জুমার নামাজে লাখো মুসল্লি

স্টাফ রিপোর্টার: ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশের ভেতর দিয়ে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে। শুক্রবার বাদ ফজর তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি পাকিস্তানের হযরত মাওলানা এহসান ইসমাইল হোসেনের বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এর আগে বৃহস্পতিবার আসরের পর থেকেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে পাকিস্তানের হযরত মাওলানা মো. এহসানের আম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে বৃহত্তম জুমার নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। অন্যদিকে ১৬ জানুয়ারি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে শেষ হবে ১৮ জানুয়ারি।

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর ইজতেমাস্থল ও আশপাশের এলাকা মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে। ইজতেমাস্থলের চারদিকে যতোদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। শিল্পনগরী টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে এখনও ইজতেমাস্থলে আসছেন। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে পুরো ময়দানকে ৪০টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে দেশের ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। প্রায় ৫ হাজার বিদেশি মুসল্লিও অংশ নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার আসরের পর থেকেই পাকিস্তানের হযরত মাওলানা মো. এহসানের আম বয়ানের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমার মূল কাজের প্রথম পর্ব শুরু হয়। ভারতের মাওলানা আহম্মদ লাট ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে ইমান, আমল ও আখলাকের প্রাক-বয়ান করেন। বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. আবদুল মতিন। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায় এ বয়ান তরজমা করা হচ্ছে।

শুক্রবার বাদ ফজর তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি পাকিস্তানের হযরত মাওলানা এহসান মূল মঞ্চ থেকে উর্দু ভাষায় বয়ান করেন। ওই বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের তাবলিগ মুরব্বি মাওলানা আবদুল মতিন। জুমার নামাজে অংশ নিতে সকাল থেকে টঙ্গী ও এর আশপাশের লোকজন হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মুসল্লিদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তম জুমার নামাজ। আয়োজকদের ধারণা, ১০ লক্ষাধিক মুসল্লি শুক্রবার জুমার নামাজে অংশ নেন। জুমার নামাজের আগে বয়ান করেন বাংলাদেশের তাবলিগ মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন। বেলা পৌনে ২টায় জুমার নামাজ আদায় করা হয়।

ইজতেমা মাঠ ছাপিয়ে জুমার নামাজে মুসল্লিরা: বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী ছাড়াও বৃহত্তম জুমার নামাজে অংশ নিতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি শুক্রবার ছুটে আসেন টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে। ইজতেমার মাঠ উপচে জামাত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশ ঘেঁষে ইজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায়ও জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মূল প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা রাস্তায় ধুলো-বালির মধ্যে, মহাসড়কে এবং আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন ও হোগলা পাটি বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন। দুপুর পৌনে ২টায় অনুষ্ঠিত বৃহত্তম এ জুমার নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ জুবায়ের। এবার বিশ্ব ইজতেমার মূল মঞ্চের বাইরে তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে জুমার নামাজের ইমামতি করা হয়। বাদ ফজর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ইমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে বয়ান করেন।

প্রথম দিনে যারা বয়ান করেন: প্রথম দফার প্রথম দিনে বাদ ফজর পাকিস্তানের হযরত মাওলানা এহসান, বাদ জুমা ভারতের মাওলানা শওকত আলী, বাদ আসর বাংলাদেশের ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ যুবায়ের ও মাগরিবের নামাজের পর থেকে বয়ান করবেন দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ।

বয়ানে যা বলা হয়: বয়ানে বলা হয় গরিরেব জন্য ঈদের নামাজের পর অতি উত্তম ইবাদত হলো শুক্রবারের জুমার নামাজ। এ দিন আল্লাহর কাছে যে যা চাইবেন, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। এ নামাজ আদায় করার তৌফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন। জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে ওজু-গোসল করে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার আমলনামায় নেকি লেখা শুরু হয়ে যায়। আমরা যা করব আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যই করবো।

জুমার বয়ানে মাওলানা শওকত আলী বলেন, একজন ইমানদার বান্দাও পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে এবং আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ পৃথিবীকে ধ্বংস করবেন না। পৃথিবীতে যেদিন থেকে ইমানদারি চলে যাবে সেদিন থেকে পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর নানা স্তর ধ্বংস করা হবে। গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ এমনি করে সবকিছু ধ্বংস করে দেবেন। একমাত্র আল্লাহই পৃথিবীতে থাকবেন। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে ইমানের মূল্য অনেক বেশি। ইমানকে মজবুত করতে হলে আমাদের দাওয়াতি কাজে সময় লাগাতে হবে।

বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ: বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাসের ১৫-২০ জন শূরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হয়। বিদেশি মেহমানরা মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।

ইজতেমায় মুসল্লির মৃত্যু: বিশ্ব ইজতেমায় এসে গত বৃহস্পতিবার রাতে আবদুর রহিম নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার বাদ জুমা তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।