ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা গ্রামে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে অভিযান চলছে

বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার : দুজন আটক
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামে দুটি জঙ্গি আস্তানা ঘেরাও করে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর অভিযান চালিয়েছে র‍্যাব। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে অভিযান স্থগিত করা হয়। আজ বুধবার সকালে আবার অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন র‍্যাব কর্মকর্তারা।
র‍্যাব বলেছে, গত সোমবার গভীর রাতে দুজনকে আটকের পর গতকাল সকাল সাতটা থেকে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে ওই দুই আস্তানার পাঁচটি স্থান থেকে ২টি সুইসাইড ভেস্ট, ৫টি শক্তিশালী বোমা, ১৮টি ডিনামাইট স্টিক, বোমা তৈরির ১৮৬টি পিভিসি সার্কিট, চার ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য ও একটি অ্যান্টিমাইন উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে র‍্যাব। অভিযান এলাকায় সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, তা অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহে র‍্যাবের অধিনায়ক মেজর মনির আহম্মেদ। সোমবার রাতে আটক দুজন হলেন চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আত্তাব উদ্দিনের ছেলে সেলিম হোসেন বিশ্বাস (৪০) ও আত্তাবের ভাই মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ছেলে প্রান্ত বিশ্বাস (১৭)। আত্তাব ও মতিয়ারের বাড়িতে গতকাল অভিযান শুরু হয়।
গত ২১ এপ্রিল থেকে এটি ঝিনাইদহে চতুর্থ জঙ্গি আস্তানায় অভিযান। আগের তিনটি অভিযান চালায় পুলিশ। গত ২১-২২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা গ্রামের পাশের পোড়াহাটি গ্রামে আবদুল্লাহর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। পরে ৭ মে জেলার মহেশপুরের বজরাপুর গ্রামে অভিযানে নিহত হন ওই আবদুল্লাহ ও তুহিন বিশ্বাস নামের একজন। আটক করা হয় জহুরুল হক ও তাঁর ছেলে জসিম উদ্দিনকে। ৮ মে সদর উপজেলার লেবুতলায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়, আটক করা হয় শামীম হোসেন নামের একজনকে।
গ্রামবাসী সূত্র বলেছে, ৭ মে নিহত তুহিন সোমবার রাতে আটক সেলিমের সহোদর এবং আবদুল্লাহর সঙ্গে কাঠের গুঁড়ির ব্যবসা করতেন। আবদুল্লাহর শ্বশুরবাড়ি চুয়াডাঙ্গা গ্রামে। তুহিনের এক ভাই টিটু ৪ মে থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। র‍্যাব-৬’র অধিনায়ক পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক খন্দকার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে সেলিম ও প্রান্ত বিশ্বাসকে চুয়াডাঙ্গা গ্রামের ওহাব বিশ্বাসের বাড়ির পাশ থেকে র‍্যাব আটক করে। এই দুজন নব্য জেএমবির সদস্য। ঝিনাইদহ র‍্যাব ক্যাম্প থেকে অভিযানস্থল ৪০০ মিটার দূরে। ঝিনাইদহ র‍্যাবের অধিনায়ক মনির আহম্মেদ বলেন, প্রান্ত সদ্য এসএসসি পাস করা। সেলিমের ভাই তুহিন ৭ মে জেলার মহেশপুরের বজরাপুর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালে নিহত হন। তিনি বলেন, প্রান্ত ও সেলিমকে ঝিনাইদহ র‍্যাব ক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা চুয়াডাঙ্গা গ্রামে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান দেন। তাদের দেয়া তথ্যে সকাল ৭টায় মতিয়ার ও তার ভাই আত্তাবের বাড়িতে অভিযান শুরু হয়। প্রথমে প্রান্তদের বাড়ির পাশের বাঁশবাগান থেকে দুটি সুইসাইড ভেস্ট ও সেলিমের বাড়ির পাশে মাটির নিচ থেকে পাঁচটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। দুপুরের পর আরও তিনটি স্থান থেকে ১৮টি ডিনামাইট স্টিক, বোমা তৈরির ১৮৬টি বৈদ্যুতিক সার্কিট, চার ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় অভিযান স্থগিত করা হয়। জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে র‍্যাব-৬’র অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম, র‍্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ও পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।
কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, গ্রামের মধ্যে জঙ্গি আস্তানা আছে, এটা ভেবে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অভিযানকালে বেশির ভাগ লোক জানালা-দরজা বন্ধ করে নিজ ঘরে ছিলেন। গ্রামটির বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, অভিযানস্থলের পাশেই তার বাড়ি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি কোনো গুলির শব্দ পাননি। চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আয়ুব আলী খাঁ বলেন, কখনো ভাবেননি সেলিম ও প্রান্ত জঙ্গি। তাদের আচরণেও কিছু বুঝতে পারেননি। পোড়াহাট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শওকত আলী মোল্লা বলেন, তাদের এলাকায় এতো জঙ্গি আস্তানা রয়েছে, তা ভাবতেও পারছেন না। যারা এই ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
গ্রামবাসী বলেন, আত্তাবরা তিন ভাই। আত্তাব, মতিয়ার ও আনোয়ার হোসেন। বড় ভাই আত্তাবের ছয় ছেলে ও এক মেয়ে। মতিয়ারের দুই ছেলে আশিক বিশ্বাস ও প্রান্ত বিশ্বাস। মেয়েও দুটি। আশিক ঝিনাইদহ শহরে একটি দোকানে দরজির কাজ করেন।