ঝিনাইদহে মেধাবী স্কুল ছাত্র টুলুর মৃত্যু নিয়ে উত্তপ্ত তালসার গ্রাম

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ঘাগা তালসার গ্রামের মেধাবী ছাত্র হাবিবুর রহমান টুলুর মৃত্যু রহস্য আটকে গেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার কারণে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার আলামত পেয়েছেন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ টুলুর পরিবার। তারা নিরুপায় দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতের। হত্যা মামলা করেছেন ৮ জনের বিরুদ্ধে। মামলায় আসামি করা হয়েছে তালসার গ্রামের মুল্লুক চাঁদ ম-লের ছেলে জাকির ম-ল, জমির উদ্দীন ম-ল, আমিরুদ্দীন ম-ল, নজরুলের ছেলে আশাদুল, ঘাগা গ্রামের চিটা কাজীর ছেলে নজরুল ম-ল, ইসমাইল ম-লের ছেলে জাকির ম-ল, জাকির ম-লের ছেলে আল আমিন ও জহির ম-লের ছেলে মিল্টন ম-ল। এলাকাবাসী ও স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা টুলু হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার তারা তালসার বাজারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। তারা টুলু হত্যার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখান করে নতুন করে ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছে। এদিকে আদালত বাদী সাবদার ম-লের নালিশী অভিযোগটি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারা মোতাবেক পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঝিনাইদহকে তদন্ত পূর্বক আগামী ৯ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট বেগম ফাহমিদা জাহাঙ্গীর গত ২ জুলাই এ আদেশ দেন। বাদী নালিশী অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তার ছেলে হাবিবুর রহমান টুলু (১৪) দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। সে কোটচাঁদপুরের তালসার কাজী লুৎফর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। একই স্কুলের ছাত্রী নজরুল ম-লের মেয়ে শাহানাজ ঘটনার তিন দিন আগে অন্য একটি ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে তারা স্কুলছাত্র টুলুকে সন্দেহ করতে থাকে। গত ১০ জুন রাতে প্রধান আসামি জাকির ম-ল ফোন করে টুলুকে তার সাথে দেখা করতে বলে। টুলু সরল মনে তার সাথে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ঘটনার দিন প্রতিবেশী আয়াত আলীর ছেলে সুমন, আজাদের ছেলে মহসিন, জমিরের ছেলে তুহিন ও জিয়াউর রহমানের ছেলে ইমরান তাল চুরি করে ঝোড়ের মধ্যে খাচ্ছিলো। তারা দেখে ৪-৫ জন মানুষ একটি মৃতপ্রায় লোককে ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে তারা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে আসে এবং টুলুর লাশ পাওয়ার পর ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়।
এদিকে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার আগেই আসামিরা বাড়ির মালামাল নিয়ে গাঢাকা দেয়। যা পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে আসামিরাই টুলুর হত্যাকারী।
বাদী টুলুর পিতা সাবদার ম-ল জানান, টুলু বাইরে যাওয়ার সময় তার কাছে নিজের শিক্ষা বৃত্তির ১৩’শ ও জমি বিক্রির ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিলো। সে টাকাও খুনিরা নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানায় হত্যাকারীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করতে গেলে তারা অপমৃত্যু মামলা গ্রহণ করে। স্থানীয় চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান, জৈনিক শিক্ষক, সাবেক মেম্বর বাহাজ্জেল হোসেন ও বর্তমান মেম্বর বদিউজ্জামান জানান, হাবিবুর রহমান টুলু খুব ভালো ছাত্র ছিলো সে ২০১২ ইং সালে তালসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। স্থানীয় জনগণের জোর মন্তব্য এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। আগে থেকে তাকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার মৃত দেহটি গাছে ঝুলিয়ে রখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, আমরা টুলুর মৃত্যুর বিষয়ে কঠোর ভুমিকায় ছিলাম। আসামি গ্রেফতারে অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা কথাটি আসায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। তিনি আসামিদের পালিয়ে থাকার বিষয়টি সত্য বলে জানান।
¬