শো-ডাউন

স্টাফ রিপোর্টার: চিকিত্সার জন্য তিন মাস লন্ডনে অবস্থান শেষে গতকাল বুধবার বিকালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি যখন নগরীর সড়কে বের হন তখন অসংখ্য নেতাকর্মী শ্লোগান দিয়ে তাকে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছায় অভিসিক্ত করেন। অনেকে ফুল ছিটিয়ে দেন গাড়ির ওপর। জনারন্যের ভিড় আর তীব্র যানজটের কারণে ধীরে ধীরে তার গাড়ি অগ্রসর হতে থাকে গুলশানের বাসার দিকে। বিমান বন্দরের গোলচত্বর হতে গুলশান-২ এর ‘ফিরোজা ভবন’ পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে তার প্রায় দুই ঘণ্টা সময় পার হয়। পুরো পথ বেগম জিয়ার গাড়ির সামনে ছিল মোরসাইকেলের বহর আর পেছনে নেতা-কর্মীদের দীর্ঘ স্রোত। যাদের কণ্ঠে ছিল অবিরত শ্লোগান। রাত সাড়ে ৭টার পর বাসায় পৌঁছান বেগম জিয়া। রাত সাড়ে ৮ টায় বৈঠকে বসেন আইনজীবীদের সঙ্গে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে,আজ বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় তিনি আদালতে যাবেন গ্রেফতারী পরোয়ানায় জামিন নিতে। এর আগে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শত শত নেতাকর্মী বিদায় জানান খালেদা জিয়াকে। ঢাকায় পৌঁছানোর আগে দুবাইয়ে আড়াই ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করে এমিরেটস।

‌খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিশাল শো-ডাউন প্রদর্শন করেছে বিএনপি। গতকাল দুপুরের পর থেকেই ঢাকার উপকণ্ঠভাগের বিভিন্ন জেলা এবং রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড-থানা থেকে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, মহিলাদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী সমর্থকরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন বিমান বন্দর সড়কে। বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকাড, ব্যানার, ফেস্টুন বহন করছিলেন তারা। নেতাকর্মীরা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর করে তোলে পরিবেশ। দুপুর থেকে বিমানবন্দর সড়কসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহনের সংকট ছিল। দুপুর থেকেই উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের জসিম উদ্দীন সড়কের ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুরু করে ট্রাফিক পুলিশ। ফলে উত্তরা থেকে টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত সড়ক ছিল প্রায় খালি। বিকাল ৫টার মধ্যে মানুষের ভিড় বিমানবন্দরের উত্তর দিকে উত্তরার জসিমউদ্দিন সড়কের দুই পাশ ও দক্ষিণ দিকে নিকুঞ্জ ও আশপাশ ভরে বনানীর হোটেল রেডিসন ব্লু র সম্মুখ সড়ক পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। বিমানবন্দর এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। বিমানবন্দরের গোলচত্বর থেকে পশ্চিম দিকে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। হ্যান্ড মাইকে নেতাকর্মীদের মূল সড়কে না নামার অনুরোধ জানাতে থাকে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তাদের সামলাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মানুষের স্রোত একপর্যায়ে সড়কের ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে আসে। সাড়ে ৫টার পর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে মূলসড়কে উঠতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। এসময় জনারণ্য ঠেলে গাড়িবহরকে সামনে এগোতে বেগ পেতে হয়। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে টঙ্গী, উত্তরা, বিমানবন্দর,খিলক্ষেত, বনানীসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হন। অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। বিমান থেকে অবতরণের পর বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৪ জনকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে থাকার অনুমতি দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দররের ভেতরে থাকার জন্য বিএনপির ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের অনুমতি চাওয়া হয়েছিলো। তবে বিমান কর্তৃপক্ষ বিমান থেকে বেগম জিয়া অবতরণ করার পর অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, দেহরক্ষী মাসুদ রানা ও গুলশান কার্যালয়ের কর্মচারী জসিমকে অনুমতি দেয়। ভেতরে ঢুকতে না পেরে ভিআইপি টার্মিনালের কাছে মসজিদের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আজ মানুষের ঢল নেমেছে। কয়েক লাখ নেতাকর্মী নিজ থেকে নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে এখানে এসেছেন। তবে পুলিশ কোথাও কোথাও আগমনে বাধা দিয়েছে।

শারীরিক চিকিত্সার জন্য গত ১৫ জুলাই লন্ডনে যান খালেদা জিয়া, সেখানে বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-কন্যা এবং ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী-কন্যাদের সাথে নিয়ে ঈদ উদযাপন করেন খালেদা জিয়া। তবে লন্ডনে কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি তিনি। তিনি ডান চোখের অপারেশন ও পায়ের চিকিত্সা গ্রহণ করেন।