জুয়া খেলায় বাধা দেয়ায় পিতাকে ঘুষি মেরে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করেছে কুলাঙ্গার ছেলে

চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ পিন্টুর দোকানে দিন-রাত জুয়ার আখড়া : টাকা হেরে গরু বিক্রিতে স্ত্রীর বাধা

 

স্টাফ রিপোর্টার: জুয়ো খেলায় বাধা দেয়ায় পিতা ফকির চাঁদকে ঘুষি ও ধাক্কা মেরে হত্যা করেছে কুলাঙ্গারপুত্র আব্দুস সালাম। গতরাত পৌনে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গার শঙ্করচন্দ্র এশিয়াপাড়ার পিন্টুর দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সেখানেই চলছিলো তাস খেলার আড়ালে জুয়ো।

জুয়ো খেলায় টাকা হেরে আব্দুস সালাম গতকালই গরু বিক্রির জন্য খদ্দের ডাকে বাড়ি। আপত্তি জানান সালামের স্ত্রী ফুলি বেগম। রাতে শ্বশুর ভ্যানচালক ফকির চাঁদ (৬৫) বাড়ি ফিরলে ফুলি বিষয়টি জানান। জুয়ো খেলায় টাকা হেরে গরু বিক্রির জন্য খদ্দের ডাকার কথা শুনে ফকির চাঁদা ক্ষুব্ধ হন। তিনি ছেলেকে খুঁজতে বাড়ি থেকে বের হন। বাড়ির ৫শ গজ দূরে পিন্টুর দোকানের সামনে বসে আব্দুস সালামসহ কয়েকজন তাস খেলছে দেখে ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে যায়। ছেলেকে ডাকেন। ছেলে না উঠলে ফকির চাঁদা ছুটে গিয়ে ছেলেকে থাপ্পড় মারেন। ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে ঘুষি মারার পাশাপাশি ধাক্কা দেয়। ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন ফকির চাঁদ। তিনি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। আবারও পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের উদ্দেশে নেয়া হয়। পথিমধ্যে মারা যান তিনি। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। লাশ দ্রুত বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া হয়।

অপরদিকে খবর পেয়ে আব্দুস সালামসহ দোকানি পিন্টু আত্মগোপন করে। পরিবারের সদস্যরা অবশ্য হত্যার বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করতে থাকেন। এরই মাঝে খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান মুনসী দ্রুত সরোজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সেকেন্দারকে ঘটনাস্থলে পৌঁছুনোর নির্দেশ দেন। লাশ উদ্ধার করে। আজ শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। অপরদিকে কুলাঙ্গার ছেলে আব্দুস সালামকে ধরতে গতরাতেই পুলিশি অভিযান চালানো হয়।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই পিন্টুর বাড়ি সংলগ্ন দোকানে তাস খেলার আড়ালে জুয়ো খেলা হয়। জুয়োর আখড়ায় গিয়ে অনেকেই টাকা হারিয়ে পথে বসেছে। আব্দুস সালাম ঈদের মধ্যে দিন রাত জুয়ো খেলা করে। সে টাকা হারে। এ কারণেই বাড়ির দুটি গরুর মধ্যে একটি গরু বিক্রির জন্য শুক্রবার দুপুরে খদ্দের ডাকে। স্ত্রী ফুলি বেগম এখনই গরু বিক্রি করতে বারণ করে বলেন, আর ক’দিন পরই কোরবানি। কোরবানির হাটে বিক্রি করলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে। ওই টাকা দিয়ে তখন কিছু একটা করলেই হবে। এ কথায় রাজি না হয়ে দিনমজুর ছালাম গরু বিক্রির জন্য নতুন খদ্দের খুঁজে গরু বিক্রি করার বিষয়ে অটল থাকে। বিকেল থেকেই সে জুয়োর আখড়ায় গিয়ে খেলা নিয়ে মেতে থাকে। রাতে ভ্যানচালক আব্দুস সালামের পিতা ফকির চাঁদ বাড়ি ফিরলে পুত্রবধূ ফুলি গরু বিক্রির কথা জানালে তিনি ছেলের ওপর ক্ষুব্ধ হন। ছেলেকে জুয়োর আখড়া থেকে বাড়ি ফেরাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারাতে হলো তাকে।

বৃদ্ধ ফকির চাঁদ ভ্যানচালক ছিলেন। তিনি মৃত সৈয়দ আলী মণ্ডলের ছেলে। ফকির চাঁদের তিন মেয়ে দু ছেলের মধ্যে আব্দুস সালাম বড়। সে দিনমজুর। জুয়োর আখড়ায় জমে সে হয়ে উঠেছে কুলাঙ্গার। শেষ পর্যন্ত তার হাতেই মরতে হলো পিতাকে।