ঝড় বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে ব্যাপক ক্ষতি : ভেঙেছে বহু গাছ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে গতকাল সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আলমডাঙ্গার পল্লি শ্রীরামপুরেসহ মেহেরপুর গাংনীর বিশাল এলাকার বিস্তৃণ মাঠের ফসল নূয়ে পড়েছে। ভেঙেছে বহুগাছ গাছালি। চুয়াডাঙ্গায় ঝড় বৃষ্টির সময় বিদ্যুত বিপর্যয় দেখা দেয়। কয়েকটি ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও কয়েকটি ফিডারে লোভোল্টেজ সমস্যা প্রকট রূপ নেয়। অপরদিকে একদিন আগের প্রবল বৃষ্টিতে রাজধানীর বাতাসে ভাসমান ধুলি অনেকটা নেমে এলেও রোববার বেকেলে রাজধানীর আকাশে ধোঁয়াশা ভাব কৌতূহলী করে তোলে অনেককে। কেউ কেউ বলেন, মেঘ নেমে এসেছে ধরিত্রীর বুকে। এটি কুয়াশা, না মেঘ- তা জানতে আবহাওয়া অধিদফতরে যোগাযোগ করা হলে জ্যৈষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ওটা মেঘই ছিলো।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর জীবননগর উপজেলার ওপর দিয়ে কালবোশেখি ঝড় বয়ে গেছে। দমকা হাওয়াসহ কালবোশেখি ঝড়ে আম বাগানের আমের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। ভেঙে পড়েছে সড়কের দু পাশেরসহ গাছ-গাছালির ডালপালা। কালবোশেখি ঝড়ে বাগানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হওয়ায় আম বাগান মালিকদের মাথায় হাত পেড়েছে।
উথলী থেকে আবজালুর রহমান জানিয়েছেন, ঝড়ে জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের দু পাশের গাছের ডালপালা ভেঙে সড়কের ওপর পড়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও ঝড়ের কারণে বাগানের আম ঝড়ে পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। অপর আর একজন অভিযোগ করে বলেন, ঝড়ের  মধ্যে সামান্য বৃষ্টিতে পেয়ারাতলায় রাস্তার পাশে অবস্থিত মা-বাবা ইটভাটার মাটিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। রাতে ওই সড়কে চলাচলকারী অগনিত মোটরসাইকেল রাস্তার ওপর স্লিপ করে পড়ে আহত হয়েছে। তারা অবিলম্বে এ ইট ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তিন দিনের ব্যবধানে মেহেরপুরে আবারো কালবোশেখি ঝড় আঘাত হেনেছে। গতকাল রোববার রাতে পৌনে এক ঘণ্টার ঝড় বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অর্ধ শতাধিক কাঁচা বাড়িঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা।
রাত ৮টার দিকে কালবোশেখি ঝড়ের তা-ব শুরু হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আঘাত হানে। ঝড়ের গতিবেগ বাড়ার সাথে সাথে যুক্ত হয় বৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে এক দুর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জেলার বিভিন্ন গ্রামের অর্ধ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে যায়। বাঁশবাড়িয়া গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল মাসুম ইকবালের একতলা ঘরের সিঁড়ি কক্ষের টিন উড়ে বাড়ির পাশের্^র বৈদ্যুতিক তারের সাথে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। একই সময়ে গাংনী বাসস্ট্যান্ডের রফিক মিয়ার ফলের দোকানের ছাউনি উড়ে যায়। এছাড়াও এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে এবং গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ঝড়ের আঘাতে ভেঙে পড়ে গাছ-গাছালি। বড় বড় ইপিলইপিল গাছ উপড়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে যানবাহন আটকে পড়ে চোখতোলা এলাকায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন পড়ে। গাংনী থানা পুলিশ করাত দিয়ে গাছ কেটে তা অপসারণ করে।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, পুলিশ ও এলাকাবাসী প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় সড়কের ওপরে পড়ে থাকা গাছ অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঝড়ের সময় থেকে জেলা বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে। গ্রাম ও শহরের অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে পড়েছে। লাইন মেরামত করে বিদ্যুত চালু হতে কতো সময় লাগবে তা নিশ্চিত কর বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তবে রাতে গাংনী শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুত চালু হয়।
এদিকে বুধবার রাতে দুই ঘণ্টাব্যাপী ঝড় বৃষ্টির ফলে নি¤œাঞ্চলের পাট ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ধান কাটার আগ মুর্হূতেই ক্ষেতের সাথে নুইয়ে পড়ে। আজকের ঝড়বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে জলাবদ্ধা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মারাত্মক ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দিশেহারা হড়ে পড়েছেন চাষিরা। অপরদিকে নিচু এলাকার পাটক্ষেতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।