ঝিনাইদহে মহাসড়কের ধার ঘেঁষে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সওজের পুকুর থেকে বালি উত্তোলন

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে মাছচাষের চুক্তি করে পুকুর বন্দোবস্ত নিয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে মমিনুর রহমান খুশি। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তারপরও সেই পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উঠিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। রাস্তার ধারে স্তুপ করা হয়েছে উঠানো বালির। ট্রাক ট্রাক বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন।

খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ধার থেকে এভাবে ড্রেজার দিয়ে শ শ ট্রাক বালি উঠানোর কারণে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে হাইওয়ে সড়ক ধসে পড়ার। পৌর বাস ট্রার্মিনালও ভেঙে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করেছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও আছেন ধসে পড়ার আতঙ্কে। সকলেই এ বালি উঠানোর প্রতিবাদ করলেও বালি উঠানো বন্ধ হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ধারে ঝিনাইদহ পৌরসভা বাস টার্মিনালের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি পুকুর রয়েছে। শুষ্ক মরসুমে সেখানে পানি থাকে না। বর্ষায় কিছুটা পানি জমে। ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান সহকারী নজরুল ইসলাম জানান, ৭/৮ বছর পূর্বে এ পুকুরটি মাছ চাষের জন্য বন্দোবস্ত দেয়া হয়। ৩ বছর পূর্বে তাদের সেই বন্দোবস্তের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন পুকুরটি তাদের মালিকানায়। সেই সময়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা মাছচাষের জন্য তিন বছরের বন্দোবস্ত দিয়েছিলেন।

পুকুর পাড়ের বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত তিন মাস হলো এ পুকুরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্তুপ বালি বিক্রি করা হয়েছে। মমিনুর রহমান খুশি পুকুরটিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে শ শ ট্রাক বালি উঠিয়ে বিক্রি করছেন। এখনও চলছে বালি উঠানোর কাজ।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরে ড্রেজার মেশিন বালি উঠানোর কাজ করছে। নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, ৬টাকা সেফটি চুক্তিতে তারা বালি উঠাচ্ছেন, আর মালিক ৮/৯ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ইতোমধ্যে দুটি স্তুপ বালি বিক্রি হয়েছে। নতুন করে একটি স্তুপ বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা আরো জানান, বালির চাহিদা বেশি থাকায় আরো একটি মেশিন নামানো হবে। ২/১ দিনের মধ্যে দুটি মেশিন বালি উঠানোর কাজ করবে। পুকুর পাড়ের বাসিন্দারা আরো জানান, এ বালি উঠানোর কারণে ইতোমধ্যে পাড় ধসে পড়তে শুরু করেছে। আর অল্প দিনের মধ্যে হাইওয়ে সড়ক, পৌর বাস ট্রার্মিনালের কিছু অংশের সাথে তাদের বাড়িঘরও ভেঙে পড়বে। সুখজান নেছা নামের এক বৃদ্ধা জানান, তারা অনেক নিষেধ করেছেন কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে সওজ’র বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, বন্দোবস্ত আছে তিনি শুনেছেন কিন্তু বিস্তারিত কিছুই জানেন না। তবে মাছ চাষের বন্দোবস্ত নিয়ে কেউ বালি উঠিয়ে বিক্রি করতে পারে না। এভাবে মহাসড়কের ধার থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি উঠালে সড়ক ধসে পড়তে পারে। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান। ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টু জানান, ক্ষমতার জোরে সবকিছু করা ঠিক নয়। ওই স্থানে যে কাজটি হচ্ছে তাতে মহাসড়ক, বাস টার্মিনালসহ আশপাশের বাড়িঘরের ক্ষতি হবে। এটা নিয়ে তিনি নিজে কথা বলেছেন, কিন্তু কোনো লাখ হয়নি। তিনি বলেন অবিলম্বে এটা বন্ধ হওয়া জরুরি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তার কানে আসার সাথে সাথে সড়ক বিভাগকে অবহিত করেছেন। তারপরও বালি উঠানো বন্ধ হয়নি, বিষয়টি খুবই খারাপ কথা। তিনি আবারো বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

বালি বিক্রেতা মমিনুর রহমান ওরফে খুশি জানান, তিনি বালি বিক্রি করছেন না। পুকুরটি মাছ চাষের উপযোগী করতে বালি উঠিয়ে পাড়ে জমা করে রাখছেন। তাছাড়া ড্রেজার মেশিনে যে গভীর হচ্ছে তাতে মহাসড়ক বা পাশের বাড়িঘর ধসে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি দাবি করেন এখনও তাদের বন্দোবস্ত রয়েছেএবং বন্দোবস্ত নিয়েই সেখানে মেশিন বসিয়েছেন।