ডিবির কথিত বন্দুকযুদ্ধে ২শ্রমিক লীগ নেতা নিহত

 

 

স্টাফ রিপোর্টার:রাজধানীরমতিঝিলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কথিত বন্ধুকযুদ্ধে শ্রমিকলীগের দুনেতা নিহত হয়েছেন। তবে পুলিশের দাবি, তারা অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী।অন্যদিকে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, একজন শ্রমিক নেতার ইঙ্গিতেমোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ডিবি পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়েছে।নিহতদের স্বজনরা জানান, ডিবির কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত রমজান আলী জাবেদ (৩৭)ও মো. জাকির হোসেন আকমল (৩৫) সায়েদাবাদ এলাকার শ্রমিক লীগের নেতা। তবেতাদের পদ পদবি তারা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি।

ডিবি পুলিশের ডিসি (পূর্ব) জাহাঙ্গীর আলম মাতবর জানান, গতশনিবার রাত আড়াইটারদিকে ডিবির একটি টিম ছিনতাই প্রতিরোধে মতিঝিল এলাকায় টহল দিচ্ছিল। তারামতিঝিল টিঅ্যান্ডটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে টহলের সময় ২টিমোটরসাইকেলে ৬ আরোহীকে যেতে দেখে থামার সঙ্কেত দেন।কিন্তু তারামোটরসাইকেল না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে পুলিশেরসন্দেহ হয় যে, মোটরসাইকেল আরোহীরা ছিনতাইকারী। তখন পুলিশ মোটরসাইকেল দুটিকেধাওয়া করে। এ সময় পেছনে পুলিশের গাড়ি দেখে মোটরসাইকেল আরোহীরা ডিবিপুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। তখন ডিবি পুলিশ পাল্টাগুলি চালায়। এ সময়ে জাবেদ ও আকমল গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তার ওপর পড়ে গেলে পুলিশতাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।তাদের অন্য সহযোগীরা এ সময় গুলি ছুড়তে ছুড়তে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

মতিঝিল থানার সাব-ইন্সপেক্টর আবু তাহের ভূঁইয়া জানান, গোলাগুলির খবর পেয়েমতিঝিল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়েথাকতে দেখতে পায়। এরপর রাত পৌনে ৩টার তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজহাসপাতালে নিয়ে যায়।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাত পৌনে ৩টার দিকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পুলিশদুজনকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকদুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। তখন তাদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে গতকাল রোববার দুজনেরস্বজনরা হাসপাতালে মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করার পর তাদের পরিচয় জানা যায়।সকল ১১টার দিকে জাবেদের লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী নুসরাত জাহান ঝর্ণা এবংবিকেল ৪টার দিকে আকমলের লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী সাবিনা ইসলাম।

জাবেদের স্ত্রী নুসরাত জাহান ঝর্ণা হাসপাতালের মর্গে সাংবাদিকদের জানান, জাবেদ পরিবহন শ্রমিক লীগের সায়েদাবাদ এলাকার নেতা। গোপীবাগ এলাকার ১৩/১নাম্বার কেএম দাস লেনে তাদের বাসা। শনিবার দুপুরের দিকে জাবেদের ২/৩ জনবন্ধু বাসায় আসেন। তারা একত্রে দুপুরের খাবার খান। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েবিকেলের দিকে বাসা থেকে বের হন। এরপর সন্ধ্যার দিকে জাবেদের মোবাইলেফোনকরা হলে মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাতে জাবেদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগকরেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সকালে টেলিভিশনে বন্দুকযুদ্ধের খবর জানতেপান। এরপর সকাল ১১টার দিকে তিনি মর্গে গিয়ে স্বামী জাবেদের লাশ শনাক্তকরেন।
নুসরাত জাহান ঝর্ণা আরো অভিযোগ করেন, সায়েদাবাদের পরিবহন শ্রমিক লীগেরসভাপতি খায়ের ডিবি পুলিশকে টাকা দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিছুদিন আগে খায়েরতার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। জাবেদ জানিয়ে দেন তার কাছে কোনো টাকা নেই।এরপর থেকে খায়েরের সাথে বিরোধের সূত্রপাত হয়। খায়ের তাকে দেখে নেয়ার হুমকিদেন।

ঝর্ণা আরো জানান, জাবেদ ঢাকা-কুমিল্লা রোডের বাসমালিক সমিতির যুগ্মসম্পাদকছিলেন। ওই এলাকায় তার মোটর পার্টসেরদোকান আছে। জাবেদের বিরুদ্ধে কোনোধরনের অভিযোগ কোনো থানায় নেই। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন নুরের টেকএলাকায় তাদের গ্রামের বাড়ি।অন্যদিকে আকমলের লাশ শনাক্ত হয় বিকেল ৪টায়। আকমলের স্ত্রী সাবিনা ইসলামজানান, আকমল সায়েদাবাদ এলাকার শ্রমিক লীগের নেতা। তার স্বামী ছিনতাইকারীনন। ডেমরা এলাকার তাদের বাসা। শনিবার সকালের দিকে আকমল বাসা থেকে বের হয়েযান। যাওয়ার আগে তাদের একমাত্র ছেলে তামিমকে আদর করে স্কুলে যেতে বলেন।তারপর আর যোগাযোগ হয়নি। মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাতেও বাসায় ফেরেননি।এজন্য সবাই খুব উদ্বিগ্ন অবস্থায় রাত কাটান। সকাল থেকে আকমলের বন্ধুদেরসাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কেউ খোঁজ দিতে পারেনি। পরে বিকেলের দিকে মর্গেগিয়ে তিনি তার স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন।