ঝিনাইদহকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ॥ প্রথম সেমিফাইনালে ম্যাচসেরা মনডে

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহ জেলা দলকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়েছে স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গা। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলা দল। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবলের সেমিফাইনাল খেলা দেখার জন্য গতকালও দর্শকের ¯্রােত নামে। তবে পূর্ব থেকেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বাড়তি প্রস্তুতি থাকায় সব কিছু ঠিকঠাকভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। ডিশ ক্যাবলে খেলা সম্প্রচারের কারণে মাঠের দর্শক ছিলো মূলত নিয়ন্ত্রণের ভেতরে। আয়োজকদের এখন ভাবতে হচ্ছে মূলত টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বের খেলা নিয়ে।
গতকাল চুয়াডাঙ্গা বনাম ঝিনাইদহের খেলার প্রথমার্ধের ৬ মিনিটে ঝিনাইদহ জেলা দলের বিদেশি খেলোয়াড় পেট্রিক গোল করে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন। খেলার ১২ মিনিটে ঝিনাইদহ জেলা দলের গোল এরিয়ায় চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের সোহেলকে ফাউল করলে রেফারি শেখ কামাল আহম্মেদ পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে চুয়াডাঙ্গা দলের বিদেশি খেলোয়াড় ওয়ালসন গোল করে খেলায় সমতা ফেরান। যদিও ঝিনাইদহ জেলা দলের গোল এরিয়ায় রেফারির ফাউল ধরাকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহ জেলা দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা খেলার অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি তারা মাঠ থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া করেন। প্রায় ২০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে।
রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা দলের অসন্তোষ প্রকাশের ধরণ ও তাদের মাঠ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা দেখে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এগিয়ে যান। তিনি তাদের সাথে কথা বলে পুনরায় খেলায় ফেরান। উভয়পক্ষের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে খেলা জমে উঠতে থাকে। কিন্তু প্রথমার্ধের খেলার ২৮ মিনিটে ঝিনাইদহ জেলা দলের বিদেশি খেলোয়াড় মরু মোহাম্মদ চুয়াডাঙ্গা দলের বিপ্পাকে ঘুষি মেরে মাঠিতে ফেলে দিলে খেলা আবারও থেমে যায়। খেলায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড পান ঝিনাইদহ জেলা দলের মরু মোহাম্মদ। এরপর আবারও খেলা বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। দু পক্ষের মধ্যস্ততায় মরু মোহাম্মদ বাইরে এলে পুনরায় খেলা শুরু হয়। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ গোলে সমতা নিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধের ২২ মিনিটে অর্থাৎ খেলার ৬৭ মিনিটে ঝিনাইদহ গোল এরিয়ায় আবারও ঝিনাইদহ জেলা দলের ডিফেন্ডার আমানের হ্যান্ডবল হলে রেফারি পেনাল্টির নির্ধেশ দেন। সে পেনাল্টি থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের অপর বিদেশি খেলোয়াড় কিংস গোল করে ২-১ গোলে ব্যবধান বাড়ান। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা জেলা দল ২-১ গোলে ঝিনাইদহ জেলা দলকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উন্নীত হয়। খেলায় বিচারকদের বিচারে ম্যাচসেরা হন চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের বিদেশি খেলোয়াড় মনডে। সেরা খেলোয়াড় বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফকরুল ইসলাম, কৃতী ফুটবলার মাহমুদল হক লিটন ও গিয়াস উদ্দীন পিনা।
খেলা শেষে সেরা খেলোয়াড়ের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জিয়াউদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক কৃতী ফুটবলার কায়ছার হামিদ, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল তরিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ, সমাজসেবক মার্ভেলাস কোম্পানির স্বত্বাধিকারী আব্দুল লতিফ খান যুবরাজ প্রমুখ।
আজ একই মাঠে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে জয়পুরহাটের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে সিরাজগঞ্জ জেলা দল। গতকালের খেলাটি পরিচালনা করেন শেখ কামাল আহম্মেদ, পার্থ প্রতীম ম-ল, সাইফুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম। খেলার ধারাভাষ্য প্রদান করেন সাংবাদিক ইসলাম রকিব, এবি সিদ্দিক ও শামীম খান। জেলা দল ফাইনালে উন্নীত হওয়ায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, জেলা দলের কোচ সরোয়ার জোয়ার্দ্দার মধু ও ম্যানেজার মাহবুল ইসলাম সেলিম খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এ এক অন্যরকম বনভোজন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট একের পর এক ইতিহাস গড়ে চলেছে। খেলা দেখার জন্য যে আগে উপস্থিতি হয়ে বনভোজনও করতে হয়, তাও দেখিয়ে দিয়েছেন কিছু দর্শক। গতকাল চুয়াডাঙ্গা বনাম ঝিনাইদহ দলের মধ্যে সেমিফাইনাল খেলা দেখার জন্য কিছু দর্শকের বনভোজের দৃশ্য দেখে অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, সত্যিই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ সফল।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট ঘিরে দর্শকদের যেন উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। এ সবের সাথে যোগ হয়েছে মজার মজার অভিজ্ঞতা। যেমন টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে বাড়তি নিরাপত্তা ও দর্শক ধারণ ক্ষমতার বাইরে স্টেডিয়ামে দর্শক না প্রবেশ করার জন্য জেলা প্রশাসন কর্তৃক কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। সে নির্দেশনার মধ্যে ছিলো ২টা ৩০ মিনিটের আগে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রবেশ করতে হবে। এ খবর জেনে দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রাম থেকে কলম আলীর নেতৃত্বে এক আলমসাধু ভর্তি দর্শক সকাল ১০টায় চলে যান স্টেডিয়াম এলাকায়। স্টেডিয়াম সংলগ্ন প্রধান সড়কের বিপরীতে অবস্থিত গণসাহায্য সংস্থার অফিস চত্বরে ডেসকি হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসনসহ প্রয়োজনীয় জিনিস মাছ-মাংস ও চাল নিয়ে কলমবাহিনী রীতিমতো রান্না-বাড়া শুরু করে দেন। দুপুর ১২টা নাগাদ তাদের রান্না-বাড়া শেষ। সকলে একসাথে থালায় ভাত-তরকারি সাজিয়ে খাওয়া শুরু করে দেন। টিমলিডার কলম আলী ও তার দলের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য মঙ্গল মিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হয় কেন এখানে আগে থেকে এসে রান্না-বাড়া করে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে। তারা বলেন, আমরা ফুটবল খেলা উপভোগের আনন্দটা আরও বেশি বেশি পাওয়ার জন্য এখানে রান্না শেষে খাওয়া-দাওয়া করে সবার আগেই স্টেডিয়ামের ভালো জায়গায় আসনটি নিতে চাই। আর আনন্দের সাথে খেলা উপভোগ করে বাড়িতে ফিরতে চাই।

টিকেট পেতে মরিয়াদের গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা
চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে। অনেকে টিকিট চড়া দামে কিনে খেলা দেখেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ফুটবলপ্রেমীরা অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষ টিকেটের পুরো বই ধরে কালোবাজারি কাছে বিক্রি করেছেন। যার কারণে ৩০ টাকা দামে টিকিট কিনতে হয়েছে ৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত।
সরোজগঞ্জ-খাসকররা এলাকা থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা জানান, তারা ৫০-৬০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছেন। ভালাইপুর-আসমানখালী এলাকার দর্শকরা জানান, তারা ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত টিকেট কিনেছেন। অপরদিকে দর্শনা-জীবননগর এলাকার দর্শকরা জানান, তারা ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে টিকেন কিনেছেন। এছাড়া স্টেডিয়াম এলাকায় প্রচার গাড়িতে ৩০ টাকা দামের টিকিট ৫০-৬০ দামে টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে।