ঝিনাইদহের সাধুহাটির বিদ্যুতের সাবস্টেশনের লাইনম্যান বরিউল ও নুর আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ মিটার সংযোগ রমরমা বাণিজ্যের অভিযোগ

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের ডাকবাংলা সাধুহাটি ফিডার বিদ্যুত সাবস্টেশনের লাইনম্যান রবিউল ইসলাম ও গ্যাটিজ নুর আলমের অবৈধ মিটার সংযোগ বাণিজ্যে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুত গায়েব হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ সদরের ডাকবাংলা সাধুহাটি ফিডার বিদ্যুত সাবস্টেশনে গ্যাটিজ নুর আলম লাইনম্যান রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাজুড়ে এধরনের অবৈধ মিটার ও সংযোগ বাণিজ্য করে আসছে বলে ব্যাপক পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ডাকবাংলা সাধুহাটি এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ গরিব মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ডাকবাংলার মো. বক্সের ছেলে নুর আলম বেশ কয়েক বছর ডাকবাংলা সাধুহাটি ফিডার বিদ্যুত সাবস্টেশনের গ্যাটিজ বা বিদ্যুত মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে আসছেন। মূলত নুর আলমের সাধুহাটি বিদ্যুত সাবস্টেশনে মিস্ত্রি হিসেবে কর্তৃপক্ষ থেকে কাজ করার কোনো প্রকার বৈধ কাগজপত্র বা অনুমতি নেই। সাধুহাটি বিদ্যুত সাবস্টেশনে চাকরি করে মর্মে গ্যাটিজ নুর আলম প্রায়ই ওই এলাকার রাঙ্গিয়ারপোতা, পুতাহাটি, বাতপুকুরিয়া, নারায়ণপুরসহ আশে পাশের গ্রাম গুলোতে নিহাত গরিব মানুষের কাছ থেকে বৈধ কাগজপত্র করে মিটার দেবে চুক্তিতে তাদের কাছ থেকে ৭-৮ হাজার টাকা নিয়ে নিজেই ডাকবাংলা বাজার থেকে মিটার ও তার কিনে তাদের বাড়িতে লাইন সংযোগ করে দেন।

সাম্প্রতি বাতপুকুরিয়া গ্রামের ফজুর মোড়ের বাচ্চুর ছেলে জামাল ও জমাদ্দারের ছেলে জজ মিস্ত্রি, মৃত ধনু মিয়ার ছেলে দুদু, বাতপুকুরিয়া উত্তর পাড়ার মৃত আক্তারের ছেলে বারেক, ভিআইপি মোড়ের জয়নালের ছেলে জাহিদ ও দিলু, আজিবারের ছেলে রবিউল, নুরু মিয়ার ছেলে মাহমুদ, নারায়ণপুর জামে মসজিদের পাশে কচিং মাস্টার হাফিজুর, আবদুর রউফ ডিগ্রি কলেজের পেছনে জৈনিক চা বিক্রেতা, রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের ঈদু গংদের তিনটি মিটারসহ ১৯ জন নিরীহ গরিব মানুষের কাছ থেকে বৈধ কাগজপত্রসহ মিটার ও বিদ্যুত সংযোগ দেবে চুক্তিতে তাদের কাছ থেকে ৭-৮ হাজার টাকা নিয়ে নিজেই ডাকবাংলা বাজার থেকে মিটার ও তার কিনে তাদের বাড়িতে লাইন সংযোগ করে দেয় প্রতারক নুর আলম বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন। পরবর্তীতে ৬-৮ মাস পর্যন্ত বিদ্যুত বিল না আসলে জনগণ ঝিনাইদহ বিদ্যুত অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের অবৈধভাবে লাইন দেয়া হয়েছে মর্মে ১১ আগস্ট শুক্রবার ১২টি মিটার খুলে নিয়ে আসে (ওজোপাডিকো) কর্তৃপক্ষ, বলে বিদ্যুত অফিসের নিবার্হী প্রকৌশলী অনুপম চক্রবর্তী জানান।

এদিকে ১৯টি মিটারের প্রায় ৬ থেকে ৮ মাসের বিদ্যুত বিলের কি হবে? ঝিনাইদহের লাখ লাখ টাকার বিদ্যুত গিলে খাওয়া প্রতারক গ্যাটিজ নুর আলমের কি শাস্তি হবে? মর্মে ডাকবাংলা এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিবর্গ ডাকবাংলা সাধুহাটি ফিডার বিদ্যুত সাবস্টেশনের লাইনম্যান রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের নিকটে অভিযোগ করেছেন। তারা লাইনম্যান রবিউল ইসলাম ও প্রতারক গ্যাটিজ নুর আলমের যথাযথ শাস্তি দাবি করে বলেন, লাইনম্যান রবিউলের অজানায় লাখ লাখ টাকার অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ ও মিটারের ব্যাবসা কিভাবে সম্ভব?

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গ্যাটিজ নুর আলম সাংবাদিকদের সাথে দেখা না করে মুঠোফোনে বলেন, আমি এদেরকে মিটার ও সংযোগ দিয়েছি সত্য তবে অফিস মিটারগুলো খুলে নিয়ে যাওয়ার পরে আমি সবাইকে টাকা ফেরত দিয়েছি। পরে একই অফিসের আরেক গ্যাটিজ জৈনিক নুর আলমের ভাতিজা পরিচয়ে মুঠোফোনে ডাকবাংলা বাজারে ইসলামী ব্যাংকের নিচে সাংবাদিকদের ডেকে এ সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য জোর পরামর্শ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে লাইনম্যান রবিউল ইসলাম ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, গ্যাটিজ নুর আলমের অবৈধ মিটার ও সংযোগ ব্যাবসা সম্পর্কে আমার জানা নেই এবং এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি প্রতারক নুর আলমের বিচার ও শাস্তি চায়। তাছাড়া আমিই ঝিনাইদহ হেড অফিসে খবর দিয়ে এই অবৈধ মিটার ও সংযোগগুলো খোলার ব্যাবস্থা করেছি।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঝিনাইদহ বিদ্যুত (ওজোপাডিকো) অফিসের নিবার্হী প্রকৌশলী অনুপম চক্রবর্তী ও ডাকবাংলা সাধুহাটি ফিডারের (বিদ্যুত সাবস্টেশন) দায়ীত্বরত ইঞ্জিনিয়ার রফিক সাংবাদিকদের জানান, প্রতারক গ্যাটিজ নুর আলমের দেয়া অবৈধ সংযোগ এপর্যন্ত ৫-৬ বার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দুবছর আগেও ডাকবাংলা এলাকা থেকে নুর আলমের দেয়া অবৈধ মিটার ও সংযোগ খোলা হয়েছিলো। তার পরেও সে ক্ষান্ত হয়নি। তারা আরও জানান, ডাকবাংলা সাধুহাটি ফিডারের রাঙ্গিয়ারপোতা, পুতাহাটি, বাতপুকুরিয়া, নারায়ণপুর গ্রাম থেকে ১২টি অবৈধ মিটার ও সংযোগ খোলা হয়েছে। বাকিগুলো ৩-৪ দিনের মধ্যেই খোলা হবে। অবৈধ মিটার ও বিদ্যুত সংযোগ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং প্রতারক গ্যাটিজ নুর আলমের নামে মামলার প্রস্তুতি চলছে। লাইনম্যান রবিউল এ ঘটনার সাথে জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেয়া হবে। আর এ অবৈধ ১৯টি মিটারের মালিকদের নিকট থেকে ৬-৮ মাস বিদ্যুত ব্যাবহার বাবদ বিল ও জরিমানা আদায় করা হবে বলেও তারা জানান।